♦ বেঁচে যাবে রিজার্ভের অর্ধেক ডলার ♦ কারেন্সি সোয়াপ নিয়ে কাজ করছে দুই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ♦ নেওয়া হবে বাংলাদেশ ব্যাংক এনবিআরের মতামত
দ্বিপক্ষীয় লেনদেনে ডলারের চাপ কমাতে রুপিতে বাণিজ্যের দিল্লির প্রস্তাবের বিপরীতে টাকায় বাণিজ্যের প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা। বলেছে, আন্তর্জাতিক লেনদেনে ভারতীয় মুদ্রা রুপি অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলে টাকাকেও বিনিময় মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে দিল্লিকে। এ প্রস্তাব নিয়ে এখন কাজ করছে দুই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে রুপিতে লেনদেনের প্রস্তাব দেয় ভারত। তখন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি রুপির বিপরীতে টাকায় লেনদেনের প্রস্তাব দেন। এখন দুই পক্ষ বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) নূর মো. মাহবুবুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে ওরা বলেছে, যেহেতু ডলারের সংকট আছে, রুপিতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য করা যায় কি না। আমাদের প্রস্তাব ছিল, রুপিতে হলে ‘গিভ অ্যান্ড টেক’ হবে। অর্থাৎ তাদের বাণিজ্য তারা যদি রুপিতে করে আমাদের বাণিজ্য হবে টাকাতে। এটা রুপি থেকে ডলার, বা ডলার থেকে রুপিতে কনভার্টেবল না হয়ে, রুপি থেকে টাকা এবং টাকা থেকে রুপিতে কনভার্ট হবে। এটা করলে ডলারের চাপ কিছুটা কমবে।’
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মোট মজুদের অর্ধেকেরও বেশি। দুই দেশের মধ্যে টাকা-রুপিতে লেনদেন প্রক্রিয়া চালু হলে রিজার্ভের প্রায় অর্ধেক পরিমাণ ডলার বেঁচে যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সোমবার এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় পরিশোধের পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। গত ৪ জানুয়ারি রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৩ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। মাত্র দুই মাসের দায় পরিশোধে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি মজুদ ব্যয় হয়েছে। এই দায়ের প্রায় সবটাই ভারত থেকে আমদানি ব্যয়। অল্প কিছু দায় আছে পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ইরান ও মালদ্বীপের। বাংলাদেশসহ এই দেশগুলো আকুর সদস্য। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের প্রধান মুদ্রা মার্কিন ডলার ও ইউরোতে আকুর দায় পরিশোধ করা হয়। ভারতের সঙ্গে যদি রুপি-টাকায় লেনদেন হয়, তবে আকুর পেমেন্ট বাবদ দুই মাস পর পর ডলার ও ইউরোতে যে এক থেকে দেড় বিলিয়ন ডলার দায় পরিশোধ হয়, সেটি ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে। এতে ডলারের ওপর চাপ অনেকাংশে কমে যাবে। তবে ডলার বাদ দিয়ে টাকা-রুপিতে বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কতটা সক্ষম, এখন সেটাই খতিয়ে দেখছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কর্মকর্তারা জানান, দুই দেশের মধ্যে বর্তমানে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ভারতের রপ্তানির পরিমাণ ১৬ বিলিয়ন ডলার, বিপরীতে বাংলাদেশের রপ্তানি ২ বিলিয়ন ডলার। দেখা যাচ্ছে, ভারতের প্রস্তাব অনুযায়ী কারেন্সি সোয়াপে যাওয়ার পর বাংলাদেশ ভারতে পণ্য রপ্তানি করে সর্বোচ্চ ২ বিলিয়ন রুপি অর্জন করবে; অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশে রপ্তানি করে পাবে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার। ভারতের এই দায় রুপিতে পরিশোধ করতে গেলে বাংলাদেশ হাতে থাকা সর্বোচ্চ ২ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ রুপি দিতে পারবে। ঘাটতি থাকবে আরও ১৪ বিলিয়ন ডলারের দায়। সেই ১৪ বিলিয়ন ডলারের দায় কি বাংলাদেশ ডলার দিয়ে রুপি কিনে পরিশোধ করবে? ভারতের সঙ্গে কারেন্সি সোয়াপের বিষয়ে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই রুপির বিপরীতে টাকায় লেনদেনের প্রস্তাবের বিষয়টি এসেছে। লেনদেনের এই যে গ্যাপ, এখানেই টাকা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে বলে মনে করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। নূর মো. মাহবুবুল হক বলেন, ‘আমি নিশ্চয় ডলার দিয়ে রুপি কিনে সেই রুপিতে লেনদেন করব না। এ কারণে আমরা (ভারতকে) বলেছি, তোমরা প্রস্তাব পাঠাও, আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর সেটার সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করে দেখবে।’