নিউজ ডেস্ক:
ভারতের বিখ্যাত জুয়েলারি ব্র্যান্ড মালাবার গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ড সম্প্রতি বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশে। নারায়ণগঞ্জে বিশ্বমানের কারখানাও করছে তারা। প্রতিষ্ঠানটির এ সিদ্ধান্তের মাসখানেক না যেতেই দেশটির আরও দুই কোম্পানি যোগ হচ্ছে একই খাতে বিনিয়োগের তালিকায়। এরই মধ্যে আগ্রহপত্রে সইও হয়েছে। এই দুই কোম্পানি ছাড়া কাগজ, অটোমোবাইলসহ আরও আটটি ভারতীয় কোম্পানি আগ্রহপত্রে সই করেছে। সব মিলিয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের পরিমাণ হবে ৮শ কোটি টাকা।
পরে রাজস্থানের দারকা জেমস লিমিটেড ও নিরাজ জুয়েলার্স এরই মধ্যে বাংলাদেশের নাজাবি গ্রুপ ও মান্না সরদার প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে আগ্রহপত্র (ইওআই) সই করেছে বলে জানিয়েছে আইবিসিসিআই সূত্র।
এই দুই কোম্পানি ছাড়াও ভারতীয় আটটি কোম্পানি ৯টি আগ্রহপত্রে (ইওআই) স্বাক্ষর করেছে। সব মিলিয়ে জুয়েলারি, অটোমোবাইল, তিন চাকার বাহন, সরিষার তেল, কাগজ, ইলেকট্রনিকস খাতে প্রায় ৮শ কোটি টাকার বিনিয়োগ করবেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। তবে এ বিনিয়োগ পর্যায়ক্রমে কয়েক বছরে আসবে। রোববার (২৮ আগস্ট) ভারত সফর থেকে ফিরে সম্মেলনের সফলতা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম।
জানা যায়, দেশে জুয়েলারি কারখানা স্থাপন করতে ভারতের নিরাজ জুয়েলার্স ও দারকা জেমস লিমিটেড যৌথভাবে বাংলাদেশের নাজাবি গ্রুপের সঙ্গে কারখানা স্থাপন করতে আগ্রহী। আবার নিরাজ জুয়েলার্স দেশের মান্না সরদার প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গেও যৌথভাবে ব্যবসা করতে চায়। যদিও কারখানা কিংবা বিনিয়োগ সম্পর্কে এখনই কিছু জানাতে চাচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে নাজাবি গ্রুপের চেয়ারম্যান নাসিমা জাহান বিজলী (বিনতী) জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে এখনই কিছু জানাতে চাচ্ছি না। একটু গুছিয়ে নেই, তারপর সব জানাবো। আমরা এখনো মার্কেট স্ট্যাডি করছি। যে সেগমেন্ট নিয়ে কাজ করছি ওইটাতে যারা কাজ করছে, তাদের কী ক্যাপাসিটি আছে কিংবা আমরা কীভাবে কাজ করতে পারি সেটা নিয়ে মার্কেট স্ট্যাডি করবো। সবকিছু প্রাথমিক পর্যায়ে।’
১৯৯২ সালে নিরাজ জুয়েলার্স তাদের কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে ভারতের একাধিক শহরে প্রতিষ্ঠানটির শোরুম আছে। আর জয়পুরভিত্তিক জুয়েলারি ব্র্যান্ড দারকা জেমস লিমিটেড ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত। দেশে-বিদেশে তাদেরও আছে একাধিক শোরুম।
বিডা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগে মালাবার গোল্ডের সঙ্গে নিটল নিলয় গ্রুপের বড় জয়েন্ট ভেঞ্চার হয়েছে। তাদের দেখাদেখি এ খাতে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে ব্যবসার সম্ভাবনার কথা জেনে এখানে আসতে আগ্রহী হয়েছেন। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে কী কী সুযোগ-সুবিধা তারা পাবে এ বিষয়ে আমি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বলেছি।
নিটল নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান ও আইবিসিসিআইর সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল মাতলুব আহমাদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজস্থানের ব্যবসায়ীরা এখানে জুয়েলারি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। আমরা মালাবার গোল্ডের সঙ্গে কাজ করছি। গত মাসে নারায়ণগঞ্জে ফ্যাক্টরির কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে থেকে উৎপাদিত জুয়েলারি দিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করা হবে। মালাবার গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডের সদরদপ্তর ভারতের কেরালায়। কোম্পানিটির বর্তমানে ১০টি দেশে ২৯০টিরও বেশি শোরুম আছে।
অন্য যে খাতে বিনিয়োগ করছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা
জুয়েলারি পণ্য ছাড়াও নিটল নিলয় গ্রুপের সঙ্গে এ ফোর সাইজের কাগজ উৎপাদনে যৌথভাবে কাজ করবে ভারতে বিজয় এন্টারপ্রাইজ। এ খাতে বিনিয়োগ আসবে ৫০ কোটি টাকা। নিটল নিলয়ের সঙ্গে টিভিএস মোটর তিন চাকার যান উৎপাদনে আগ্রহপত্র চুক্তি করেছে। এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ৩শ কোটি টাকা।
এছাড়া নিটল নিলয়ের সঙ্গে টাটা মোটরস অটোমোবাইল খাতে বিনিয়োগ করবে। আর রানার গ্রুপের সঙ্গে অটোমোবাইল খাতে বিনিয়োগ করবে ভারতের মানু গ্রুপ।
বাংলাদেশের রোজ অ্যাগ্রো প্রাইভেট লিমিটেড ও মানিশঙ্কর ওয়েলস প্রাইভেট যৌথভাবে সরিষার তেল উৎপাদনে কাজ করতে আগ্রহপত্র চুক্তি সই করেছে। বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনে এ খাতে ভারতীয় বিনিয়োগের পরিমাণ শত কোটি টাকার বেশি। এছাড়া ভারতের এ ওয়ান স্টোন টাইলস নামক প্রতিষ্ঠান গ্রানাইট স্লাবস, টাইলস ও মার্বেল ব্লক খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। আর ভারতের এইচওডি এক্সপোর্ট কাগজ খাতে ও আল্ট্রা ভাইব্রেন্ট সোলার এনার্জি প্রাইভেট লিমিটেড বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে।
জুয়েলারি খাত বাদেও এলএনজি ও এলপিজি খাতে বিনিয়োগ পাচ্ছে নাজাবি গ্রুপ। তাদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে আগ্রহী ভারতের কেএমভি ইন্ডাস্ট্রি। আব্দুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ভারতের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে খুবই আগ্রহী। এখন বাংলাদেশ থেকে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়। এটাকে তিন বিলিয়নে উন্নীত করে রপ্তানি বৈষম্য কমিয়ে আনাসহ দেশে ভারতীয় বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য কাজ করছি।
ইপিবির সবশেষ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি দুই বিলিয়ন ডলারের ঘরে পৌঁছেছে, যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৫৫ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রপ্তানি বেড়েছে ২০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। বছর শেষে তিন বিলিয়ন ডলার রপ্তানির আশা করছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। একক দেশ হিসেবে ভারত এখন বাংলাদেশের সপ্তম রপ্তানি বাজারের তালিকায় উঠে এসেছে।