নিউজ ডেস্ক:
দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হাঁস, মুরগি, কোয়েল, কবুতরসহ বহু পাখি প্রতিপালন হচ্ছে। কিন্তু উটপাখিও যে এভাবে পালন করা যেতে পারে, সে বিষয়টি এতদিন বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। অথচ পৃথিবীর বহু দেশে উটপাখির খামার রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে উটপাখির মাংস, চামড়া ও পালকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
জনগণের আমিষের চাহিদা পূরণ করার জন্য পালন করা হবে উটপাখি। এর অংশ হিসেবে আফ্রিকা থেকে আনা ৭টি উটপাখি এখন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের খামারে চরে বেড়াচ্ছে। এর মধ্যে দুটি পুরুষ এবং পাঁচটি স্ত্রী। মূলত বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষের জন্য এ গবেষণাধর্মী প্রকল্পটি শুরু হয়েছে। সম্প্রতি সেখানে আরও ১৫টি উটপাখির বাচ্চা আনা হয়েছে।
পাখির মধ্যে উটপাখি আকারে বৃহত্তম এবং এদের ডিমও সর্বাপেক্ষা বড় হয়ে থাকে। সাধারণত ৪ বছর বয়সে এগুলো খাওয়ার উপযোগী হয়। আগে আফ্রিকা ও এশিয়া মাইনরে উটপাখির আবাসভূমি ছিল। পরে এরা আফ্রিকার উন্মুক্ত অঞ্চলের তৃণভূমিতে আবাস গড়ে এবং দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার মরুভূমি এলাকায় বিচরণ শুরু করে।
প্রকল্প সংশ্নিষ্টরা জানান, উটপাখির মাংস মুরগির মাংসের মতো। মুরগিকে প্রচুর দানাদার খাবার দিতে হয় বলে এর উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। কিন্তু উটপাখির খাবারের ৬০ শতাংশই ঘাসজাতীয় লতাপাতা। বাংলাদেশে লতাপাতার খরচ অনেক কম। তাই উটপাখির মাংসের উৎপাদন খরচ অনেক কম হবে।
উটপাখির ওজন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ কেজি পর্যন্ত হয়। ফলে একটা উটপাখি মাঝারি সাইজের তিনটি দেশি গরুর সমান মাংস দিতে পারে। একটা গরু থেকে বছরে একটার বেশি বাচ্চা পাওয়া যায় না। একটা পূর্ণবয়স্ক উটপাখি থেকে ২০-২৫টি বাচ্চা পাওয়া যেতে পারে।
প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ সাজেদুল করিম সরকার বলেন, আফ্রিকা থেকে আনা এসব উটপাখি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় পালন করা সম্ভব। বর্তমানে তারা পাখির দৈহিক বৃদ্ধির হার ও খাদ্যাভ্যাস দেখছেন। পাশাপাশি তিন মাস, ছয় মাস, নয় মাস ও ১২ মাসে এর মাংসের গুণাগুণ কেমন হয়, তাও পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে উটপাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটবে কিনা, তা জানতে তাদের আড়াই বছর অপেক্ষা করতে হবে। ইতোমধ্যে এক বছর পেরিয়ে দ্বিতীয় বছরে পৌঁছেছেন। মাদি উটপাখি ডিম দেওয়া শুরু করে আড়াই বছর পর।
এদিকে দেশে বেসরকারিভাবে উটপাখির খামার গড়ে তুলেছেন কয়েকজন উদ্যোক্তা। তারা বলছেন, উটপাখি আমাদের দেশের আবহাওয়ার জন্য বেশ উপযোগী। তাই বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট চেষ্টা করছে জাতটিকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের উপযোগী করে গড়ে তুলতে।
প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল জলিল বলেন, এই প্রকল্পটি ২০২০-২১ অর্থবছরে শুরু হয়। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে তারা প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। তাদের আশা, ওই সময়ে ভোক্তাদের জন্য উটপাখির মাংস বাজারজাত করতে পারবেন। এর উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় প্রতি কেজি ৩৩০-৩৪০ টাকায় ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাবে বলে মনে করছেন তিনি।