নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘ছাত্র অধিকার পরিষদের কাছে মেয়েটা অনেক আগে থেকে বিচার চেয়ে আসছে। তার সব ঘটনা খুলে বলেছে। ন্যায়বিচারের দাবি করেছে। তখন তাকে (বাদী) বারবার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সমাধান হয়নি।’
নুরুল হক নুরের সাবেক এক সহকর্মী বলেছেন, সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের ছয় নেতার বিরুদ্ধে এক তরুণী ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহযোগিতার যে অভিযোগ এনেছেন তার সত্যতা রয়েছে। সংগঠনের ভেতরে বিষয়টি নিয়ে অনেক দিন ধরেই আলোচনা ছিল। সংগঠনের ৮০ভাগ সহযোদ্ধা এই বিষয়ে জানেন এবং সমাধানের প্রক্রিয়ায় অনেকেই অংশগ্রহণ করেন।
সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের দুই যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর ও রাশেদ খাঁনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে পাল্টা কমিটির ঘোষণা দেয়া এপি এম সুহেল এ কথা বলেছেন।
সুহেল বলেন, ‘সংগঠনের অভ্যন্তরে কিছু সত্য রয়েছে যা অনেকেই জানে, কিন্তু প্রকাশ করে না। এর উদাহরণ যদি দেই, তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষার্থী ধর্ষণ ও সহযোগিতার মামলা করেছে, তা সত্য জেনেও অনেকে প্রকাশ করে না।’
‘এমনকি এই ঘটনাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা দাবি করে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে তারা।’
এই ঘটনাটি নিয়ে সংগঠনে অনেক আলোচনা হয়েছে বলেও জানান সুহেল। নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘মামুনকে (ছাত্র অধিকার পরিষদের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক হাসান আল মামুন) চাপ দেয়া হলে সে তো নিজেই মেয়েটিকে বলেছে আদালতে যেতে। ‘
‘তারা (মামুন ও তার সহযোগীরা) ভেবেছিল মেয়েটি একটি মৌলভী পরিবার থেকে এসেছে। সে এটা নিয়ে হৈ চৈ করবে না।’
‘ছাত্র অধিকার পরিষদের কাছে মেয়েটা অনেক আগে থেকে বিচার চেয়ে আসছে। তার সব ঘটনা খুলে বলেছে। ন্যায়বিচারের দাবি করেছে। তখন তাকে (বাদী) বারবার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সমাধান হয়নি।’
‘মামুনের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক ছিল, এটা আমরা সবাই জানতাম। তাকে খাবার এনে খাওয়াত।’
এ নিয়ে কথা তোলার পর নুরের মামুন-নুরের সহযোগীদের আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন সোহেল। বলেন, ‘আমরা যারা সমাধান করতে চেয়েছিলাম, উল্টো আমাদেরকে বলা হয়েছে আমরা ষড়যন্ত্রকারী।’
নুরের কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান নিউজবাংলাকে বলেছেন, সুহেলকে তারা গত মে মাসে বহিষ্কার করেছেন। কাজেই তার বক্তব্য ধর্তব্যের মধ্যে আসে না।
সুহেল বলেছেন, তিনি প্রতিবাদ করায় নুরের সিন্ডিকেট তাকে বহিষ্কার করেছে। এ নিয়ে পরিষদে প্রতিবাদও হয়েছে।
গত ২০ সেপ্টেম্বর সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বিভাগের এক ছাত্রী। এতে নুরসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে আনা হয় সহযোগিতার অভিযোগ।
ওই ছাত্রীর অভিযোগ, মামুন তাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ধর্ষণ করেছেন। নুর এই ঘটনা মীমাংসার আশ্বাস দিয়ে পরে হুমকি দিয়েছেন। বলেছেন, চুপ না হয়ে গেলে মেয়েটিকে ‘পতিতা’ বলে প্রচার চালাবেন।
দুই দিন পর একই মামলার বাদী আসামিদের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেন। এতে প্রধান আসামি করা হয় এখানে অভিযোগ করা হয়, ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা নাজমুল হাসান সোহাগ তাকে হাসান আল মামুনের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেয়ার কথা বলে ধর্ষণ করেছেন। এখানে নুরদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগ।
পরদিন সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগে একই আসামিদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করেন বাদী।
আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে গত ৮ অক্টোবর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য পাদদেশে অনশন করছেন বাদী। চতুর্থ দিনের মাথায় ১১ অক্টোবর দুই আসামি।
সাইফুল ইসলাম ও নাজমুল হুদাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
নুরের অভিযোগ, তিনি সরকারবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন বলে প্রশাসন ওই তরুণীকে দিয়ে এই মামলা করেছে।
এর মধ্যে গেত রোববার ফেসবুক লাইভে এসে বাদীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর নানা বক্তব্য দিয়ে নতুন সমালোচিত হন নুর।
বাদীকে ‘দুশ্চরিত্রহীনা’ বলে ডাকসুর সাবেক ভিপি দাবি করেন, ধর্ষণ হয়, যা কিছু হয়েছে, সবই হয়েছে স্বেচ্ছায়।
এই বক্তব্য দেয়ার পর নুরের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল আইনে আরও একটি মামলা করেছেন বাদী। ট্রাইব্যুনাল পিবিআইকে ২৯ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে।
নুরের এই বক্তব্যেরও তীব্র সমালোচনা করেছেন তার সংগঠন থেকে বেরিয়ে এসে নতুন কমিটির ঘোষণা দেয়া এ টি এম সোহেল।
সোহেল বলেন, ‘তারা (নুর ও তার সহযোগী) তাদের নীতি থেকে এতটাই দূরে সরে এসেছে যে, একজন নারীকে সামাজিক মাধ্যমে হেয় করার মত জঘন্যতম কাজ তারা করেছে।’
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্তে সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ একটি কমিটি করেছিল। এই কমিটির প্রধান বিন ইয়ামিন মোল্লা নিউজবাংলাকে বলেছেন, তারা ছবি বা ভিডিও পাননি। কেবল মুখের অভিযোগে ধর্ষণের মতো সংবেদনশীল একটি ঘটনা ঘটেছে বলে ধরে নিতে পারেন না।
বাদী অবশ্য এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা তদন্ত করলে তো এমনই হবে।