নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নের জন্য দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উন্নয়নের প্রতি নজর দেওয়ার কথা বলেছেন এবং উন্নয়নের একটি কাঠামো ঠিক করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর মতে, একা একা উন্নয়ন করা যায় না, দক্ষিণ এশিয়ার সবাই একসঙ্গে উন্নত হলেই বলা যাবে যে উন্নয়ন হয়েছে। এজন্য দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গেটওয়ে তথা মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটি হাব হিসেবে বাংলাদেশকে রূপান্তরিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে গোটা দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নে বাংলাদেশ কাজ করতে পারে, নেতৃত্ব দিতে পারে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন তার বাসভবনে দৈনিক সময়ের আলোর এই প্রতিনিধির সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃত্ব এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে এভাবেই মন্তব্য করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন অনেক সম্মানীয় স্থানে অবস্থান করছি। আগে বাংলাদেশ বললে মনে হতো দারিদ্র্যক্লিষ্ট একটি দেশ; কিন্তু এখন আর সে সুযোগ নেই। আমি নিজেই এখন টের পাই যে, কারও সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করলে এখন সঙ্গে সঙ্গেই সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। সামাজিকভাবে, সুশাসনসহ সবক্ষেত্রেই আমাদের মান অনেক বেড়েছে। এতে বিশ্ববাজারে আমাদের প্রতিযোগীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, ঠিক তেমনি শত্রুর সংখ্যাও বাড়ছে। এজন্য আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি ধরে রাখার জন্য করোনাকালেও নানাবিধ উদ্যোগ নিচ্ছি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা খুব ভাগ্যবান কারণ এ বছরে দুটি বড় বড় ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান করার সুযোগ পেয়েছি। এর মধ্যে গত মার্চে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে বিশ্বের সব রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান বার্তা পাঠিয়েছেন। এ ছাড়া ব্যক্তিবিশেষ যেমন রানী এলিজাবেথসহ অনেকেই বার্তা দিয়েছেন। আমাদের প্রতিবেশী পাঁচটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে সশরীরে বাংলাদেশ সফর করেছেন। করোনার মধ্যে ঝুঁকি নিয়েও পাঁচ দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান বাংলাদেশ সফরের পেছনের কারণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাদের বিশেষ শ্রদ্ধা আছে। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি বিশ্ব নেতাদের আস্থা আছে। আমি ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, আপনি যে এলেন, ফিরে গিয়ে আপনি এবং আপনার গোটা সফরসঙ্গীকে ২১ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে, যা বিগ সেক্রিফাইস। এরপরও আপনি এলেন কেন? তিনি বললেন যে, বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার মধ্যে আলাদা মোহ কাজ করে এবং বঙ্গবন্ধুর স্পিরিটকে তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তাই বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্মান জানাতে তিনি বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী আমাকে আরও বললেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা আছে। প্রধানমন্ত্রী যেখানে তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, সেখানে তিনি না এলে তা ভালো দেখায় না।’
‘পৃথিবীর মানুষ শেখ হাসিনাকে অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখেন’, উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, বিশ্বের ২০৬ জন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি আমাদের ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে শুভকামনা জানিয়েছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেটা দেশের উন্নয়নে ক্যাপিটালাইজ করতে চায়। এটা দিয়ে আমরা বিনিয়োগ বাড়াতে পারি, আমাদের রফতানি বাড়াতে পারি।
ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমরা উদ্যোগ নিয়েছি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে কানেক্টিভিটি বাড়িয়ে কীভাবে আমাদের দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং চাকরির বাজার বাড়ানো যায়। ভারতের সঙ্গে কানেক্টিভিটি বাড়িয়ে আমরা ফল পেয়েছি, স্থলসীমানা, পানি, সমুদ্রসহ দুদেশের অনেক কঠিন কঠিন অমীমাংসিত বিষয়ের নিষ্পত্তি ঘটেছে, এর জন্য একটা বুলেটও খরচ হয়নি। প্রতিবেশী ভুটান, নেপালসহ এ অঞ্চলের দেশের সঙ্গে আমরা যে সম্পর্ক উন্নয়ন করেছি, তা আমাদের অনেক সহায়তা করবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এভাবে আমরা দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গেটওয়ে তথা মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটি হাব হিসেবে বাংলাদেশকে রূপান্তরিত করতে চাই, যাতে গোটা দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নে বাংলাদেশ কাজ করতে পারে, নেতৃত্ব দিতে পারে।’