নিউজ ডেস্ক:
লাল-সবুজ বাতির সাজ। আকাশে একের পর এক আতশবাজির ঝলকানি। সবার মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা। এ যেন ঈদ আনন্দ! এমন উৎসবের কারণ ‘বিদ্যুৎ’। দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে পটুয়াখালীর বিদ্যুৎবিহীন জনপদ রাঙ্গাবালীতে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছেছে। এই খুশিতে আত্মহারা উপজেলাবাসী।
আর এই আনন্দ সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে রবিবার সন্ধ্যা ৭টায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে ঝাড়বাতি দিয়ে আলোকসজ্জা করা হয়। ফুটানো হয় আতশবাজি। এতে উচ্ছ্বসিত উপজেলার মানুষ। আলোর ঝলকানি দেখতে ভিড় জমায় উপজেলায়।
পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের করা এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সংসদ সদস্য মো. মহিব্বুর রহমান মহিব। এ সময় তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনায় প্রধানমন্ত্রীকে এখানকার মানুষের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। এ কৃতিত্ব ১৬ কোটি বাঙালির নেত্রী শেখ হাসিনার। এখানে শতভাগ বিদ্যুতায়ন হলে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আনুষ্ঠানিকভাবে এ সেবার উদ্বোধন করবেন। আজ কেবল পরীক্ষামূলক চালু হল।’
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (গলাচিপা-রাঙ্গাবালী) প্রকৌশলী মাইনউদ্দীন আহম্মেদ বলেন, আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে বিদ্যুতায়নের কাজ শেষ করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
যদি কাজ শেষ হয় তা হলে এরমধ্যে অথবা পরবর্তী যে কোনো সময় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করতে পারেন।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. জহির উদ্দিন আহম্মেদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল আজ তা সত্যি হলো। বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হলো রাঙ্গাবালী। এই বিদ্যুতের কারণে এখানকার মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তথ্যানুযায়ী, প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি উপকেন্দ্র নির্মাণ করে এ উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বাবুুরহাট থেকে তেঁতুলিয়া নদী হয়ে মুজিবনগর দিয়ে চরকাগজল-চরবিশ্বাস অতিক্রম করে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ পৌঁছায় এ দ্বীপ উপজেলায়। এ বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে তেঁতুলিয়া, বুড়াগৌরাঙ্গ ও আগুনমুখা নদীর তলদেশ দিয়ে প্রায় ৯ কিলোমিটার সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ উপকেন্দ্রের মাধ্যমে সাড়ে ২৯ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা যাবে। ইতোমধ্যে ২ হাজার ৯৫০ জন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ ও সুবিধা দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিরাও বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসবে।
বিদ্যুৎ পেয়ে উপজেলার বাহেরচর গ্রামের কবির মুন্সি বলেন, ‘বিদ্যুৎ পাবো তা কখনো ভাবিনি। বিদ্যুৎ পেয়ে আমরা ঈদের মতো আনন্দ পেয়েছি আজ।’ কোড়ালিয়া গ্রামের মোহাম্মাদ চৌকিদার বলেন, ‘সাগর-নদী পেরিয়ে বিদ্যুৎ আসবে কল্পনা করি নাই। আমরা সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।’