নিউজ ডেস্ক:
দারিদ্র্য বিমোচনকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের ব্যয়ের আকার পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে থাকবে পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়। তবে উন্নয়ন খাতের প্রস্তাব অবশ্য সরকারের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে মিল বা সামঞ্জস্য থাকতে হবে। পাশাপাশি রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা এবং সম্ভাব্য ব্যয়সীমাও পাঠাতে বলা হয়েছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসব তথ্যসহ প্রস্তাব জমা দিতে হবে অর্থ বিভাগে। এসব নির্দেশনা দিয়ে সোমবার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অর্থ বিভাগ এরই মধ্যে আগামী বাজেটের একটি সম্ভাব্য কাঠামো প্রণয়ন করেছে। সেখানে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭৫ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি বাজেটে মোট ব্যয় হলো ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। অর্থাৎ, টাকার অঙ্কে ৭১ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা বাড়ছে আগামী বাজেট। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য ব্যয় ৪ লাখ ২৫ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। চলতি এডিপির আকার ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা।
সবকিছু অনুকূলে থাকলে আগামী অর্থবছরে সরকার মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রার সম্ভাব্য আকার
নির্ধারণ করেছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার
কোটি টাকা। যার মধ্যে রাজস্ব আদায়ের অঙ্ক ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ১ শতাংশ।
অর্থ বিভাগের নির্দেশনায় বলা হয়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সম্পদের ভিত্তিতে বাস্তবসম্মত ব্যয় পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে দারিদ্র্য নিরসন, নারী উন্নয়ন ও জলবায়ু সংক্রান্ত কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এছাড়া প্রাথমিক পরিকল্পনা ব্যয়সীমা ২০২২-২৩ নির্ধারণের পাশাপাশি ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়সীমা নিরূপণ করতে হবে।
রাজস্ব আহরণের প্রসঙ্গে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যমেয়াদি কী পরিমাণ সম্পদ পাওয়া যাবে, এ সম্পর্কে আগাম ধারণা দিতে হবে প্রস্তাবে। এই সম্পদের ওপর ভিত্তি করে বাজেট কাঠামো প্রস্তুত করতে হবে। সেখানে আরও বলা হয়, ব্যয় প্রণয়নের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে। কারণ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক সহায়তা কমলে ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, তেমনই বৈদেশিক সহায়তা বাড়লে ওই মন্ত্রণালয়ের ব্যয় কমবে।
সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া এরই মধ্যে অর্থ বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য একটি সম্ভাব্য ব্যয়সীমা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ব্যয় আকার হচ্ছে ৪ হাজার ৯৭ কোটি টাকা। এ অর্থের মধ্যে দারিদ্র্য বিমোচনে ১ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা এবং নারী উন্নয়নে ৭৪৯ কোটি টাকা ব্যয় হবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে আগামী অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হবে ৭৩১ কোটি টাকা। তবে এ অর্থের মধ্যে দারিদ্র্য বিমোচনে কর্মসূচি থাকবে ৬৮১ কোটি টাকার এবং নারী উন্নয়নে থাকবে ২৭৬ কোটি টাকা। একইভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সম্ভাব্য ব্যয় সিলিং হচ্ছে ১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। এই অর্থের মধ্যে দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যয় হবে ৬৯৮ কোটি টাকা এবং নারী উন্নয়ন খাতে ব্যয় হবে ১৩৩ কোটি টাকা।
এছাড়া অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় সিলিং হচ্ছে ৪০ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা, আইন ও বিচার বিভাগে সম্ভাব্য ব্যয় সিলিং ১ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা, জননিরাপত্তা বিভাগে ২৪ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যয়সীমা হলো ২৮ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা।
পাশাপাশি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিভাগে সম্ভাব্য ব্যয়সীমা ধরা হয়েছে ৪০ হাজার ১৩৫ কোটি, স্বাস্থ্য বিভাগে ২৮ হাজার ৫০৫ কোটি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ৮ হাজার ৯৭০ কোটি, স্থানীয় সরকার বিভাগে ৪১ হাজার ৫৭২ কোটি এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে ৭১২ কোটি টাকা।
এছাড়া জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের ২ হাজার ২৯৫ কোটি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ১৭ হাজার ৮২১ কোটি, খাদ্য মন্ত্রণালয়ে ২১ হাজার ৬২১ কোটি, রেল মন্ত্রণালয়ে ১৮ হাজার ৯৪৭ কোটি, বিদ্যুৎ বিভাগে ২৬ হাজার ৬৬৭ কোটি, স্বাস্থ্যশিক্ষায় ৭ হাজার ৪৯৮ কোটি এবং সেতু বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৮০২ কোটি টাকা ব্যয়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।