১৫টি ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা নাজুক ♦ পর্ষদ পুনর্গঠনের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
দেশের দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা শুরু হবে আগামী বছরের মার্চ মাস থেকে। তার আগে ওই সব ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা যাচাই করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার আগে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা প্রয়োজন। নামে-বেনামে বিতরণ করা বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ, তারল্য সংকটের সঙ্গে নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি রয়েছে দেশে কার্যত ১০ থেকে ১২টি ব্যাংকের। অবনতি দেখা দিয়েছে বাকি সব আর্থিক সূচকেও। এসব সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সেই আলোকে তৈরি করা হয়েছে নতুন ব্যাংক কোম্পানি আইন। এই আইন প্রয়োগ করে ব্যাংক খাতে সুশাসন ফেরাতে চায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য ‘প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্ক’ বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্বল ব্যাংকগুলোর সংকট কাটিয়ে তোলার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে এই ফ্রেমওয়ার্কটি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাসের গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্ক’ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে পরবর্তী ধাপগুলো অনুসরণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করতে পারবে। ব্যাংক কোম্পানি আইনের ক্ষমতা বলে ব্যাংকে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার একটি পথ নকশা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর লক্ষ্য হলো ২০২৬ সালের মধ্যে সার্বিক খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা। খেলাপি ঋণের বিপরীতে ১০০ ভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ। অবলোপনকৃত ঋণ আদায় ইউনিট চালু। সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠনের আইন চূড়ান্তকরণ। নমনীয়ভাবে ঋণ পরিশোধের সুবিধা বাতিল। ব্যাংকের আইন বিভাগকে শক্তিশালী করা ও ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের চিহ্নিত করা। পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ পদ্ধতি সংশোধন। একক গ্রাহক ঋণ সীমা নিশ্চিত করা। কর্মকর্তাদের পদোন্নতিতে পরীক্ষায় পাস বাধ্যতামূলক। এ বিষয়ে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আরএফ হোসেন বলেন, কোন ব্যাংক ভালো করছে আর কোন ব্যাংক খারাপ করছে সেটা একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চিহ্নিত করা হবে। কারণ সব ব্যাংকই এখন জানে খেলাপি ঋণ কত, আমানত কত, লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলে ভবিষ্যতে কী হতে পারে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই ভালো উদ্যোগটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দেবে। সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে কম করে হলেও ১৫টি ব্যাংকের অবস্থা দুর্বল। এগুলোর সংস্কার করতে হতে পারে। তবে এই কার্যক্রমে ব্যাংকের আমানতকারী ও কর্মীরা যাতে কোনো ধরনের ঝুঁকিতে না পড়ে সেটাও নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। যা বিতরণ করা ঋণের ৯ শতাংশ। এসব ঋণের বেশির ভাগই ব্যাংকের কতিপয় পরিচালকের বেনামি ঋণ। যা যুগের পর যুগ ধরে খেলাপি। আদায় করতে না পারায় অনেক ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। আমানত সংকটে ভুগছে। ব্যর্থ হয়েছে প্রভিশন সংরক্ষণে।
সার্বিক বিষয় আমলে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে।