নিউজ ডেস্ক:
যমুনা ও পদ্মা নদীর ভাঙন প্রতিরোধসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণে বড় অঙ্কের সহায়তা (ঋণ ও অনুদান) দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং নেদারল্যান্ডস।
‘ফ্লাড অ্যান্ড রিভারব্যাংক ইরোশন রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (প্রজেক্ট-২)’ শীর্ষক এই প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৮১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা, এডিবির ঋণ ১ হাজার ৩৬৪ কোটি ৩৮ লাখ এবং নেদারল্যান্ডস সরকারের অনুদান থেকে ১০৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
পাবনা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল এবং মানিকগঞ্জ জেলার ৯টি উপজেলায় এটি বাস্তবায়িত হবে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটি নিয়ে ২ জুন প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়েছে। সভার কার্যপত্র সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব ও এডিবি উইংয়ের প্রধান ড. পিয়ার মোহাম্মদ যুগান্তরকে বলেন, ঋণের বিষয়ে এডিবির সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এখন নেগোশিয়েশনের প্রক্রিয়া চলছে। এরপর আমরা সারসংক্ষেপ পাঠাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এর মধ্যে এডিবির বোর্ডের অনুমোদন পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। এরপরই ঋণ চুক্তি হবে।
সূত্র জানায়, প্রক্রিয়াকরণ শেষে প্রকল্প প্রস্তাবটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে। সেখানে চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে যমুনা ও পদ্মা নদীর তীরবর্তী ভাঙনকবলিত এলাকার জনগণের জীবনমান উন্নয়ন হবে। টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে প্রকল্পটি। এছাড়া অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রকল্প এলাকার ভাঙনরোধ ও স্থায়িত্ব বাড়াতে সমন্বিত কাঠামোগত ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশের প্রধান ৩ নদীর (যমুনা, মেঘনা,পদ্মা) ভাঙনরোধে এডিবির আর্থিক সহায়তায় যমুন-মেঘনা রিভার ইরোশন মিটিগেশন (জেএমআরইএমপি) শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। যেটি ২০০২ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এ প্রকল্পের আওতায় যমুনা ও মেঘনা নদীর ভাঙন কবলিত ২৮ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার অংশে নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ করা হয়। এতে সম্পূর্ণ নতুন ও ব্যয় সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত প্রতিরক্ষামূলক নদীতীর সংরক্ষণ কাজগুলো কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
সেজন্য একই ধরনের ব্যয়সাশ্রয়ী ও টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রধান নদীগুলোর ভাঙনকবলিত অংশে তীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়নের জন্য জাপান সরকারে আর্থিক অনুদানে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করে এডিবি। ২০১২ সালের জুন থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সমীক্ষাটি চলে। ওই সমীক্ষা প্রতিবেদনের (মেইন রিভার ফ্ল্যাড অ্যান্ড ব্যাংক ইরোশন রিস্ক ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম) সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নাধীন একটি প্রকল্পে ট্রান্স-১ বাস্তবায়নে এডিবি সাড়ে ৬ কোটি ডলার ঋণ এবং রাজকীয় নেদারল্যান্ডস সরকার ১ কোটি ৫৩ লাখ ডলার অনুদান দিতে সম্মত হয়।
এজন্য ২০১৪ সালের ১৪ আগস্ট একটি চুক্তিও স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের জুন মেয়াদে ট্রান্স-১ বাস্তবায়নের কাজ চলছে। পরবর্তীতে ট্রান্স-১ এর আওতায় ট্রান্স-২ এর সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। এরপর ট্রান্স-১, ট্রান্স-২ এবং ট্রান্স-৩ এক সঙ্গে করে ‘ফ্ল্যাড অ্যান্ড রিভারব্যাংক ইরোশন রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (প্রজেক্ট-২)’ শীর্ষক প্রকল্পটির প্র্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হবে-পাবনার বেড়া, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, বেলকুচি ও চৌহালী উপজেলা, টাঙ্গাইলের টাঙ্গাইল সদর ও নাগরপুর, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর, হরিরামপুর ও শিবালয় উপজেলায়। প্রকল্পের আওতায় ৩০ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ, ৭ দশমিক ৯০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ৪০ কিলোমিটার এডাপটেশন কার্যক্রম, ৬ কিলোমিটার জরুরি কার্যক্রম এবং ৩ কিলোমিটার বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।
সেই সঙ্গে স্ট্রাকচারসহ অফটেক ম্যানেজমেন্ট কার্যক্রম, জমি উন্নয়ন, দুটি রেগুলেটর নির্মাণ, ১২টি মৎস্য অভয়াশ্রম উন্নয়ন এবং ১০২ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের আওতায় ৩০ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণে ৬১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতি মিটারের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার টাকা। নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের যৌক্তিকতাসহ ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি সম্পর্কে পিইসি সভায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যাখা চাওয়া হয়।
এছাড়া ৭ দশমিক ৯০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ বাবদ ৩৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতি মিটারের খরচ ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার ৭০০ টাকা। তিন কিলোমিটার বাঁধ সংরক্ষণের জন্য ধরা হয়েছে ৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রতি মিটারের খরচ ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা।