নগরবাসীকে যানজট মুক্ত একটি সড়ক উপহার দিতে দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ। ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে প্রকল্পের অগ্রগতি। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বহুল কাঙ্ক্ষিত মেট্রোরেল উন্মুক্ত করা হবে যাত্রীদের জন্য। সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলছে নির্মাণকাজ। এরইমধ্যে উত্তরা থেকে মিরপুর অংশের প্রায় ছয় কিলোমিটারের বেশি অংশের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ অংশের নির্মাণ কাজের প্রায় ৫০ শতাংশ শেষ। আর গোটা প্রকল্পের কাজে অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে মেট্রোরেলের কাজ। ইতোমধ্যে উত্তরা-দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ কিলোমিটারের মধ্যে ছয় কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এমআরটি- ৬ এর সম্পূর্ণ অংশ একত্রে চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আমরা আশা করি আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কোনো অসুবিধা হবে না।
তিনি বলেন, আমাদের অনুমোদিত ডিপিপিতে বলা আছে, ২০১২ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে হবে। প্রায় তিন বছর আগেই এই কাজ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখানে ধীরগতি হওয়ার যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, বাস্তবতার সঙ্গে তার কোনো মিল নেই।
ডিএমটিসিএল সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের জুলাই মাসে এমআরটি-৬ বা
মেট্রোরেল প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড
(ডিএমটিসিএল)। দেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্প হিসেবে উত্তরা থেকে মতিঝিল
পর্যন্ত এই রুটের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ২০.১ কিলোমিটার। আর পুরো প্রকল্পের
কাজটি হচ্ছে আটটি প্যাকেজ ও দুই ধাপে। প্রথম ধাপে উত্তরা থেকে আগারগাঁও
পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার এবং দ্বিতীয় ধাপে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত
৮.৩৭ কিলোমিটার রুট তৈরি করা হবে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি
টাকার মধ্যে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা ঋণ দিচ্ছে ১৬ হাজার ৫৯৪
কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউরোপের তিনটি দেশ থেকে স্লিপার আনা হচ্ছে রেলপথে ব্যবহারের জন্য। ইংল্যান্ড থেকে এরই মধ্যে রেলপথ বসানোর রেলট্র্যাক আনা শেষ হয়েছে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, আগস্ট মাস পর্যন্ত ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি-৬) এর সার্বিক কাজের গড় অগ্রগতি ৩০ শতাংশ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম ধাপের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৪৬ শতাংশ। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপের কাজের অগ্রগতি ২৩ শতাংশ। ইকুইপমেন্ট, মেকানিক্যাল সিস্টেম, রোলিং স্টক ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি ১৯ শতাংশ। আর প্রায় ৫৯ একর জায়গাজুড়ে বানানো হচ্ছে মেট্রোরেলের মূল ডিপো। ট্রেনে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে করা হচ্ছে দুটি পাওয়ার প্ল্যান্টও।
ডিটিএমসিএল সূত্র থেকে থেকে জানা গেছে, মোট আটটি প্যাকেজে বাস্তবায়ন হচ্ছে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ। এর মধ্যে প্রথম প্যাকেজে ডিপো এলাকার ভ‚মি উন্নয়নের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। বিরতিতে ট্রেন রাখার স্থান, ট্রেন মেরামত ও মালামালের গুদাম, প্রধান ওয়ার্কশপসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণ কাজের বাস্তব অগ্রগতি ১৭ শতাংশ।
প্যাকেজ দুইয়ের আওতায় পূর্ত কাজের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে শতকরা ৫২ ভাগ। এই প্যাকেজর আওতায় ৫২ ভাগ অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে এর মধ্যে রিটেইনিং ওয়াল, টেস্ট ট্র্যাক বেড, কোচ আনলোডিং এরিয়া, বগি অ্যাসেম্বল প্ল্যান্ট, ও বগি ডিস অ্যাসেম্বলসহ প্রায় দশটির মতো অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়েছে। এছাড়া এই প্যাকেজ এর আওতায় বাকি অবকাঠামোর বেশিরভাগের কাজেই আছে অগ্রগতি।