নিউজ ডেস্ক:
দেশে বসে প্রায় ৫ লাখ ফ্রি-ল্যান্সার উদ্যোক্তা বিদেশের মার্কেটে কাজ করে বছরে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি আয় করছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে এই তথ্য দিয়ে সম্ভাবনাময় এই খাতটির বৈদেশিক মুদ্রায় অর্জিত আয়ের ওপর ১০ শতাংশ হারে প্রণোদনা সুবিধা চাইছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গত ৩ জুন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে এ সংক্রান্ত আধা-সরকারি চিঠি পাঠান যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, আইসিটি খাতে রপ্তানি বিকাশে ২০১৮ সালে সফটওয়্যার, আইটিইএস ও হার্ডওয়্যারের আওতাভুক্ত পণ্য ও সেবা রপ্তানির বিপরীতে ১০ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। পরে যা বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে জারি করা ৩ নম্বর সার্কুলারের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছে। তবে ওই সার্কুলারে রপ্তানি সহায়তা পাওয়ার তালিকায় এমন কিছু সেবা বা পণ্যের উল্লেখ রয়েছে, যা ফ্রি-ল্যান্সারদের মাধ্যমে সম্পাদিত হওয়া সত্ত্বেও ব্যক্তি পর্যায়ে এই প্রণোদনা সুবিধা তারা পান না। ফ্রি-ল্যান্সারদের এই আয়কে সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত বিবেচনা করে নগদ সহায়তার আওতায় আনা হলে বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ফ্রি-ল্যান্সারদের স্বীকৃতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী তাদের সুবিধার বিষয়গুলো নিয়ে সরকার কাজ করছে। সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে ফ্রি-ল্যান্সারদের রপ্তানি আয়ের ওপর প্রণোদনার যৌক্তিকতাও খতিয়ে দেখা হবে। আইসিটি সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশি প্রবাসী আয়ে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাচ্ছে যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। করোনা মহামারীতেও রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছে দেশে, যার ফলে রিজার্ভের অর্থ বড় প্রকল্পে বিনিয়োগের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী একটি দেশকে ঋণ দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। একইভাবে ফ্রি-ল্যান্সারদের আয়ে প্রণোদনা সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ আরও বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে সহায়তা করবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফ্রি-ল্যান্সিং খাতে গুরুত্ব দিয়ে এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর পর ওই মন্ত্রণালয় থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়, রপ্তানি খাতে নগদ সহায়তার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। এরপর গত ৩ জুন বাণিজ্যমন্ত্রীকে এ বিষয়ে চিঠি লেখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী। আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ওয়েব ডিজাইন, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, স্মার্টফোন অ্যাপ, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট, ড্রপ শিপিং, ইউ আই/ইউ এক্স (ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন) এর অনেক চাহিদা রয়েছে। অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে এই কাজগুলোর জোগানও রয়েছে অনেক।
এ ছাড়া ভারত, শ্রীলঙ্কার মতো প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশি ফ্রি-ল্যান্সারদের কাজের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পাশাপাশি দেশে ব্যক্তি উদ্যোগে কর্মসংস্থান তৈরিতেও ভূমিকা রাখছে ফ্রি-ল্যান্সিং। এ ছাড়া বড় ধরনের বিনিয়োগ ছাড়াই ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপের সাহায্যে ঘরে বসে ফ্রি-ল্যান্সিং করা যায় বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ খাতটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। গত ২৫ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রি-ল্যান্সার উদ্যোক্তাদের একটি প্ল্যাটফরমে এনে তাদের পেশার স্বীকৃতি দিতে আইডি কার্ড প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
এই আইডি কার্ডের দ্বারা ফ্রি-ল্যান্সারদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার উৎস্যের আইনগত বৈধতা ও পরিমাণ যাচাই করা সম্ভব হবে।