নিজস্ব প্রতিবেদক, হিলি:
দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাসুদুল হাসান কতৃক অবৈধ সিন্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতির নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছে উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি (এসএমসি)।
মঙ্গলবার বিকেলে হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি হারুন উর রশীদ এর নিকট তার কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন হাকিমপুর উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি(এসএমসি) এর সভাপতিগন। সেই সাথে এর অনুলিপি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক, রংপুর বিভাগের উপ-পরিচালক, হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এর নিকট পাঠিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বিভিন্ন সময়ে সরকার উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজের জন্য দুই কিস্তিতে বরাদ্দের টাকা এবং অন্যান্য সংস্কারের টাকা প্রদান করেন। আমরা বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি পিও অন্যান্য টাকার ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী কাজ করতে পারিনা।
এসএমসি সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে বিবেধ সৃষ্টির লক্ষ্যে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নির্বাহী ভুমিকা রাখেন। এই কারনে আমরা কোন সিন্ধান্ত নিতে পারিনা। বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের কি কাজ করবো না করবো এ সকল সিন্ধান্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার প্রধান শিক্ষককে বলে দেন। প্রধান শিক্ষক অসহায় ও নিরুপায় হয়ে আমাদের কাছে অনুরোধ করে বিল ভাউচারে সাক্ষর করে নেন। প্রধান শিক্ষককে রেজুলেশনের ব্যাপারে জিঙ্গাসা করিলে বলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বলে দিয়েছে কিভাবে রেজুলেশন করতে হবে, এর বাহিরে কোন কিছুই করা যাবেনা। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের এহেন কর্মকান্ড সরকারের পরিপত্রের পরিপন্থি। আমরা সভাপতিসহ এসএমসির সদস্যবৃন্দ কাঠের পুতুলে পরিণত হয়েছি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের অবৈধ সিন্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার হাত থেকে আমাদের রক্ষা করতে সেই লিখিত অভিযোগে জানানো হয়।
হাকিমপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাসুদুল হাসান বলেন, ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশন ছাড়া আমরা একটা ভাউচারেও হাত দেই না কখনো। রেজুলেশন দেখে তারা যেটা ডিমান্ড দিয়েছে কিকি কাজ করবে না করবে সেটার সাথে যখন ভাউচারে মিল পাইছি ওইটার প্রেক্ষিতেই আমরা দিয়েছি, এর বাহিরে তো কখনই দিয়নি আমরা। যার যার প্রয়োজন অনুযায়ী তারা রেজুলেশন করে ওইভাবে তারা প্লান দিয়েছে সেই প্লান অনুযায়ি আমরা অনুমতি দিয়েছি। করোনাকালে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে আমার কাজ নিয়ে অনেক রিপোর্ট হয়েছে, পুরষ্কার পেয়েছি এটিই হয়তোবা অনেকের গা-জ্বালা করেছে এটি সম্পুর্ন অবান্তর।
হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি (এসএমসি) গন আমার নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাদের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাদের নিকট বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে বিল ভাউচারে স্বাক্ষর নেন। কোন মিটিং না করেই অনুরোধ করে রেজুলেশনে স্বাক্ষর নেন এবং অনেকটা তাড়াহুড়া করে স্বাক্ষর নেন যে দ্রæত স্বাক্ষর না করলে টাকাটা ফেরত যাবে। আমাদের মিটিং হলোনা কোন সিন্ধান্ত হলোনা তাহলে আমাদের কি বিল ভাউচারে স্বাক্ষর নিচ্ছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাসুদুল হাসান এমন সিন্ধান্ত নাকি তাদের দিয়ে দেয় সব সময়। আসলে উনি যদি সিন্ধান্ত দিয়ে থাকে তাহলে সরকারি যে পরিপত্র রয়েছে তাহলে সেটি এর পরিপন্থি।
কারন সরকার স্পষ্ট আকারে বলে দিয়েছে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি (এসএমসি) রয়েছে সরকারি সকল বরাদ্দের অর্থ সেই কমিটি বাস্তবায়ন করবেন। এসএমসি বলতে সভাপতি প্রধানশিক্ষকসহ সকল সদস্য রয়েছে তারা সকলে মিলে এটি বাস্তবায়ন করবেন। এখানে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এমনকি কেন্দ্রীয়ভাবে মৌখিক কোন সিন্ধান্ত দেওয়ার সুযোগ নেই। আর যদি এমটি করেই থাকেন প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশনা দিয়েই থাকেন তাহলে সেটি সে অন্যায় করেছে সে আসলে কাজটি ঠিক করেনাই। আমি নিজেও দুয়েকজন প্রধান শিক্ষকের নিকট শুনেছি যে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তাদের নির্দেশনা প্রদান করে। আমাদের নিকট যেহেতু লিখিত অভিযোগ দিয়েছে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে অভিযোগ সত্য প্রমানিত হয় তাহলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করবো।
দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার রায় চৌধুরী জানান, হাকিমপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগটির বিষয়ে আমিও জানতে পেয়েছি। এবিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও শিক্ষা অফিসারের সাথে আমার কথা হয়েছে, তারা অচিরেই সকল বিদ্যালয়ের এসএমসি দের সাথে সমাধানে বসবেন। যদি পরবর্তীতে সমাধান না হয় তাহলে আমরা এর ব্যবস্থা গ্রহন করবো। আর বিদ্যালয়ের অনুকুলে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যায় ও কাজ করার দায়ীত্ব সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের কমিটির এখানে আমাদের শুধু কাজটি দেখাশোনা করার দায়ীত্ব এর বাহিরে কিছু নয়।