নিউজ ডেস্ক:
- অকৃত্রিম বন্ধুত্বে পাশে দাঁড়িয়েছে উন্নয়ন সহযোগী বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা
- এ পর্যন্ত উপহার হিসেবে ১ কোটি ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮২০ ডোজ টিকা পাওয়া গেছে
- যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভেন্টিলেটর, ভারত থেকে আসছে তরল অক্সিজেন
করোনা মহামারী মোকাবেলায় বাংলাদেশকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়ন-সহযোগী দেশ ও সংস্থা। এর মধ্যে ভারত, চীন, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ থেকে এসেছে টিকা বা ভ্যাকসিন, ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম ও রোগীদের শরীরের অক্সিজেন মাত্রা নিরূপণের যন্ত্র অক্সিমিটার, কিট, আইসিইউ ভেন্টিলেটর, তরল অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী। বিভিন্ন দেশ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে গড়ে উঠা প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকে এ পর্যন্ত উপহার হিসেবে ১ কোটি ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮২০ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। দুই দফায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩৫০টি ভেন্টিলেটর এসেছে দেশে। ভারত থেকে রেল ও সড়ক পথে আসছে বিপুল পরিমাণে তরল অক্সিজেন। এছাড়া করোনা মোকাবেলায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ দাতাসংস্থা আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছ থেকে বৈদেশিক সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। করোনা মোকাবেলায় ব্যক্তি উদ্যোগেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। এদের মধ্যে কেউ কেউ নিজ দেশের প্রতি ভালবাসা থেকেই বাংলাদেশের জন্য টিকার ব্যবস্থা করতে সহযোগিতা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশী একদল চিকিৎসক সহায়তার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য ইতোমধ্যে ২৫ লাখ ডোজ মডার্নার টিকা পাঠাতে সহযোগিতা করেছেন। আরও ৩০ লাখ ডোজ টিকা পাঠাতে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। শুধু তাই নয়, করোনা মহামারীতে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশী চিকিৎসকদের জুম মিটিং ও সেমিনারের মাধ্যমে পরামর্শও দিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্রের সহযোগিতা এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগ অব্যাহত থাকলে করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশ দ্রুত জয়ী হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এই সহযোগিতার মধ্য দিয়ে অকৃত্রিম বন্ধুত্বের সেই সম্পর্ক নতুন মাত্রা লাভ করেছে।
জানা গেছে, ভারত, চীন, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র এই চার দেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে ২ কোটি ৪১ লাখ ৪৫ হাজার ৮২০ ডোজ টিকা বা ভ্যাকসিন এসেছে দেশে। এর মধ্যে উপহার হিসেবে ১ কোটি ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮২০ ডোজ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে করোনার গণটিকাদান কর্মসূচী শুরু করে সরকার। টিকার স্বল্পতার কারণে আড়াই মাস ধরে টিকাদান চলার পর ২৫ এপ্রিল সরকার প্রথম ডোজ টিকাদান বন্ধের ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়। সপ্তাহখানেক পর একই কারণে সারাদেশের সব কেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়াও বন্ধ করে দেয়া হয়। দুই মাস সাতদিন বন্ধ থাকার পর গত ১ জুলাই ঢাকাসহ সারাদেশে আবারও গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে ২০২০ সালের ৫ নবেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে টিকা আমদানির বিষয়ে চুক্তি হয়। এরপর ২১ জানুয়ারি ভারত সরকারের উপহার হিসেবে দেশে আসে ২০ লাখ ডোজ টিকা। ২৫ জানুয়ারি কেনা টিকার প্রথম চালান আসে। ওই সময় ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসে দেশে। কেনা টিকার দ্বিতীয় চালান আসে ২২ ফেব্রুয়ারি। প্রতি চালানে ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসার কথা থাকলেও ওইদিন ২০ লাখ ডোজ টিকা আসে। ২৬ মার্চ ভারত সরকার আবারও ১২ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে দেয় বাংলাদেশকে। ৮ এপ্রিল ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নরভানে ঢাকায় বাংলাদেশের (তৎকালীন) সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের কাছে ১ লাখ অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন হস্তান্তর করেন। সব মিলিয়ে ভারত থেকে মোট ১ কেটি ২ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসেছে। এরপর কোভিশিল্ডের আর কোন টিকা দেশে আসেনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে গ্লোবাল এ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস এ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস (গ্যাভি) এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনসের গড়া প্ল্যাটফর্মের (কোভ্যাক্স) সুবিধার আওতায় গত ৩১ মে দেশে আসে ফাইজারের ১ লাখ ৬০০ ডোজ টিকা। চীন সরকার ১২ মে সিনোফার্মের ৫ লাখ ও ১৩ জুন ৬ লাখ ডোজ মোট ১১ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে দেয়। সরকারের চুক্তির আওতায় ১ ও ২ জুলাই চীন থেকে আসে ২০ লাখ ডোজ টিকা। আর ১৭ জুলাই আসে আরও ২০ লাখ ডোজ টিকা। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে চীনা কোম্পানি সিনোফার্ম থেকে সরকারের কেনা কোভিড-১৯ টিকার ৩০ লাখ ডোজ ঢাকায় এসেছে। এ পর্যন্ত সিনোফার্মের ৮১ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসেছে। আর ১ ও ২ জুলাই মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ টিকা আসে দেশে। আর ১৯ জুলাই আরও ৩০ লাখ ডোজ মডার্নার টিকা দেশে আসে কোভ্যাক্সের সুবিধার আওতায়। এ নিয়ে মডার্নার ৫৫ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসেছে। ২৪ জুলাই জাপান থেকে অক্সফোর্ড এ্যাস্ট্রাজেনেকার দুই লাখ ৪৫ হাজার ২০০ ডোজ টিকা দেশে আসে। টিকার বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের মাধ্যমে জাপান সরকার এসব টিকা বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে পাঠিয়েছে। এছাড়া আরও ১৩ লাখ ডোজ টিকা কোভ্যাক্সের আওতায় জাপান থেকে দেশে আসছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের টিকা ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডাঃ শামসুল হক শুক্রবার গণমাধ্যমে বলেন, জাপান থেকে কোভ্যাক্সের কর্মসূচীর আওতায় ১৩ লাখ টিকা দেশে আসবে দুটি চালানে। প্রথম চালান শনিবার ও দ্বিতীয় চালান আগামী বুধবার দেশে পৌঁছাবে। জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জনকণ্ঠকে বলেন, সরকারের নানামুখী উদ্যোগের ফলে করোনার টিকার সঙ্কট কাটতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়ন-সহযোগী দেশ বাংলাদেশকে টিকা দিতে এগিয়ে আসছে। তিনি আরও বলেন, দেশবাসীর জন্য টিকার নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার ইতোমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে ক্রয়ের পাশাপাশি কোভ্যাক্সের আওতায় বিভিন্ন উৎস থেকে আরও বেশি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সংগ্রহের সুব্যবস্থা করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, আগামী সঙ্কটময় মাসগুলোতে দেশে ভ্যাকসিনের অভাব হবে না।’
বাংলাদেশকে টিকা পেতে সহায়তা করছেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী একদল চিকিৎসক ॥ দেশে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা। এদের মধ্যে কেউ কেউ নিজ দেশের প্রতি ভালবাসা থেকেই টিকার ব্যবস্থা করতে সহযোগিতা করছেন। এমনই একজন আমেরিকান প্রবাসী বাংলাদেশী চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ চৌধুরী হাফিজ আহসান। হাফিজ আহসান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কে-৩৭ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। যিনি বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কার্ডিওলোজি বিভাগের একজন অধ্যাপক। হাফিজ ও তার স্ত্রী ডাঃ সেলিনা পারভীন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডার সিনেটর কর্টেজ মাস্তোর সহায়তায় বাংলাদেশের জন্য এরই মধ্যে ২৫ লাখ ডোজ মডার্নার টিকা পাঠাতে সহযোগিতা করেছেন। আরও ৩০ লাখ ডোজ টিকা পাঠাতে কাজ করে যাচ্ছেন।
অধ্যাপক হাফিজ আহসান গণমাধ্যমে বলেন, দেশের ক্রান্তিলগ্নে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে টিকা পাঠাতে ভূমিকা রাখতে পেরে আমরা প্রবাসী বাংলাদেশীরা গর্বিত। সেই সঙ্গে দেশের যেকোন ভাল কাজে নিজেকে জড়িত রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। শুধু তাই নয়, করোনা মহামারীতে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশী চিকিৎসকদের জুম মিটিং ও সেমিনারের মাধ্যমে পরামর্শও দিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকা মেডিক্যালের সাবেক ছাত্র অধ্যাপক ডাঃ জিয়াউদ্দিন আহমেদ সাদেক ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ডাঃ মাসুদসহ আরও অনেকে সহায়তা করছেন।
দুই দফায় ৩৫০ আইসিইউ ভেন্টিলেটর পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরা ॥ করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশী চিকিৎসকদের উদ্যোগে বাংলাদেশকে আড়াই শ’ আইসিইউ ভেন্টিলেটর প্রদান করা হয়েছে। সম্প্রতি এসব ভেন্টিলেটর ভারতের নয়াদিল্লী হয়ে ঢাকায় পৌঁছেছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসব পোর্টেবল ভেন্টিলেটর গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ। এর আগে গত বছর অক্টোবরে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সহায়তায় বাংলাদেশকে ১০০ ভেন্টিলেটর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) মাধ্যমে এই সহায়তা দেয়া হয়।
ভারত থেকে রেল ও সড়ক পথে আসছে তরল অক্সিজেন ॥ বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ ক্রমশ বাড়তে থাকায় রোগীদের জন্য তরল অক্সিজেনের অভাব দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত। ঈদের দিন জরুরী ভিত্তিতে অক্সিজেনের অভাব মেটাতে ১৮০ মেট্রিক টন মেডিক্যাল অক্সিজেন সরবরাহ করে দেশটি। তবে সহযোগিতার নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে ২৪ জুলাই। ওইদিন প্রথমবারের মতো সেদেশের ‘অক্সিজেন এক্সপ্রেস’ অক্সিজেন নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ঝাড়খন্ডের জামশেদপুর টাটানগর থেকে ১০টি কনটেইনারে অক্সিজেন পৌঁছায় সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম স্টেশনে। পরের দিন ভারত থেকে আসা ওই ২০০ টন তরল অক্সিজেন ট্যাঙ্কলরি করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। এরপর গত ২৯ জুলাই বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে সড়ক পথে আরও দুই শ’ মেট্রিক টন অক্সিজেন আমদানি করা হয়েছে। শুক্রবার ভারত থেকে রেলপথ হয়ে আরও ২০০ মেট্রিক টন তরল মেডিক্যাল অক্সিজেন দেশে এসেছে। এদিন দুপুর দেড়টায় ভারত থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে বিশেষ ‘অক্সিজেন এক্সপ্রেস’ বাংলাদেশে প্রবেশ করে। রেলপথ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এভাবে আরও তিনটি ট্রেনে ৬০০ মেট্রিক টন তরল অক্সিজেন আগামী সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশে আসবে। এরপর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে ট্রেনের মাধ্যমে অক্সিজেন নিয়ে আসবে।
করোনা মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশ ও দাতা সংস্থার অর্থ সহায়তা ॥ গত ২৯ জুন জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মহামারী নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ ও প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ২.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজেট সহায়তা ঋণ পেয়েছি। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে আরও প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা আমরা পেতে যাচ্ছি। এর পাশাপাশি টিকা কিনতে ভ্যাকসিন সাপোর্ট বাবদ আরও ২ বিলিয়ন ডলার সহায়তার আশ্বাস পেয়েছি।’ ইতোমধ্যে জাপান, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছ থেকে অর্থ সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। করোনা মহামারী মোকাবেলায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে ২০০ কোটি ডলার ঋণ-সহায়তা দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এ সহায়তা করোনাকালে অন্য যেকোন উন্নয়ন সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া সহায়তার চেয়ে বেশি। ম্যানিলাভিত্তিক এই ঋণদাতা সংস্থার সহায়তার পরিমাণ বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী টাকার অঙ্কে (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা) ১৬ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। এ ঋণ-সহায়তার মধ্যে অর্থনীতির ক্ষতি কাটাতে বাজেট সহায়তা হিসেবে এডিবি দিয়েছে ৫০ কোটি ডলার। ২৫ কোটি ডলার দিয়েছে নীতি-সহায়তা হিসেবে। ‘কোভিড-১৯ রেসপন্স ইমার্জেন্সি এ্যাসিসটেন্স’ শীর্ষক প্রকল্পে স্বাস্থ্য খাতের জন্য দিয়েছে ১০ কোটি ডলার। এছাড়া করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে বাংলাদেশকে ৯৪ কোটি ডলার দিয়েছে এডিবি। অনুদান হিসেবে দিয়েছে ৯৩ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এর বাইরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ক্ষতি কাটাতে এডিবি ৫ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে। প্রাণঘাতী ভাইরাসের ধাক্কা সামলাতে বাংলাদেশকে প্রয়োজনে আরও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট শিনজিন চেন।
এছাড়া প্রাণঘাতী করোনা মোকাবেলায় মাস্ক, ভেন্টিলেটরসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কিনতে গত ৩ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ১০ কোটি ডলার বা ৮৫০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করেছিল বহুজাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক। দুই মাস পর গত জুন মাসে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আরও ১০৫ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থাটি। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ আট হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংকের এই ঋণের সুদের হার হবে ২ শতাংশ। পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ‘করোনা মহামারী ঠেকাতে বিভিন্ন উন্নয়নসহযোগী সংস্থা ও দেশ থেকে অর্থ পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক ও এডিবিসহ বিভিন্ন সংস্থা করোনা তহবিল গঠন করেছে। সেখান থেকেও সরকার ঋণ নিতে পারে। এছাড়া চলতি অর্থবছর আইএমএফ বাংলাদেশকে ৭৩০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা দিয়েছে। আগামী অর্থবছরও যদি সরকার চায় তাহলে পেতে পারে।’
বৈদেশিক সহায়তা ৫১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে ॥ করোনাকালে সারা বিশ্বের মতো দেশের অর্থনীতির চাকা খানিকটা স্থবির থাকলেও গত অর্থবছরে বেড়েছে বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ। সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে পাইপলাইনের আকার দাঁড়ায় ৫১ বিলিয়ন ডলারে। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের শুরুতে পাইপলাইনের আকার ছিল ৪৮.৮ বিলিয়ন ডলার। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ওপেনিং পাইপলাইনের মাত্র ১৪ শতাংশ অর্থ ছাড় হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওপেনিং পাইপলাইনে ২০ শতাংশ বা তার বেশি অর্থ ছাড় ‘গুড পারফরমেন্স’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ এ যাবতকালে কখনও ওপেনিং পাইপলাইনের ২০ শতাংশ অর্থ ছাড় করতে পারেনি।
এই বিষয়ে ইআরডির ফরেন এইড বাজেট উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘২০১৯-২০ অর্থবছরের মাত্র তিন মাস কোভিড-১৯-এ আমাদের কিছুটা ক্ষতি হয়েছিল। কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রায় পুরো সময়টাই মহামারীর প্রভাব ছিল। তবুও আমরা ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় বেশি বৈদেশিক অর্থছাড় করতে পেরেছি।’ এ বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে অর্থছাড় প্রতিশ্রুতি আসছে সেটা যেমন একটি বিষয় ঠিক, তেমনি আমাদের খরচের হারও বাড়াতে হবে। আরও পরিষ্কার করে বললে যে বিষয়টি দাঁড়ায় সেটি হলো বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে ব্যয় বাড়ানোর হার আমাদের বাড়াতে হবে। তাহলে ঋণের অর্থ, প্রতিশ্রুতির অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করা যাবে এবং আমাদের উন্নয়ন কাজও অনেকাংশে এগিয়ে যাবে।’