নিউজ ডেস্ক:
আওয়ামী লীগে নারী নেতৃত্ব বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নারী নেতৃত্ব আরও বিকশিত হোক আমি এটা চাই। বিভিন্ন নির্বাচনে যোগ্য নারী প্রার্থী পাওয়া গেলেই মনোনয়ন দেব। শুধু সংসদ নির্বাচন নয়, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন ফোরামে নারী নেতৃত্ব বাড়াতে হবে। এ সময় কেন্দ্রীয় কমিটিসহ জেলা-উপজেলাতে নারী নেতৃত্ব বাড়ানোর তাগিদ দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথ সভায় তিনি এ কথা বলেন।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে গিয়ে নারী নেতৃত্ব বাড়ানোর তাগিদ দেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই আসনে মনোনীত হওয়ার লক্ষ্যে ১১ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য অধ্যাপক মেরিনা জামান কবিতাও ছিলেন। কবিতার মনোনয়ন চূড়ান্ত করার পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নারী নেতৃত্ব বাড়াতে হবে। সংসদ কিংবা যে কোনো নির্বাচনে যোগ্য নারী পেলে আমি মনোনয়ন দিয়ে দেব। শুধু জনপ্রতিনিধিই নয়, বিভিন্ন ফোরামেও নারী নেতৃত্ব বিকশিত হোক আমি এটাই প্রত্যাশা করব। অন্যদিকে এ আসনের শক্ত প্রার্থী চয়ন ইসলামের বিষয়টি উঠলে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চয়ন তো এমপি ছিলেন। এখন জেলার রাজনীতি করবেন। নারী নেতৃত্ব তো বিকশিত করতে হবে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথ সভায় আমির হোসেন আমু, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওবায়দুল কাদের, কাজী জাফরউল্লাহ, ড. আবদুর রাজ্জাক, কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, রশিদুল আলম প্রমুখ।
বৈঠক সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া ৩০ শতাংশ নারী নেতৃত্ব বাস্তবায়ন করতে উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সে কারণে আগামীতে দলের জাতীয় কাউন্সিলে নারী নেতৃত্ব বাড়ানো, জেলা-উপজেলার কমিটির সময়ে যোগ্য নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া নারী নেতৃত্ব বাড়াতে আমরা উদ্যোগী হব। এ ছাড়াও নারীদের নেতৃত্বে আনলে নারী-পুরুষের বৈষম্যও দূর হবে। এ জন্য যোগ্য নারীদেরই মনোনয়নসহ কমিটিতে রাখার তাগিদ দেন দলীয় প্রধান।
আগের বিদ্রোহী ও অভিযুক্তদের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি : বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সদস্য জানান, মনোনয়ন বৈঠকে প্রার্থীদের প্রতিটি জীবনবৃত্তান্তকে গুরুত্বসহকারে দেখা হয়েছে। সেখানে বর্তমানে চেয়ারম্যানদের মধ্য থেকে দুর্নীতিবাজদের মনোনয়ন না দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া, নানা কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে তাদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে ইউনিয়ন পরিষদে বর্তমান চেয়ারম্যানদের অনেককেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। বিগত সময়ে যারা বিদ্রোহী হয়ে জিতেছেন, এবারও প্রতীক নৌকা চেয়েছেন তাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
দুই উপজেলা ও ১০ পৌরসভায় মনোনয়ন পেলেন যারা : বৈঠকে সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের উপনির্বাচন, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদ এবং ২টি উপজেলা ও ১০টি পৌরসভায় দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। উপজেলার মধ্যে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় মো. রেজাউল করিম মন্টু, টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলায় মোছা. নার্গিস বেগমকে মনোনীত করা হয়। দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট পৌরসভায় মো. ইউনুছ আলী, নীলফামারী জেলার ডোমারে গণেশ কুমার আগরওয়ালা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মো. মোখলেসুর রহমান, বগুড়া জেলার সোনাতলায় মো. শাহিদুল বারী খান, নড়াইল জেলার লোহাগড়ায় সৈয়দ মসিয়ূর রহমান, নরসিংদী জেলার ঘোড়াশালে মো. আল মুজাহিদ হোসেন, কিশোরগঞ্জ পাকুন্দিয়া পৌরসভায় মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম আকন্দ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা মো. গোলাম হাক্কানী, ফেনীর ছাগলনাইয়া মোহাম্মদ মোস্তফা, খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়ে মো. রফিকুল আলম (কামাল)। এ ছাড়া দুই ইউনিয়ন পরিষদের প্রার্থিতা ঘোষণা করা হয়েছে। তারা হলেন- মোরেলগঞ্জ উপজেলার খাউলিয়া মো. সাইদ রহমান, রামপাল উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নে মোসা. সুলতানা পারভীনকে নৌকার মাঝি করা হয়।