উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশনের বাইরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বহুতল ভবন নির্মাণে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বাধীন ৯ সদস্যের বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন (বিসি) কমিটির কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতাবহির্ভূত এলাকায় ৭ তলা বা ৭৫ ফুট বা ৫০০ বর্গমিটারের অধিক আয়তনের ভবন নির্মাণ করার ক্ষেত্রে এই কমিটি ভবনের নকশার অনুমোদন দেবে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বিল্ডিং কোডের আলোকে এই কমিটি গঠনের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে। একই সঙ্গে কমিটিতে প্রতিনিধি মনোনয়নের অনুমতি চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কাছে সম্প্রতি চিঠি পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলোর সম্মতি পাওয়া গেলে শিগগিরই বিসি কমিটি গঠনসংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা হবে বলে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
৯ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটিতে থাকবেন পুলিশ সুপার, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী, স্থাপত্য অধিদফতর, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা পৌরসভার স্থপতি অথবা পরিকল্পনাবিদ প্রতিনিধি, নগর উন্নয়ন অধিদফতর অথবা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জেলা ও উপজেলা পরিষদ বা পৌরসভার প্রতিনিধি (নগর পরিকল্পনাবিদ)। গণপূর্ত অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী থাকবেন কমিটির সদস্য সচিব। প্রয়োজন হলে পরিবেশ অধিদফতরের প্রতিনিধিকে কমিটিতে রাখা যাবে।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব বলেন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এলাকার বাইরে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন (বিসি) কমিটির অনুমোদন নেওয়ার কথা বলা রয়েছে। তবে কমিটির ফরমেট কী হবে তা পরিষ্কার করে বলা নেই। এ কারণে সম্প্রতি গণপূর্ত সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভার সিদ্ধান্তের আলোকে জেলা প্রশাসককে সভাপতি করে ৯ সদস্যের কমিটি গঠনের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এই কমিটি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতাবহির্ভূত এলাকায় ৭ তলা বা ৭৫ ফুট বা ৫০০ বর্গমিটারের অধিক আয়তনের ভবনের ভার বহনের ক্ষমতা যাচাইসহ স্থাপত্য, কাঠামোগত, প্লাম্বিং, বৈদ্যুতিক ও মেকানিক্যাল নকশার অনুমোদন দেবে।
কর্মকর্তারা জানান, ভবন নির্মাণের নকশা কোন মন্ত্রণালয় বা সংস্থা অনুমোদন করবে তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে কর্তৃপক্ষ নির্ধারণে সমস্যা রয়েছে। এ কারণে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে কোনো অনুমোদন ছাড়াই নিজেদের মতো করে ভবন নির্মাণ হচ্ছে। এতে দুর্বল কাঠামো ও মানহীনভাবে যত্রতত্র ভবন নির্মাণ হওয়ায় ঝুঁকি বাড়ছে। কৃষিজমি ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। এ কারণে টেকসই ও বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সারা দেশে বিক্ষিপ্তভাবে ভবন নির্মাণ বন্ধ করে পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর প্রতিনিধি মনোনয়নের অনুমতি পাওয়ার পর শিগগিরই জেলা পর্যায়ের বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন বিসি কমিটি কার্যকর করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। এই কমিটি শুধু উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরের ভবনের নকশা অনুমোদন দেবে। জানা গেছে এসপিকে বিসি কমিটিতে রাখার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার আমার গ্রাম আমার শহর প্রকল্পের আওতায় দেশের গ্রাম এলাকাগুলো পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু গ্রাম এলাকার ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ভবনের মান ঠিকভাবে তদারকির কোনো ব্যবস্থা নেই। বিসি কমিটি গঠন করা হলে জেলার যেকোনো গ্রাম বা এলাকায় ভবন নির্মাণ করার আগে নকশার অনুমোদন নিতে হবে। তখন কেউ চাইলেই যত্রতত্রভাবে ভবন নির্মাণ করতে পারবে না।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন জানান, নতুন বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে বিসি কমিটি কার্যকর করার মাধ্যমে সারা দেশে পরিকল্পিত উন্নয়নকাজ বেগবান করতে চান তারা। বিসি কমিটি ভবন নির্মাণকাজের অনুমোদন ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এটা বাস্তবায়ন করা গেলে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশনের বাইরের এলাকায় মানহীনভাবে যত্রতত্র ভবন নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।