রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪
নীড় পাতা / উত্তরবঙ্গ / দুর্নীতিতে হাবুডুবু খাচ্ছে বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিস 

দুর্নীতিতে হাবুডুবু খাচ্ছে বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিস 

নিজস্ব প্রতিবেদক বড়াইগ্রাম ,,,,,,,,,,,,নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্ধের প্রতিটি খাতেই অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অফিসের কর্মচারীদের দিয়ে কৃষি অফিসকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করছেন কৃষিবীদ শারমিন সুলতানা। কৃষকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের বরাদ্ধ এনে তা প্রকৃত কৃষকদের বঞ্চিত করে তার পছন্দের লোকদের দেন। এতে প্রকৃত কৃষক এই সুবিধা থেকে  বঞ্চিত হয়। এছাড়াও প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনীর নামে কৃষকদের নামমাত্র নাস্তা ও সামান্য নগদ টাকা ধরিয়ে দিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর ও টিপসই নিয়ে বিদায় করা হয়। এজন্য দুর্নীতির অভয় আশ্রম বানিয়েছেন এ কর্মকর্তা। অভিযোগ উঠেছে, কৃষক প্রশিক্ষণ, মাঠ দিবস, প্রদর্শনী, কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বরাদ্ধসহ বিভিন্ন খাতের বরাদ্ধ সিংহভাগই লুটপাট হয়েছে । তারা কৃষকদের নিয়ে একটি মাঠ দিবসের অনুষ্ঠান করে ব্যানার টানিয়ে ছবি তুলেই বরাদ্ধের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এসব অভিযোগের সত্যতার খোঁজে উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নে গিয়ে জানা যায়, একটি প্রদর্শনীতে গত খরিপ-২ ( ২০২৩-২৪ ) মৌসুমের সময় চাষাবাদকৃত ব্লক প্রদর্শনীর রোপা আমন ধান প্রদর্শনীতে কৃষকদের জন্য যে বরাদ্দ আসে তা কৃষকদের না দিয়ে ভিন্ন কৌশলে আত্মসাৎ করে ফেলে। বিভিন্ন এলাকার প্রদর্শনীতে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষকদের জন্য বরাদ্ধের চার ভাগের তিন ভাগই চলে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ শারমিন সুলতানার পকেটে। সরকারি বরাদ্ধের এক-চতুর্থাংশও কৃষকরা পাচ্ছেনা। অফিসের যন্ত্রপাতি (মেশিন) থেকে শুরু করে প্রতিটি খাত কৃষি কর্মকর্তার বাণিজ্যে পরিনত হয়েছে। আরও অভিযোগ আছে, আওয়ামীলীগ সরকার আমলে তিনি তিন জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কে বিএনপি, জামাত, শিবির বলে মিথ্যা অভিযোগ এনে তাদের অন্য জেলায় বদলি করিয়ে দেন । এতে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও চলতি বছরের গত ২২ আগস্ট ছয় মাসের জন্য মাতৃকালীন ছুটিতে থাকলেও অফিসের অর্থনৈতিক কার্যক্রম তিনি নিজেই পরিচালনা করেন, নিয়ম অনুসারে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বরত সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহাদী হাসান কে সকল দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হলেও অর্থনৈতিক বিষয়টি নিজেই ভাড়া বাড়ি থেকে দেখভাল করেন বলে জানা যায়। শুধু তাই নয়, বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া তথ্য ও ভিডিও র মাধ্যমে অভিযোগ উঠেছে অফিস চলাকালীন সময়ে নিজ দায়িত্ব ভুলে গিয়ে অফিস কক্ষেই মদ্যপান করে নাচানাচি  করছেন তিনি। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, সাবেক মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হাবিবা খাতুন সহ অফিসের ২/১ জন কর্মকর্তা কর্মচারীকে নিয়ে নাচানাচি করছেন দুর্নীতিগ্রস্ত কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা। 

এ সকল বিষয়ে অভিযুক্ত কৃষিবিদ শারমিন সুলতানা কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন , কোন অনিয়ম হয়নি, সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন। মদ খেয়ে নাচানাচির বিষয়ে তিনি বলেন, ওটা মদ ছিলনা, কোক ছিল। অফিস চলাকালীন নাচানাচির বিষয়ে তিনি সদূত্তর দিতে পারেননি। 

অপর দিকে  উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌর সভায় রাসায়নিক সারের দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু কিছু সার ব্যবসায়ী। সিন্ডিকেটের কারণে কৃষকদের বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে। উপজেলার আমন চাষিরা সার কিনতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন পদক্ষেপ নিলেও কোন অদৃশ্য কারণে সারের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না তারা। ফলে ভরা আমন মৌসুমে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কৃষকরা আক্ষেপ করে বলেন, খোলাবাজারে সারের লাগামহীন দাম বাড়ার পরও আমরা জানিয়েছি, তারপরও এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে বিক্রয়ের রশিদ ছাড়াই ইচ্ছেমতো সারের দাম নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

কিছু ব্যবসায়ী সার সঙ্কটের অজুহাত দিয়ে সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক হারে বিভিন্ন ধরনের সার বিক্রি করছে উপজেলার ধানাইদহ, রাজাপুর, আহমেদপুর, বনপাড়া, বড়াইগ্রাম, জোনাইল সহ ছোট ছোট কীটনাশকের দোকানে সরকার নির্ধারিত মূল্যের তোয়াক্কা না করে প্রায় দ্বিগুন দামে সার বিক্রি করছে। 

ইউরিয়া প্রতি বস্তা সরকারিভাবে ১৩৫০ টাকা করে বিক্রি করার কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১৪০০-১৭০০ টাকায়। টিএসপি বিক্রি করার কথা ১৩৫০ টাকায় কিন্তু বিক্রি করছে ২০০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকায়, পটাশিয়াম ১০০০টাকায় বিক্রি করার কথা কিন্তু  ১১০০-১২০০টাকা করছে , ডি এ পি বিক্রি করার কথা ১০৫০ টাকা কিন্তু বিক্রি করছে ২০০০-২২৫০ টাকায়। বড়াইগ্রাম উপজেলায় সরকারিভাবে সার বিক্রি করার জন্য বিসিআইসির ডিলার ১১ জন এবং বিএডিসির ডিলার ২২ জন। এসব ডিলার সরকারিভাবে সার পেলেও তারা কোনো কৃষকের কাছে সরকারি দামে সার বিক্রি করেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। বেশি দামে সার বিক্রি করেন কিন্তু কোন রশিদ দেননা ব্যবসায়ীরা। বেশির ভাগ সারের দোকানে কোনো মূল্য তালিকাও টানানো নেই। 

এ বিষয়ে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাহদি হাসান জানান, তার জানা মতে এই উপজেলাতে কেউ সারের দাম বেশি নিচ্ছে না। যদি কেউ নেয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ সকল বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, নিয়মিত বাজার মনিটরিং অব্যাহত আছে, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো জানান, কৃষি অফিসের দুর্নীতির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে, প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

আরও দেখুন

লালপুরে কুরেছান বেগমের ইন্তেকাল 

নিজস্ব প্রতিবেদক লালপুর,,,,,,,,,,,,,,দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার নাটোরের লালপুর প্রতিনিধি ও মডেল প্রেসক্লাবের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সাহীন …