বৃহস্পতিবার , ডিসেম্বর ২৬ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / দেশের বাতিঘর শেখ হাসিনা

দেশের বাতিঘর শেখ হাসিনা

নিউজ ডেস্ক:
ছাত্রজীবনেই শেখা রাজনীতির ধারাপাত। সে সময়েই ছিলেন তুখোড় নেতা। বিয়ের পর স্বামীর সংসারে গিয়ে রাজনীতিতে ছেদ। এরপর আর দশজন বাঙালি বধূর মতো স্বামী-সন্তান নিয়ে কাটিয়ে দিতে পারতেন জীবনের সুখময় দিন। কিন্তু একটি ঝড়, একটি নারকীয় হত্যাকাণ্ড সব কিছু করে দেয় এলোমেলো। ওই এক হত্যাকাণ্ড বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নেও চিড় ধরায়। পঁচাত্তরের সেই প্রতিকূল অবস্থায় ওই অদম্য নারী হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির নতুন স্বপ্নের সারথি। নিজের সাজানো-গোছানো সংসার এক পাশে রেখে ফের ফেরেন রাজনীতিতে। প্রায় ছয় বছর প্রবাসে আটকে থাকার পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে জাতির আশা-

আকাঙ্ক্ষা বিনির্মাণে নিজের কাঁধে তুলে নেন দায়িত্ব। সেই থেকে ঘুরে দাঁড়ানো শুরু। ১৯৮১ থেকে ২০২১। পেরিয়েছে একের পর এক দশক। সংগ্রাম, ধৈর্য, ত্যাগ, পরিশ্রমশব্দগুলো এক সুতায় গেঁথেছেন বলেই তিনিই আমাদের বাতিঘর। আমাদের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের সাহসী রাজনীতিযোদ্ধা শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই এখন এক অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার চৌকস নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রথম মেয়াদ (১৯৯৬-২০০১) এবং ২০০৮ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করায় বিজয়ের ৫০ বছরে অর্থ-বাণিজ্যের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অর্জন বিশ্ববাসীকে লাগিয়েছে তাক।

মার্কিন রাজনীতিক হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে বটমলেস বাস্কেট বলে বিদ্রুপ করেছিলেন। সেই বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। দারিদ্র্য দূরীকরণ, অর্থনৈতিক মুক্তি, রিজার্ভ, প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ে এখন উন্নত দেশগুলোকে টেক্কা দিচ্ছে বাংলাদেশ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর একাধিক গণতান্ত্রিক সরকার ও স্বৈরশাসক ক্ষমতায় গিয়ে করতে পারেনি বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন।

বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বাড়ার মানেই হলো শক্তিশালী অর্থনীতি। গতকাল মঙ্গলবারের সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড ৪৫.৫৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ১৯৭১ সালে ১২৯ ডলার মাথাপিছু আয়ে শুরু করা বাংলাদেশের বর্তমান মাথাপিছু আয় দুই হাজার ২২৭ ডলার। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের আগে যেখানে

দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত ৮০ শতাংশ মানুষ, আজ সেই সংখ্যা ২০.৫ শতাংশ। বাংলাদেশের প্রথম অর্থবছরে (১৯৭২-৭৩) দেশের বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। ৫০ বছরের মাথায় এসে বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।

আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের আগে বিদ্যুতের সমস্যায় নাগরিক জীবন ছিল পর্যুদস্ত। মাত্র এক দশকে সেই অবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই। গ্রামে গ্রামে এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। বার্ষিক মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সর্বশেষ পরিমাণ ২৪ হাজার মেগাওয়াট। খাদ্যশস্যের উৎপাদন ৪৫১ লাখ টন। স্বাধীনতার আগে এ পরিমাণ ছিল অনেক নিচে।

স্বাধীনতা-পরবর্তী ৩৪৮.৩৩ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় গত এপ্রিল পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ২০৭ কোটি ডলার। শিক্ষা, গড় আয়ু, আমদানি, রপ্তানি, রিজার্ভ, ডলারের মান, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার এবং মাথাপিছু আয়ের মতো প্রতিটি সূচকে এখন পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। অনেক সামাজিক সূচকেও ভারত থেকে এখন এগিয়ে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতারা বাংলাদেশের অব্যাহত এগিয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্ত প্রকাশ্যে স্বীকারও করছেন।

গেল মার্চে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বাংলাদেশকে অপার সম্ভাবনা ও সুযোগের দেশ হিসেবেও অভিহিত করেন জো বাইডেন। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব উপলক্ষে পাঠানো এক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি আপনাকে ও বাংলাদেশের জনগণকে এই অভূতপূর্ব অর্জনের জন্য অভিনন্দন জানাই।

জো বাইডেন তাঁর অভিনন্দনবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে আরো বলেন, আপনি ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছেন। এটি বিশ্বে উদারতা ও মানবতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন তিনি। আগামী ৫০ বছর এবং তারও পরে বাংলাদেশের জনগণের জন্য আরো উজ্জ্বল একটি ভবিষ্যৎ তৈরিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত বলে মন্তব্য করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই করোনা অতিমারিতেও দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা রয়েছে সচল। করোনা মোকাবেলায় বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়ক যেখানে খাবি খাচ্ছেন, তাঁরা যখন প্রকৃতির কাছে আত্মসমর্পণ করছেন, তখন বঙ্গবন্ধুকন্যা তাঁর অসীম সাহসিকতা আর মানবিকতা দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন এই মহামারি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপের কারণেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা আনা সম্ভব হয়েছে। বিশ্বের অনেক ধনী দেশ যেখান টিকা হাতে পায়নি, তখন দেশের মানুষের জন্য বিনা মূল্যে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। সম্প্রতি ভারত রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে দেশে সংকট তৈরি হয়েছিল, সেই সংকট মোকাবেলায় চীনের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। ফলে হিসেবে দেশটির টিকা এসে পৌঁছেছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে সেসব দেশে মজুদ টিকা পাওয়ার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। রাশিয়া সরকারের সঙ্গে সফল আলোচনার পর সে দেশে তৈরি টিকা বাংলাদেশের মানুষের জন্য আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড কিউসিকের মতে, কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মহামারি করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সফলতা দেখানো নারী নেত্রীদের একজন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছাড়া বাকি যে দুজনের প্রশংসা করা হয়েছে, তাঁরা হলেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন ও বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী মিয়া আমোর মোতলি।

গত মার্চে কমনওয়েলথ মহাসচিব বলেছিলেন, আমি সব সময়ই অনেক নারী ও মেয়েদের দেখে অনুপ্রাণিত হই, আর এবার আমাদের কমনওয়েলথে তিনজন অসাধারণ নেতার নাম নিতে চাই, তাঁরা হলেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন, বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী মিয়া আমোর মোতলি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজ নিজ দেশে কভিড-১৯ মহামারির সময় তাঁদের নেতৃত্ব প্রশংসনীয়। প্যাট্রিসিয়া বলেন, আরো অনেক নারীর মতো এই তিন নেতাও তাঁকে আশার আলো দেখান এমন একটি পৃথিবীর জন্য, যা নারী-পুরুষ সবার সম্মিলিত সুন্দর ভবিষ্যৎ ও স্বার্থ নিশ্চিত করতে পারে।

এদিকে গত এপ্রিলের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নশীল মুসলিম দেশগুলোর জোট ডি-৮-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন। আগামী দুই বছর তিনি এই দায়িত্বে থাকবেন। বাংলাদেশ, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্কের সমন্বয়ে গঠিত ডি-৮-এ ১৯৯৯ সালেও এক দফা সভাপতিত্ব করেছিলেন শেখ হাসিনা।

এদিকে গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত বায়োডাইভারসিটি সামিটে মানবজাতির সুরক্ষায় জীববৈচিত্র্য রক্ষার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমরা কেবল অন্য প্রজাতি বিলুপ্তির কারণ হচ্ছি না, বর্তমান কর্মকাণ্ড পরিবর্তন না হলে প্রকৃতপক্ষে মানবজাতিই চূড়ান্ত বিলুপ্তির দিকে ধাবিত হবে। তাই পৃথিবী ও আমাদের অস্তিত্ব রক্ষায় অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সময়ে ওয়ার্ল্ড উইমেন কনফারেন্সেও সোচ্চার ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভার্চুয়ালি দেওয়া বক্তব্যে ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ৫০-৫০-এ উন্নীত করার অঙ্গীকারের পাশাপাশি নারীর সমতা, ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অঙ্গীকার নবায়ন ও প্রচেষ্টা জোরদারেরও আহ্বান জানান তিনি।

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়ার মতে, স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসূরি তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা। শুধু আন্দোলন-সংগ্রামই নয়, দেশ পরিচালনায়ও তিনি সফল। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। অবিশ্বাস্য উন্নয়নের একক দাবিদার তিনি। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পদ্মা সেতু নির্মিত হবে, মানুষ চিন্তা করেনি। কিন্তু সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন।

ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, শেখ হাসিনার বিকল্প নেই, এটা প্রমাণিত। তিনি সরকারপ্রধান হিসেবে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার গত চার দশকের রাজনীতির মূল্যায়ন করে বাদশা বলেন, সার্বিক বিচারে তিনি একজন সফল রাজনীতিক ও দলীয় প্রধান।

আরও দেখুন

সিংড়ায় আগ্রহ বাড়ছে বস্তায় আদা চাষের

নিজস্ব প্রতিবেদক সিংড়ায় ,,,,,,,,,,,কম খরচে বেশি আয়ের আশায় পতিত জমিতে আদা চাষ শুরু করেছেন নাটোরের …