নিউজ ডেস্ক:
আগামী ২৯ অক্টোবর উত্তরা থেকে মতিঝিলে যাবে বৈদ্যুতিক ট্রেন ‘মেট্রো’। ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটারের দূরত্ব ১৭টি স্টেশনে থেমে পাড়ি দেবে ৪০ মিনিটে। ১০০ কিলোমিটার গতিবেগের এ ট্রেন উভয় দিকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার করে দিনে পাঁচ লাখ যাত্রী পরিবহন করবে। কিলোমিটারপ্রতি গড়ে ৫ টাকা ও এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনে সর্বনিম্ন ২০ টাকা ভাড়া গুনতে হবে।
মেট্রোরেল পুরো চালু হলে কমবে যানজট ও বায়ুদূষণ। সাশ্রয় হবে দিনে ৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। যানবাহন পরিচালনা খরচ দিনে ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা কমবে। এ করিডরে যানবাহনের সংখ্যা কমায় বছরে ২ লাখ ২ হাজার ৭৬২ টন কার্বন নিঃসরণ কমবে।
মেট্রোর মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার অংশের কাজ শেষ করার টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৫ সালের জুন।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৯ অক্টোবর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অংশের উদ্বোধন করবেন।’ তিনি বলেন, ‘উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ চালু হলে মেট্রোরেলে চলাচল বাড়বে। নগরবাসী গাড়ি ছেড়ে মেট্রোতে চলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন। মেট্রোরেল চালু হলে শহরের যানজট ও বায়ুদূষণ কমবে। দ্রুতগতির ট্রেনে চলাচলের ফলে কর্মঘণ্টার সাশ্রয় ও গাড়ি চলাচল কমার ফলে কার্বন নিঃসরণ কমবে। এখন বাসে বা প্রাইভেট গাড়িতে উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। মেট্রোরেলে সে দূরত্ব মাত্র ৪০ মিনিটে পাড়ি দেওয়া যাবে।’
মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সংশ্লিষ্টরা জানান, সূচি অনুযায়ী উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগারগাঁও থেকে ট্রেনে চড়ে মতিঝিল যাবেন। সেখানে নামফলক উন্মোচন করবেন। এরপর ট্রেনে চড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রো স্টেশনে নেমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সুধী সমাবেশে বক্তৃতা করবেন।
ঢাকার যানজট নিরসন ও পরিবেশের উন্নয়ন করতে ২০৩০ সালের মধ্যে ছয়টি মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রথম প্রকল্প মাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি)-৬। উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এ প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার অংশের উদ্বোধন করেন গত বছর ২৮ ডিসেম্বর। শুক্রবার ছাড়া উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করছে। এ অংশে দৈনিক ৮০ হাজার যাত্রী চলাচল করছে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশও একই নিয়মে চলবে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ চালুর পর প্রথমে ফার্মগেট, সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশনে যাত্রী ওঠানামা করতে পারবে। পরে ধাপে ধাপে অন্য স্টেশনগুলো চালু করা হবে।
এমআরটি-৬-এ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপানের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আর বাংলাদেশ সরকারের বিনিয়োগ ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এমআরটি-৬ প্রকল্পের আওতায় উত্তরা সেন্টার স্টেশনসংলগ্ন ২৮ দশমিক ৬১ একর জমিতে টিওডি বা বহুমুখী বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। টিকিটের টাকা ও ওই টিওডির টাকায় এমআরটি-৬ প্রকল্প পরিচালনা করা হবে। এ ছাড়া উত্তরা উত্তর, আগারগাঁও, ফার্মগেট ও কমলাপুরে স্টেশন প্লাজা গড়ে তোলা হবে। এসব প্লাজায় বিভিন্ন বাণিজ্যিক কার্যক্রম থাকবে।
১৭ স্টেশন : এমআরটি-৬-এর ১৭ স্টেশনের মধ্যে রয়েছে উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, মতিঝিল ও কমলাপুর।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ঢাকার যানজট নিরসনে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (এসটিপি) সুপারিশ কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়। প্রথমে ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর একনেকে এমআরটি-৬ প্রকল্প অনুমোদন করে। মেট্রোরেলের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে ২০১৩ সালের ৩ জুনে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি (ডিএমটিসিএল) গঠন করে। ঢাকা ও আশপাশের এলাকার পরিবহনব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে ২০০৫ সালের এসটিপি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। সংশোধিত ২০১৫-৩৫ মেয়াদের এসটিপিতে ছয়টি মেট্রোরেল প্রকল্প যুক্ত করে। সব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক দাঁড়াবে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। উড়ালে ৬৯ কিলোমিটার এবং পাতালে ৬১ কিলোমিটার। যানজটে ঢাকার বার্ষিক ক্ষতি ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা)। মেট্রোরেল পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে রাজধানীবাসীর জীবনে ভিন্নমাত্রা ও গতি যোগ হবে, কর্মসংস্থান বাড়বে এবং জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়বে; সময়সাশ্রয়ী যানে চলাচল করবে ৫০ লাখ মানুষ। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুসরণ করে এ যান নারী, শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী সবার উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে।