গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে এখন পর্যন্ত জায়গা বরাদ্দ পেয়েছে ২৭টি প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একাধিকবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর পরও দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে এই হাইটেক সিটি।
১৯৯৯ সালের ১৩ জুলাই বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের সভায় কালিয়াকৈরে ২৩১ একর জমিতে হাইটেক পার্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। পরে এর আয়তন বাড়িয়ে করা হয় ৩৫৫ একর। এতে উচ্চগতির ইন্টারনেট, সার্বক্ষণিক বিদ্যুত সরবরাহ, যোগাযোগের জন্য শাটল ট্রেন এবং কম দামে জায়গা বরাদ্দ পাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এতে অন্তত ১ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় প্রকল্পটি পিপিপি মডেলে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এই হাইটেক সিটিতে উৎপাদিত পণ্যে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অবকাশ সুবিধা পাবেন উৎপাদকরা। উৎপাদিত সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার পণ্য রফতানিতে উৎপাদকরা ১০ শতাংশ প্রণোদনা পাবেন। ৩৫৫ একর জমির ওপর নির্মিতব্য বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প। এতে রয়েছে ৬টি ব্লক। এরমধ্যে ১ নম্বর ব্লকে রয়েছে ৬৫ একর জায়গা, দুই নম্বর ব্লকে ৬২ একর, তিন নম্বর ব্লকে ৪০, চার নম্বর ব্লকে ৩৬, পাঁচ নম্বর ব্লকে ২৯ এবং ৬ নম্বর ব্লকে ৯৭ একর জমি রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি কর্তৃপক্ষ ৬ নম্বর ব্লকে ২১টি প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি বরাদ্দ দিয়েছে। এরমধ্যে ৪টির বরাদ্দ বাতিল হয়েছে। মোট জায়গার মধ্যে ডেভেলপার ও অবকাঠামো নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সামিট টেকনোপলিস দুই ও পাঁচ নম্বর ব্লক, ফাইবার এ্যাট হোম তিন নম্বর ব্লক উন্নয়নের দায়িত্ব পেয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি এরইমধ্যে ৫টি করে প্রতিষ্ঠানকে জায়গা বরাদ্দ দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জায়গা বরাদ্দ পেয়েছে যেসব প্রতিষ্ঠান:
আগামী ৪০ বছরের জন্য বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে রবি, জেনেক্স, বিজেআইটি
সফটওয়্যার, ফেয়ার ইলেক্ট্রনিকস, কেডিএস গ্রুপ, ইন্টারক্লাউড, বিজনেস
অটোমেশন, নাসডাক টেকনোলজিস, জেআর এন্টারপ্রাইজ, বিজনেস অটোমেশন লিমিটেড,
ডেটা সফট, আমরা হোল্ডিংস, ভেড নেট লিমিটেড, স্পেকট্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং
কনসোর্টিয়াম লিমিটেড, মিডিয়া সফট, ডেটা সিস্টেম লিমিটেড, ইউওয়াই সিস্টেম
লিমিটেড, এসবি টেল এন্টারপ্রাইজ, ইউনিকম বাংলাদেশ ও সিস্টেক ডিজিটাল।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে সফটওয়্যার কোম্পানি ক্যাটাগরিতে দেড় একর জায়গা বরাদ্দ পেয়েছে রবি। মোবাইল অপারেটরটি সেখানে ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। ফেয়ার ইলেক্ট্রনিক্সকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তিন একর জমি। প্রতিষ্ঠানটি ইলেক্ট্রনিক্স, হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার উৎপাদনে বিনিয়োগ করবে ১০ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া বরাদ্দ পাওয়া ৯টি কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছে ২০ দশমিক ৫০ একর জমি। প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ করবে ১৪০ দশমিক ৮১ মিলিয়ন ডলার।
দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বেকারত্ব দূরীকরণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশে ২৮টি হাইটেক পার্ক নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে।
জানা গেছে, রাজশাহীর বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক নির্মাণ কাজ শেষ হলে এখানে ১৪ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ২০২১ সালের মধ্যেই আইটি খাতে কর্মতৎপরতার জন্য বিশ্ব রাজশাহীকে চিনবে নতুন নামে। ভারতের ব্যাঙ্গালুরু, আমেরিকার সানফ্রানসিসকো ও ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন সিটির মতো বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে বিশ্বমানের সফটওয়্যার তৈরি হবে।
হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সূত্রে জানা গেছে, ৩১ দশমিক ৬৩ একর জায়গার উপর ২৮১ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির আদলে তৈরি করা হচ্ছে রাজশাহীর বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কের অবকাঠামো। এখানে গড়ে তোলা হবে ১০ তলা একটি ভবন। এছাড়া ৬২ হাজার বর্গফুট আয়তনের পাঁচতলা বিশিষ্ট একটি আইটি ইনকিউবেটর কাম ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করা হবে। আগামী তিন বছরের মধ্যে এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। উল্লেখ্য, দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ২০২১ সালের মধ্যে সারা দেশের ২৮টি পার্কের কাজ শেষ করতে চায় সরকার। এসব আইটি পার্কে সরাসরি তিন লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। আর পরোক্ষভাবে প্রায় ২০ লাখ মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হবে বলে জানা গেছে।