নিউজ ডেস্ক:
খুব তাড়াতাড়ি স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষকদের টিকা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যারা কর্মরত তাদের পরিবারের সদস্যদেরও যেন টিকা দেওয়া হয় সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপনের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনের শুরুতেই শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।
জাতীয় সংসদে পর পর দুই দিন সংসদ সদস্যের শোক প্রস্তাবে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সংসদ সদস্যদের মৃত্যুর শোক নিয়েই যেন চলতে হচ্ছে। গত ১ সেপ্টেম্বর সংসদের এই অধিবেশন শুরুর দিন সাবেক ডেপুটি স্পিকার ও কুমিল্লা-৭ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফের শোক প্রস্তাব উপস্থাপন হয়। গত ৩০ জুলাই আলী আশরাফ মারা যান। গতকাল ভোররাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তুরস্কের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের এমপি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসিবুর রহমান স্বপন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কষ্টের ভিতর দিয়ে আমাদের সবাইকে যেতে হচ্ছে। এই পার্লামেন্টে আসার পর আমরা অনেককে হারিয়েছি। গতকালই (১ সেপ্টেম্বর) এই অধিবেশনে একজনের শোক প্রস্তাব নিতে না নিতেই আজ খবর পেলাম হাসিবুর রহমান স্বপন আর নেই। তার কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের পর আমি তাকে বলেছিলাম সাবধানে থাকতে। কিন্তু তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনবান্ধব। তিনি যদি কিডনি ডায়ালাইসিস করতেন, তাহলে অনেক দিন বেঁচে থাকতেন। সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুরে আমরা তার সহযোগিতায় অনেক কাজ করেছি। গতকালই তার বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি, আজই চলে গেলেন! এ সময় প্রধানমন্ত্রী অসুস্থ ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার জন্য দোয়া চেয়ে বলেন, আমাদের ডেপুটি স্পিকার অসুস্থ। তিনি বিদেশে চিকিৎসায় আছেন। আমরা দোয়া করব তিনি যেন সুস্থ হয়ে ফিরে আসতে পারেন। সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপনের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাবে অংশ নেন সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ, হুইপ আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, শামসুল হক টুকু এবং অধ্যাপক ডা. আবদুল আজিজ, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা এবং বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ। পরে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে স্কুলের ছেলে-মেয়েদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য ফাইজারের কিছু টিকা ইতিমধ্যে এসে পৌঁছেছে এবং আরও আসবে। মডার্নার টিকার জন্যও চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে ছয় কোটি টিকার টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, শিক্ষকদের পাশাপাশি যারা ওইসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তাদেরকে টিকার ব্যবস্থা করেছি। আমরা স্বাস্থ্যকর্মীসহ তাদের বাড়ির কাজের মানুষ, গাড়িচালক ও পরিবারের সদস্য, সবাই যেন টিকা পায় সেই ব্যবস্থাটাও নিচ্ছি। যাতে কোনোমতে এই সংক্রমণটা না হতে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, টিকা দেওয়ার পরও অনেকের করোনা হয়। এ কারণে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। করোনা থেকে ভালো হওয়ার পরও নানা জটিলতা থেকে যায়। যাদের অন্যান্য রোগ আছে, তাদের ক্ষেত্রে করোনা ঝুঁকি বাড়ায়। এ জন্য সবাইকে নিজের ভালো নিজেকে বুঝে চলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার আমরা করে যাচ্ছি। আমি জানি অনেকে অনেক কিছুই বলেন। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা যদি দেখেন, অন্য দেশের সঙ্গে যদি তুলনা করেন, আমাদের এই ঘন বসতিপূর্ণ এলাকা, সেই জায়গায় এটা নিয়ন্ত্রণে আমরা যেভাবে ব্যবস্থা নিয়েছি অনেক উন্নত দেশও কিন্তু নিতে পারেনি, এটা হলো বাস্তবতা। এখানে আমি বলব যার যার নিজেরও সজাগ থাকা, নিজেকে সুরক্ষিত রাখা ও নিজে সাবধানে থাকা উচিত। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার দিকেও সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে। তিনি বলেন, করোনার প্রকোপ এখন কমেছে কিন্তু সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ডেঙ্গুর প্রকোপও বাড়ছে উল্লেখ করে সংসদ নেতা সবাইকে ঘর-বাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই করোনায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মানুষের পাশে থেকে তাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। স্বপনও নিজের শারীরিক অবস্থার কথা চিন্তা না করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যারা জনগণের জন্য কাজ করে তাদের মৃত্যু দেশের জন্য, মানুষের জন্য ক্ষতির। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না কী বলব। একটার পর একটা শোক সংবাদ। শোকের মাস আগস্ট শেষ না হতেই গতকাল সংসদের এই অধিবেশনের প্রথম দিনে শোক প্রস্তাব দিয়ে অধিবেশন শুরু করতে হলো, আজ আবার শোক প্রস্তাব। শোকের ব্যথা যেন যাবে না, একের পর এক শোক নিয়েই যেন চলতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। অনেকে আপনজনের মরদেহ দাফন করেনি। ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা দাফন করেছে। মানুষের ঘরে অক্সিজেন সরবরাহ করা, খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজ তারা করেছে।