নিউজ ডেস্ক:
করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা নিয়ে চলতি সপ্তাহেই দুটি অগ্রগতি দেখা যেতে পারে দেশে। একটি হচ্ছে—সপ্তাহের শেষের দিকে যেকোনো দিন দেশে এসে পৌঁছতে পারে চীনের সিনোভ্যাক কম্পানির দেড় হাজার নমুনা টিকা। সিনোভ্যাকের সঙ্গে চুক্তির আওতায় আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) উদ্যোগে ঢাকার সাতটি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাকর্মীদের মধ্যে ওই টিকা পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হবে। এরই মধ্যে আইসিডিডিআরবি এসংক্রান্ত আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে।
এ সপ্তাহেই গ্লোব বায়োটেকের টিকার দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা অর্থাৎ মানুষের শরীরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য অনুমতি পেতে বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলে (বিএমআরসি) চূড়ান্ত প্রটোকল জমা দেওয়া হবে। বাংলাদেশের স্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের অন্যতম অঙ্গপ্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক এরই মধ্যে খসড়া প্রটোকল জমা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, প্রথম ধাপে তাদের উদ্ভাবিত টিকা প্রাণীর ওপর পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করে তারা প্রত্যাশিত মাত্রায় সাফল্য পেয়েছে।
টিকা পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী কে এম জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, চীনের নমুনা টিকা এসে পৌঁছার পরে তা নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে প্রয়োগ করা হবে। যাঁরা স্বেচ্ছায় এই টিকা প্রয়োগে সম্মত থাবেন শুধু তাঁদেরই এখন বাছাই করা হচ্ছে। যে নির্দিষ্ট সাতটি প্রতিষ্ঠানকে গবেষণার জন্য আইসিডিডিআরবি চেয়েছিল এরই মধ্যে সরকার সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে গবেষণায় যুক্ত হওয়ার জন্য অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। এখন টিকা প্রয়োগের উপযুক্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের বাছাই করার ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালকরা সাহায্য করছেন। আইসিডিডিআরবির গবেষকদলের সদস্যরা হাসপাতালগুলোয় এরই মধ্যে প্রাথমিক কাজ শুরু করে দিয়েছেন। নির্ধারিত হাসপাতালগুলো হচ্ছে—ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল-২, একই হাসপাতালের বার্ন ইউনিট, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, ঢাকা মহানগর হাসপাতাল ও হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল।
ড. কে এম জামান বলেন, ‘আমরা দুই হাজার ১০০ জনের শরীরে নমুনা টিকা প্রয়োগ করব। আর দুই হাজার ১০০ জনকে দেব প্লাসিবো (প্রতীকী ওষুধ)। এরপর প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহ ও প্রতি মাসে নিবিড়ভাবে তাঁদের পর্যবেক্ষণ করা হবে। যাঁদের মধ্যে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে তাঁদের নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করা হবে। কারো শরীরে জোর করে বা অনিচ্ছায় নমুনা টিকা প্রয়োগ করার সুযোগ নেই কিংবা করা হবেও না। যাঁরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন তাঁদের আমাদের গবেষকরা পুরো কাজ সম্পর্কে বুঝিয়ে বলছেন। তারপর নির্দিষ্ট ফরমেটে যাঁরা সম্মতি দিচ্ছেন তাঁদের এই কাজে যুক্ত করা হচ্ছে। প্রয়োগের আগে প্রত্যেকের শারীরিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যাঁরা এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এমন কাউকে এই নমুনা টিকা প্রয়োগ করা হবে না।’
সিনোভ্যাকের নমুনা টিকা সম্পর্কে ড. জামান বলেন, এই টিকা যাঁদের শরীরে প্রয়োগ করা হবে তাঁদের মাধ্যমে কোনোভাবেই অন্য কেউ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ এই টিকায় থাকছে মৃত ভাইরাস, যা অন্যকে সংক্রমিত করতে পারবে না। যাঁর শরীরে প্রয়োগ করা হবে তিনিও সংক্রমিত হবেন না। বরং টিকাটি যাঁদের শরীরে কার্যকর হবে তাঁদের মধ্যে পর্যাপ্ত মাত্রায় অ্যান্টিবডি তৈরি করবে, যা করোনাভাইরাস ঠেকাতে সহায়ক হবে। প্রয়োগের পর টানা ছয় মাস সবাই পর্যবেক্ষণে থাকবেন। তাঁরা নিজেদের বাসাবাড়িতে স্বাভাবিকভাবেই থাকতে পারবেন, কর্মস্থল কিংবা বাইরে সর্বত্রই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন। আর এই পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সার্বক্ষণিক পর্যালোচনার জন্য অনেকগুলো দলের সদস্যরা একযোগে কাজ করবেন। এ ক্ষেত্রে শুধু আইসিডিডিআরবির গবেষকরাই নন, সরকার নির্ধারিত গবেষক দল, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাসহ আরো বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের পর্যবেক্ষক দল প্রতিদিনের প্রত্যেকের (পরীক্ষামূলক প্রয়োগের আওতায় যাঁরা থাকবেন) ফলোআপ করবেন।
গ্লোব ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. হারুন-অর-রশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা খুবই সাফল্যের সঙ্গে আমাদের টিকার প্রথম ধাপের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ করেছি। প্রাণীর শরীরে প্রয়োগ করে চমৎকার সফলতা এসেছে। এখন আমরা দ্বিতীয় ধাপে মানুষের শরীরে প্রয়োগের জন্য প্রটোকল চূড়ান্ত করছি। এরই মধ্যে এই প্রটোকলের একটি খসড়া আমরা বিএমআরসিকে দিয়েছি। এই সপ্তাহ নাগাদই চূড়ান্ত প্রটোকল জমা দিয়ে মানুষের শরীরে প্রথম ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমতি চাইব।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী, যাঁরা এখন আমাদের এই টিকা নিয়ে আশ্বস্ত হতে পারছেন না তাঁরা শিগগিরই আমাদের টিকার সাফল্যে বিস্মিত হবেন। কারণ আমাদের বিজ্ঞানীরা বৈজ্ঞানিকভাবেই অন্য কোনো দেশের টিকার চেয়ে আমাদের টিকাকে অধিকতর কার্যকর বলে প্রমাণ দিতে যাচ্ছেন। যদি আমরা প্রথম ধাপে সফল হতে না পারতাম তবে আমরা দ্বিতীয় ধাপে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে পারতাম না।’
সূত্র: চাঁপাইনবাবগঞ্জ