রবিবার , ডিসেম্বর ২৯ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ নির্দেশনা

দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ নির্দেশনা

নিউজ ডেস্ক:

  • রমজানে চাল আটা ভোজ্যতেল চিনি পেঁয়াজ ডালের সরবরাহ বাড়বে
  • ৩ এপ্রিল থেকে টিসিবির বিশেষ ট্রাক সেল
  • খাদ্য সহায়তায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হবে
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জরুরী বৈঠক

 রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঁচ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অতি প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদফতর ও সংস্থাগুলো কাজ করবে। চাল, আটা, ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ ও ডালের দাম স্থিতিশীল রাখা এবং পর্যাপ্ত সরবরাহ বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সরকারী সংস্থা টিসিবির কার্যক্রম শক্তিশালী করার কথা বলা হয়েছে। এ কারণে রমজান সামনে রেখে সারাদেশে টিসিবির বিশেষ ট্রাকসেল কার্যক্রম শুরু হবে আগামী ৩ এপ্রিল। এর পাশাপাশি এবার রমজানে খাদ্য সহায়তা হিসেবে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এতে স্বল্প আয়ের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তা পাবেন। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে সরকারের পক্ষ থেকে এসব উদ্যোগ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ রবিবার জরুরী বৈঠক ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ থাকবে। গত একমাস ধরে চাল, ভোজ্যতেল, মুরগি, আটা, ছোলা এবং চিনির দাম উর্ধমুখী। গত কয়েকদিন ধরে বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। দেশী পেঁয়াজ এখন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ৫০-৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। নানা উদ্যোগের পরও কমছে না ভোজ্যতেলের দাম। এ অবস্থায় আগামী ১৪-১৫ এপ্রিল থেকে রোজা শুরু হচ্ছে। এর আগে চলতি মাসের শেষের দিকে পালিত হবে পবিত্র শব-ই-বরাত। রোজা ও শব-ই-বরাত সামনে রেখে ইতোমধ্যে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। রোজার সময় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দ্রব্যমূল্য বাড়ার পেছনে সর্বদা অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি থাকে। এবার রমজান শুরুর এক মাস আগেই দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এখনই শক্ত হাতে এসব সিন্ডিকেট ও অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে সামনে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ কারণে রমজানের সময় দ্রব্যমূল্য কিভাবে স্থিতিশীল থাকবে সে বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সম্প্রতি এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। এছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উর্ধতন কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সচিবদের উদ্দেশে বলা হয়- আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে হবে। কোন নিত্যপণ্যের দাম যাতে না বাড়ে সেজন্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে। চাল, ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ, আটা, ডালের দাম স্থিতিশীল রাখা এবং পর্যাপ্ত সরবরাহ বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া মুরগির দাম হঠাৎ করে কেজিপ্রতি ১০০-১৫০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। দ্রুত মুরগি, মাছ, মাংস এবং ডিমের সরবরাহ বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দিকে এখন থেকে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাদের শাস্তি পেতেই হবে। ভোগ্যপণ্য নিয়ে যারা কারসাজির আশ্রয় নেবে তাদের এবার আর ছাড় দেয়া হবে না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সচিব বলেন, আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা, প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সহজ লভ্য করা এবং বিভিন্ন পণ্যের মজুদ কি সেটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সভায় খাদ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ অধিদফতর, খাদ্য অধিদফতর ও বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালকবৃন্দ, চেয়ারম্যান টিসিবিসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত সদস্যগণ নিজ নিজ মন্ত্রণালয়, অধিদফতর ও সংস্থার ব্যবস্থাপনা, মজুদ এবং কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করেন। বৈঠকের পর সংশ্লিষ্ট সচিবদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়-

খাদ্যপণ্যের মজুদ পরিস্থিতি ॥ গত বছর রমজানের পূর্বে খাদ্যশস্যের মজুদ, মূল্য ও গৃহীত উদ্যোগের তুলনামূলক একটি পরিসংখ্যান এবং প্রতিবেদন অতি দ্রুত ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরণ করতে হবে। এটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা সচিব খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং মহাপরিচালক খাদ্য অধিদফতর। এছাড়া মিয়ানমার থেকে দ্রুত চাল জাহাজীকরণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে এবং অন্য কোন উৎস থেকে জিটুজি পদ্ধতিতে খাদ্যশস্য আমদানি ও ক্রয় করা হবে তা প্রেরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

রমজানে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা ॥ আসন্ন রমজানে ত্রাণ কার্যক্রমগুলোর ধারাবাহিকতা পর্যায়ক্রমে চালু রাখতে হবে। আগাম বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের পূর্ব প্রস্তুতি রাখতে হবে। এর বাস্তবায়নকারী সচিব খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং মহাপরিচালক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ অধিদফতর।

রমজানে পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখা ॥ রমজানে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে অতি দ্রুত সভা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এটা কার্যকর করার দায়িত্ব কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালকের।

টিসিবির সার্বিক কার্যক্রম ॥ টিসিবির কার্যক্রম গত বছরের ন্যায় চালু রাখতে হবে। তবে মনিটরিং ও ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত ও জোরদার করতে হবে। সচিব বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং চেয়ারম্যান টিসিবি এটি বাস্তবায়ন করবেন। এছাড়া আগামী ৩ এপ্রিল থেকে সারাদেশে টিসিবির কার্যক্রম শুরু করে নিত্যপণ্য বিক্রি করতে হবে। এছাড়া চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে আসন্ন রমজানের প্রস্তুতিমূলক সভা করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ওই সভার পূর্ব প্রস্তুতির আগে সচিবগণ অধিদফতর ও সংস্থার প্রধানগণ তাদের নিজ নিজ পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরণ করবেন।

জানা গেছে, দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে ভারতের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন উৎস থেকে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম থেকে সরকার দ্রুত জিটুজি পদ্ধতিতে সরাসরি চাল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ইতোমধ্যে সরকারী পর্যায়ে বিভিন্ন থেকে দশ লাখ টন চাল আনার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি বেসরকারী খাত চাল আমদানি করবে। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি সম্প্রতি দ্রুত আমদানির স্বার্থে আইন সংশোধন করে। এছাড়া বিকল্প উৎস থেকেও চাল আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি জানান, চাল সহজলভ্য ও দাম কমাতে ভারতের পাশাপাশি অন্য দেশগুলো থেকেও আমদানি করা হবে। যত দ্রুত চাল আমদানি করা হবেÑ তাতে দাম বাড়ার আর কোন সুযোগ নেই।

জানা গেছে, রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ বাড়ানো, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানি এবং টিসিবির কার্যক্রম শক্তিশালী করা। টিসিবির মাধ্যমে এবার ২৫ হাজার টন ভোজ্যতেল বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি রমজানে ছোলা, চিনি, খেজুর, পেঁয়াজ এবং ডাল বিক্রি করা হবে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য বাড়বে না। সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। তিনি বলেন, দেশের আমদানি ও মজুদ পরিস্থিতি ভাল। এছাড়া টিসিবিও তাদের কার্যক্রম বাড়াচ্ছে। রমজানে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আরও দেখুন

পাখি ও বন্যপ্রাণি শিকারের তথ্য দিলেই উপহার! ১১ টি শালিক অবমুক্ত, পাখি রক্ষায় লিফলেট বিতরণ 

নিজস্ব প্রতিবেদক ,,,,,,,,,,,,,,,,,,চলনবিলে পাখি শিকার রোধ ও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠন …