নীড় পাতা / জেলা জুড়ে / নাটোর সদর / দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়া মোকাম নাটোরের চকবৈদ্যনাথে চামড়া বিক্রি করতে এসে বিপাকে পড়েছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়া মোকাম নাটোরের চকবৈদ্যনাথে চামড়া বিক্রি করতে এসে বিপাকে পড়েছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়া মোকাম নাটোরের চকবৈদ্যনাথে চামড়া বিক্রি করতে এসে বিপাকে পড়েছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। কেনা দামের অর্ধেক দরে চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। চামড়ার দাম কম নিয়ে বিভিন্ন যুক্তি দিচ্ছেন আড়তদাররা। গরমের কারনে পচন থেকে চামড়া বাঁচাতে কম দামেই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। কোন কোন মৌসুমী ব্যবসায়ী খাসির চামড়ার দাম কম হওয়ায় সেগুলো ফেলে রেখেই চলে গেছেন। এছাড়া কম দামে কেনা চামড়াগুলো পাচারের আশঙ্কা তৈরী হয়েছে। তবে পুলিশ কঠোর হুঁশিয়ারি জানিয়েছে, কোনভাবেই চামড়া পাচার হতে দেয়া হবে না। এবার নাটোরে গরু আড়াই থেকে তিন লাখ এবং খাসি-ছাগল ৫থেকে ৭লাখ পিচ চামড়া আমদানীর আশা এই মোকামের আড়ৎদার ও ব্যবসায়ীদের। দেশের অন্তত ১৬টি জেলার চামড়া আসছে এখানে।

বুধবার(২১ জুলাই) বিকেল থেকে কোরবানী হওয়া গরু ও খাসির চামড়া আসা শুরু হয় চকবৈদ্যনাথ মোকামে। আজ শুক্রবার(২৩ জুলাই) সকাল থেকে পূর্ণমাত্রায় চামড়া কেনাবেচা শুরু হয়েছে। আড়ৎদাররা জানান, গরুর বড় চামড়াগুলো ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা, মাঝারি চামড়াগুলো ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা দরে এবং খাসির চামড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে কিনছেন তারা। তবে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, বেঁচতে গেলে আড়তদাররা একটা মাঝারি সাইজের চামড়া ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বেশি কিনছেন না। বড় চামড়ার জন্য বড়জোর ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দিচ্ছেন। আর খাসির চামড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে কিনছেন। অথচ মাঝারি মানের একটি চামড়া তারাই বাড়ি বাড়ি ঘুরে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় ও বড় চামড়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় সংগ্রহ করেছেন। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের আরো অভিযোগ, সরকার যে দামই বেঁধে দেয় না কেনো, নিজেদের মর্জির বাইরে চামড়া কেনেন না নাটোরের আড়ৎদাররা। আড়তের বিদ্যমান শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেটের কারণে তারা কোনোভাবেই চামড়া বেঁচে লাভের মুখ দেখছেন না বিগত কয়েক বছর যাবৎ। ফলে প্রতি বছর তারা একটু করে পুঁজি কমিয়ে ব্যবসা ধরে রেখেছিলেন। করোনা মহামারীর কারনে আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় এবছর তুলনামূলক কম পুঁজি নিয়ে কাঁচা চামড়া কেনা শুরু করেছিলেন তারা। কিন্ত এবারের ঈদেও এর ব্যতিক্রম হল না। ঈদের দিন দুপুর থেকেই বাজারে চামড়া আমদানির পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করেন আড়ৎদারদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট।

অপরদিকে, একই অভিযোগ করেছেন দান হিসেবে কাঁচা চামড়া পাওয়া মাদ্রাসাগুলো। তাদের প্রতিনিধিরা জানান, বিগত বছরের তুলনায় এবার কম দামে চামড়া বিক্রি করেছেন তারা। ঈদ-উল-আযহার দিন সকাল থেকে বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রতিপিস ৬০০ টাকা দরে ১৫টি গরু ও ২৫টাকা টাকা দরে ৩৫টি খাসির চামড়া কিনেছিলেন মৌসুমি ব্যবসায়ী সালাহউদ্দীন। বুধবার রাতে চকবৈদ্যনাথ আড়তে গিয়ে দেখেন গরুর চামড়ার সর্বোচ্চ দাম ৪০০ টাকা আর খাসি মাত্র ২০ টাকা। পঁচে নষ্ট হওয়ার ভয়ে ওই দামেই চামড়া বিক্রি করেন চলে যান তিনি। বৃহষ্পতিবার সকালে ২০ পিস গরুর চামড়া নিয়ে আড়তে আসেন লালপুরের মৌসুমি ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস। তিনি জানান, অন্তত ৫টি আড়ৎ ঘুরেও প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় তিনি চামড়া বিক্রি করতে পারেননি। কেনা দামের চেয়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দাম কম বলছেন আড়ৎদাররা। প্রতি পিস চামড়া লবনজাত করতেও তার আলাদা ব্যয় হয়েছে। বিক্রি করতে না পারলে চামড়া ফিরিয়ে নেবার কথা জানান তিনি। হাফেজ মাওলানা তরিকুল ইসলাম নামের একটি মাদ্রাসার প্রতিনিধি জানান, চামড়ার দাম একটু বেশি পেলে কিছুটা নিশ্চিন্তে আরো কয়েকটি দিন তাদের লিল্লাহ বোর্ডিং পরিচালনা সহজ হয়। কিন্ত বেঁচতে গিয়ে প্রত্যাশিত দাম মিলছে না। যারা চামড়ার দামে কারসাজি করলেন তারা গরীব-এতিমতের হক নষ্ট করলেন। অপরদিকে আড়ৎদার ও ব্যবসায়ীদের দাবী, তারা সরকার নির্ধারিত দামেই চামড়া ক্রয় অব্যাহত রেখেছেন। শিল্প মন্ত্রণালয় নির্ধারিত চামড়ার মূল্য সম্পর্কে কোনো ধারণা না নিয়ে শুধু প্রতিযোগিতার জন্য মৌসুমী ব্যবসায়ীরা একে অপরকে টক্কর দিয়ে বেশি দামে বাড়ি বাড়ি থেকে চামড়া সংগ্রহ করেছেন।

বাজারমুল্য সম্পর্কে অবহিত না হয়ে চামড়া কিনে বিক্রির সময় লাভের মুখ না দেখাটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া এ আড়তের ব্যবসায়ীরা ঈদের আগে বকেয়া পাওনার সামান্য কিছু আদায় করতে পারায় পুঁজি সংকটেও ভুগেছে। এতে ঈদের দিন অনেক আড়ৎদার প্রয়োজনীয় পরিমাণ চামড়া কিনতে পারেনি। জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি শরিফুল ইসলাম বলেন, মৌসুমী ব্যবসায়ীদের অজ্ঞতার কারণে অনেক চামড়া পঁচে নষ্ট হয়েছে। তারা ঠিকমতো কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ করতে পারেনি। আমরা তো নষ্ট চামড়া কিনতে পারি না। এছাড়া বাজারের অবস্থাকে প্রাধান্য দিয়ে চামড়া কিনলে তাদের লোকসান হতো না। জেলা পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, রাজশাহী ও কুষ্টিয়া হয়ে যাতে চামড়া পাচার না হও সেদিকে কঠোর দৃষ্টি রাখা হয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু এন্ট্রি ও এক্সিট পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। আমরা সন্দেহভাজন চামড়াবাহী কোন যানবাহনকে নাটোরের বাইরে যেতে দেবো না।

আরও দেখুন

নাটোর জেলা আইনজীবি সহকারী সমিতির সভাপতি রানা, সম্পাদক ফরিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: সিংড়া (নাটোর) নাটোর জেলা আইনজীবী সহকারী সমিতির দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন …