মঙ্গলবার , জানুয়ারি ১৪ ২০২৫
নীড় পাতা / উত্তরবঙ্গ / নওগাঁয় দ্বিতীয় দফা বন্যা,পানিবন্দী লক্ষাধিক মানুষ

নওগাঁয় দ্বিতীয় দফা বন্যা,পানিবন্দী লক্ষাধিক মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ:
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে নওগাঁর আত্রাই নদের পানি বেড়ে দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে পড়েছে জেলার মান্দা ও আত্রাই উপজেলার মানুষ। গত পাঁচ দিন ধরে পানি বাড়তে থাকায় আত্রাই নদের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের আগের ভাঙন দিয়ে পানি ঢুকে পরেছে। এতে শতশত বিঘার ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে মান্দা ও আত্রাই উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ উজ্জামান খান বলেন, জুলাইয়ের মাঝামাঝি ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে আত্রাই নদ ও ছোট যমুনা নদীর পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। ওই সময় পানির ঢেউয়ের তোড়ে মান্দা ও আত্রাই উপজেলায় বেশ কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙে ৭০-৮০টি গ্রামের প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে পানি কমতে থাকে। আগের ভাঙনস্থানগুলো কিছু মেরামতও করা হয়। তবে গত পাঁচ দিন যাবত আত্রাই ও ছোট যমুনার পানি আবারও বাড়তে থাকে। মেরামত করা সম্ভব হয়নি এমন কয়েকটি ভাঙনস্থান দিয়ে পানি ঢুকে ফের বন্যার কবলে পড়েছে মান্দা ও আত্রাই উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ।

সোমবার(২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় আত্রাই নদের পানি ধামইরহাটের শিমুলতলী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে নওগাঁ শহরের লিটন ব্রিজ পয়েন্টে ছোট যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী চার-পাঁচ দিন পানির বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মান্দা উপজেলার কালিকাপুর, পার-নুরুল্যাবাদ, জোকাহাট ও চকরামপুর এবং আত্রাই উপজেলার যাত্রামূল এলাকায় আত্রাই নদের মূল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের আগের ভাঙনস্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এতে মান্দার নুরুল্যাবাদ, কশব ও বিষ্ণুপুর এবং আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ ও পাচুপুর ইউনিয়নের অন্তত ৬০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মান্দার বন্যাকবলিত এলাকা কালিকাপুর, পার-নুরুল্যাবাদ, পার শিমুলিয়া, নহলা কালুপাড়া, বিষ্ণুপুর, হুলিবাড়ী, চক-রামপুর, শহরবাড়ীসহ ১০-১২টি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে, অনেক মানুষের বসতবাড়ী, রান্নাঘর ও উঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক মানুষ রাস্তা ও বাঁধের উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।

বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জুলাই মাসের বন্যায় ইউনিয়নের ২১টি গ্রামের সব গ্রামই তলিয়ে গিয়েছিল। এবারও একই পরিস্থিতি। দুই দফা বন্যায় এলাকার সব শ্রেণি–পেশার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। প্রথম দফা বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর আগস্টের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহের দিকে মাঠে আমন ধানের চারা লাগিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এবারের বন্যায় তাঁদের সেই স্বপ্নও ধূলিসাৎ হয়ে গেল। দুই দফা বন্যায় এই এলাকার কৃষকের মাজা ভেঙে গেল।

বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চকরামপুর এলাকায় মান্দা-আত্রাই বাঁধের সড়কে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বাঁশ, খড় ও পলিথিন দিয়ে তাঁবু করে আশ্রয় নিয়েছে ২০-২৫টি পরিবার। বাঁধের ওপরে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন চকরামপুর গ্রামের বাসিন্দা লবির উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘দুই মাস আগের বানেত মাটির বাড়িটা ভ্যাঙে যায়। ওই সময় ছল-পল নিয়ে রাস্তাত আশ্রয় লিছিলাম। পানি ন্যামে যাওয়ার পর মানুষের কাছ থেকে বাঁশ-কাঠ চ্যায়ে-চিন্তে নিয়ে ঘর তুলছি। এবারের বানেত সেই ঘরেও পানি ঢুকে গ্যাছে। পানির তোড়ত নতুন ঘরটাও ভ্যাঙে য্যাবে য্যাবে অবস্থা।’দুই দফা বন্যার কারণে এলাকার নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। প্রথম দফা বন্যায় নওগাঁর নিম্নাঞ্চলগুলোতে পাট ও সবজি খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এবারের বন্যায় তলিয়ে গেছে আমন খেত।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বন্যায় নওগাঁর মান্দা, আত্রাই, রাণীনগর ও সদর উপজেলার মধ্যে ৩ হাজার ২১৪ হেক্টর আমন ধানের খেত নিমজ্জিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আত্রাই উপজেলায়। এই উপজেলায় ১ হাজার ৫৫ হেক্টর আমন খেত নিমজ্জিত হয়েছে। এর পরই মান্দা উপজেলায় ৭৭৫ হেক্টর আমনের খেত তলিয়ে গেছে।

বাঁধ সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে বাপাউবো নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ উজ্জামান খান বলেন, জুলাই মাসে পানির তোড়ে মান্দা ও আত্রাই উপজেলার পাঁচটি স্থানে মূল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও ১০-১২টি জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। পানি নেমে যাওয়ার পর ভাঙা বাঁধগুলো মেরামতের জন্য ঠিকাদার নির্বাচন করা হয়। বেশির ভাগ ভাঙনস্থানে ইতিমধ্যে বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। ভাঙন বেশি হওয়ায় এবং যথেষ্ট সময় না পাওয়ার কারণে মান্দার পার-নুরুল্যাবাদ, চকরামপুর ও জোকাহাট এবং আত্রাই উপজেলার যাত্রামূল এলাকায় আত্রাই মূল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সংস্কারকাজ শেষ করা যায়নি।

আরিফ উজ্জামান খান দাবি করেন, বাঁধ সংস্কারের কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো গাফিলতি কিংবা গড়িমসি ছিল না। পানি নেমে গেলে সংস্কারকাজ আবারও শুরু হবে।

আরও দেখুন

তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষ্যে ফুটবল টুর্নামেন্টে বড়াইগ্রাম পৌরসভা চ্যাম্পিয়ন

নিজস্ব প্রতিবেদক বড়াইগ্রাম ,,,,,,,,,,,,,নাটোরের বড়াইগ্রামে তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষ্যে আয়োজিত ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলায় বনপাড়া পৌর …