নিউজ ডেস্ক:
ইউনিসেফ বাংলাদেশ, গ্রামীণফোন ও টেলিনরের মধ্যে নতুন এক পার্টনারশিপের মাধ্যমে ডিজিটাল প্রযুক্তির নৈতিক ও দায়িত্বশীল ব্যবহারবিষয়ক সহায়তা পাবে বাংলাদেশের এক কোটির বেশি শিশু।
এই পার্টনারশিপের অধীনে ‘বাংলাদেশে শিশুদের জন্য ডিজিটাল সাক্ষরতা জোরদারকরণ এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির নিরাপদ, নৈতিক ও দায়িত্বশীল ব্যবহার’ শীর্ষক একটি কর্মসূচি চালু হবে।
রোববার (৮ অক্টোবর) ইউনিসেফের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এই কর্মসূচির প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো, বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের প্রয়োজনীয় ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা গড়ে তোলা এবং ডিজিটাল যুগের ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ বিবেচনায় তাদের মধ্যে ডিজিটাল প্রযুক্তির নিরাপদ, নৈতিক ও দায়িত্বশীল ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি শিশু যেন নিরাপদ পরিবেশে বেড়ে ওঠে এবং সহিংসতা, অপব্যবহার, অবহেলা ও শোষণ থেকে সুরক্ষিত থাকে তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে ইউনিসেফ। ইন্টারনেট শিশুদের শিক্ষা ও বিকাশের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। অন্যদিকে, ইন্টারনেটে এমন অনেক ক্ষতিকর আধেয় (কনটেন্ট) থাকে যা শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং অনলাইনে হুমকির মত ঘটনাও ঘটতে পারে। তাই শিশুদের জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
এই কর্মসূচির মাধ্যমে অষ্টম ও নবম শ্রেণির ৪২ লাখ শিক্ষার্থীসহ সারাদেশের এক কোটির বেশি শিক্ষার্থী উপকৃত হবে। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রতিবন্ধি শিশুসহ ডিজিটাল শিক্ষা অর্জনে পিছিয়ে থাকা মোট ১০ লাখ ঝুঁকিপূর্ণ শিশুকে সহায়তা করার বিষয়টি প্রকল্পে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ ছাড়া, অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির আরও ৬০ লাখ শিক্ষার্থীকে তাদের বয়স অনুযায়ী সাইবার নিরাপত্তা ও ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
অনলাইন নিরাপত্তার গুরুত্ব তুলে ধরতে এই প্রকল্পে ২৫ হাজার শিক্ষক এবং ২০ লাখ অভিভাবক ও বাবা-মাকে যুক্ত করা হবে, যাতে তারা অনলাইন নিরাপত্তা সম্পর্কে অর্জিত জ্ঞান গোটা সমাজে ছড়িয়ে দিতে পারেন।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান বলেন, অনলাইন নিরাপত্তা এবং ডিজিটাল সাক্ষরতাকে আমাদের শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্তিকরণ নিশ্চিত করা আমাদের শিশুদের নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য একটি অঙ্গীকার। কীভাবে নিরাপদে এবং দায়িত্বশীলভাবে ডিজিটাল জগতে বিচরণ করতে হয়, তা শেখানোর মাধ্যমে আমরা প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তোলার পাশাপাশি প্রযুক্তির পূর্ণ সম্ভাবনা ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখি। এক্ষেত্রে, একই সঙ্গে আমরা তাদের সুরক্ষা ও সুস্থতা নিশ্চিতেও কাজ করি।
তিনি আরও বলেন, এমন একটি বৈশ্বিক অংশীদারত্বে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করার জন্য ইউনিসেফের প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। অনলাইনে শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব রয়েছে। আর এই মহৎ কাজে অবদান রাখতে এগিয়ে আসার এখনই সময়।
টেলিনর এশিয়ার হেড অব সাসটেইনিবিলিটি ইয়োহ্যান মার্টিন সিল্যান্ড বলেন, কানেক্টিভিটির সুযোগ ও সম্ভাবনা উন্মোচনে ডিজিটাল দক্ষতা ও অনলাইন সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই উদ্যোগটিকে পরিসর, ব্যাপ্তি এবং প্রভাবের দিক থেকে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে টেলিনর এশিয়া, গ্রামীণফোন ও ইউনিসেফর একসাথে কাজ করা এক অনন্য উদাহরণ তৈরি করবে। প্রযুক্তি বেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। এর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে এবং বর্তমানের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভবিষ্যতের ডিজিটাল বিশ্বে নিজেদের সুরক্ষায় সবারই ডিজিটাল দক্ষতা তৈরি ও বিকাশের সুযোগ প্রয়োজন।
টেলিনরের গ্লোবাল পার্টনারশিপ কর্মসূচির আওতায় ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ ও অনলাইনে ঝুঁকি মোকাবিলার বিষয়ে শিশু, বাবা-মা ও সেবা প্রদানকারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এবং কিশোর-কিশোরীদের তাদের কমিউনিটির জন্য ডিজিটাল ইনফ্লুএন্সার হিসাবে গড়ে তুলতে ২০১৯ সাল থেকে ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও গ্রামীণফোন একসঙ্গে কাজ করছে। ওই কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশে দুই কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী, শিক্ষক, বাবা-মা এবং অভিভাবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এই উদ্ভাবনী পার্টনারশিপ, বাংলাদেশে তরুণদের ডিজিটাল অঙ্গনসহ সার্বিক ক্ষমতায়ন ও সুরক্ষায় গ্রামীণফোন ও টেলিনরের দৃঢ় প্রতিশ্রুতিরই এক দৃষ্টান্ত। ইউনিসেফ আরও টেকসই ভবিষ্যত গড়ার লক্ষ্যে তরুণদের সঙ্গে কাজ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।