নিউজ ডেস্ক:
নৌপথে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের সুবিধা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে দেশে আরও ছয়টি নদীবন্দর চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। ইতিমধ্যে এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর প্রত্যাশা, শিগগিরই বন্দরগুলোর অনুমোদন দেবে সরকার।
অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা নদীবন্দরগুলো হচ্ছে গাইবান্ধায় অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি (বালাসী) নদীবন্দর, ভোলায় ইলিশা নদীবন্দর, নেত্রকোনায় মোহনগঞ্জ নদীবন্দর, পাবনায় নাজিরগঞ্জ নদীবন্দর, রাজবাড়ীতে ধাওয়াপাড়া-জৈকুড়া নদীবন্দর এবং কুড়িগ্রামে রৌমারী-রাজীবপুর নদীবন্দর।
বিআইডব্লিউটিএর তথ্য অনুযায়ী, সরেজমিনে পরিদর্শন ও স্থানীয় গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে সম্প্রতি ছয়টি নতুন নদীবন্দরের অনুমোদনের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ও নৌপথের উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিআইডব্লিউটিএ (সাবেক পূর্ব পাকিস্তান অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ)। এরপর ১৯৬০ সালে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, বরিশাল, চাঁদপুর ও টঙ্গী— এই ছয় নদীবন্দর প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখন পর্যন্ত দেশে সরকার অনুমোদিত মোট নদীবন্দর আছে ৩৯টি। সর্বশেষ গত অক্টোবরে সাতক্ষীরা ও শরীয়তপুরে পৃথক দুটি নদীবন্দর প্রতিষ্ঠা করা হয়।
দেশে মোট নৌপথ আছে প্রায় ২৪ হাজার কিলোমিটার। কিন্তু পুরো পথই নৌযান চলাচলের উপযোগী নয়। বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার ও শুষ্ক মৌসুমে মাত্র ৩ হাজার ৮৬৫ কিলোমিটার নৌপথে যানবাহন চলাচল করতে পারে।
বিআইডব্লিউটিএ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো এলাকায় নদীবন্দর করা হলে জনসাধারণের পাশাপাশি নৌপথ সংরক্ষণেও সেটি কাজ করে। কারণ, বন্দর চালু রাখতে নিয়মিত বিরতিতে বা প্রয়োজন অনুযায়ী নদী খনন বা পুনঃখনন করতে হয়। যাতে নদীর নাব্যতা ঠিক থাকে ও নৌযান চলাচল করতে পারে। পাশাপাশি নদীবন্দর ঘিরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং বিআইডব্লিউটিএর রাজস্ব বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়। ফলে নদীবন্দর ঘোষণা করা হলে নৌপথ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সহজ হবে।
নাজিরগঞ্জ নদীবন্দর
পাবনার সুজানগরের একটি এলাকা নাজিরগঞ্জ। এখানে এখন নাজিরগঞ্জ–ধাওয়াপাড়া ফেরিঘাট আছে। এ ঘাট দিয়ে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করা হয়। এ এলাকায় নদীবন্দর প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা যাচাই করতে গত ৫ জুলাই সরেজমিন পরিদর্শন করেছে বিআইডব্লিউটিএর কমিটি। কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলের পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, পিরোজপুর, বাগেরহাট, খুলনাসহ ১২টি জেলা থেকে উত্তরাঞ্চলের পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, দিনাজপুরসহ ৯টি জেলায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে লালনশাহ সেতু হয়ে যাওয়া ছাড়া বিকল্প কোনো সড়কপথ নেই। এমন অবস্থায় নাজিরগঞ্জ নদীবন্দরটি হলে অনেক ক্ষেত্রে যাত্রীদের যাত্রাপথ ১০০ থেকে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত কমে আসবে। পাশাপাশি নৌবাণিজ্যিক কার্যক্রম কয়েক গুণ বাড়বে বলে কমিটি মনে করছে।
যাত্রীসেবার জন্য নাজিরগঞ্জ-ধাওয়াপাড়া নৌপথে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি আধুনিক সুবিধাসংবলিত টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, ফেরি টার্মিনাল তৈরি, পার্কিং ইয়ার্ড, জেটি ও গ্যাংওয়ে নির্মাণ, পন্টুন স্থাপন ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া নদীর নাব্যতা রক্ষায় প্রতিবছর নদী খনন করা যেতে পারে বলা হয়েছে। এ–সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন গত ৩ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করবে সরকার।
রৌমারী-রাজীবপুর নদীবন্দর
কুড়িগ্রামে রৌমারী-রাজীবপুর নদীবন্দর ঘোষণা–সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি ১৪ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। রৌমারী-রাজীবপুর—এ দুই উপজেলায় কোনো সংযোগ সড়ক নেই। শুধু জেলা সদরের সঙ্গে নৌপথে পরিবহনের ব্যবস্থা রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ বলছে, এখানে নদীবন্দর হলে রৌমারী ও রাজীবপুর এলাকায় নৌ যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হবে। এতে ওই দুই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। এ দুই উপজেলা থেকে কুড়িগ্রাম জেলা সদরে যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত নৌপথটি নিয়মিত খনন করা হলে নৌপথ সংরক্ষিত হবে। এ ছাড়া নদীবন্দর প্রতিষ্ঠার পর ট্রলারের পরিবর্তে লঞ্চ পরিচালনা করলে যাত্রী বাড়বে এবং নৌ দুর্ঘটনা কমবে।
এ দুটি ছাড়া অনুমোদন পেতে যাওয়া অন্য চারটি বন্দরের বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর প্রতিবেদনের অনুলিপি পাওয়া যায়নি।
সম্ভাব্য আরও ছয় বন্দর
অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা ছয়টি বন্দর ছাড়া আরও ছয়টি নদীবন্দর প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে বিআইডব্লিউটিএ। সরেজমিনে পরিদর্শনসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ হলে এগুলোও অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে সংস্থাটি। কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে এমন সম্ভাব্য আরও ছয়টি বন্দরের মধ্যে সিলেটে তিনটি; জামালপুর, রাজশাহী ও শরীয়তপুরে একটি করে নদীবন্দর রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএর অতিরিক্ত পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন বিভাগ) এ কে এম আরিফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এ পর্যন্ত বিআইডব্লিউটিএ তথা সরকার ৩৯টি নদীবন্দর ঘোষণা করেছে। বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে আরও কিছু বন্দর ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে নদীবন্দরের সংখ্যা ৫০-এ উন্নীত হবে। এতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাত্রী ও মালামালবাহী নৌযান চলাচলের পথ সুগম হবে এবং সারা দেশে বন্দর সুবিধা সৃষ্টি হবে। এতে নদীভিত্তিক অর্থনীতির চাকা আরও সুদৃঢ় হবে।