নিউজ ডেস্ক:
সম্প্রতি শূন্য হওয়া ৫টি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। সবাই যার যার কর্মকান্ড, অতীত ত্যাগ দলীয় হাইকমান্ডের দৃষ্টিতে আনার চেষ্টায় ব্যস্ত। তবে শেষবেলায় কার হাতে উঠবে নৌকার টিকেট এনিয়ে চলছে রুদ্ধশ্বাস আলোচনা।
শূন্য হওয়া ৫টি আসন হচ্ছে সিরাজগঞ্জ-১, ঢাকা-১৮, ঢাকা-৫, পাবনা-৪ ও নওগাঁ-৬ আসন। ইসি সূত্র অনুযায়ী, ৫টি সংসদীয় আসন ফাঁকা থাকলেও ঢাকা-১৮ ও পাবনা-৪ দুটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন তফসিল হতে পারে আজ রোববার। এ ছাড়া শূন্য থাকা ঢাকা-৫, সিরাজগঞ্জ-১, নওগাঁ-৬ আসন সম্পর্কে পরে সিদ্ধান্ত হবে।
ঢাকা-১৮ : প্রয়াত সাহারা খাতুনের এ আসনে আরেক নারী মুখকে নতুন এমপি হিসেবে দেখা যেতে পারে। তিনি হলেন
যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী নাজমা আক্তার। তিনি পুরোদস্তুর প্রচারে রয়েছেন। আলোচনায় আছেন স্থানীয় জনপ্রিয় প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা কাউন্সিলর আফসার উদ্দিন খানও। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী নেতা সিদ্দিকুর রহমানও এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি নাজিম উদ্দিন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসানও এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান।
পাবনা-৪ : এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ভিড় বেশি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় ইপিজেড, বিভিন্ন কৃষিপণ্যের গবেষণা কেন্দ্র ও রেল জংশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এ নির্বাচনী আসনের সঙ্গে জড়িত। সে জন্য এ আসনে প্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামী লীগ অনেকটা সতর্কতা অবলম্বন করছে। এর মধ্যে এ আসনে প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর পরিবারের ৫ জন সদস্য নির্বাচনে আগ্রহী। সবমিলে এ আসন নিয়েই বেশ ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডকে।
ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত পাবনা-৪ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন শামসুর রহমান শরিফ ডিলু। প্রার্থিতা প্রত্যাশীদের মধ্যে স্থানীয়দের চোখে এগিয়ে রয়েছেন তার ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা গালিবুর রহমান শরিফ। গালিবের সঙ্গে নৌকার প্রার্থী হতে স্থানীয় মাঠে সক্রিয় রয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রবিউল আলম বুদু সরদার, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ব্যারিস্টার সৈয়দ আলী জিরু, মেজর জেনারেল (অব.) নজরুল ইসলাম রবি, আটঘরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম রতন, ঈশ^রদী উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান বিশ^াস, সাবেক দুদক কমিশনার সহ অনেকে।
ঢাকা-৫ আসন : হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া এ আসনে তার বড় ছেলে মশিউর রহমান মোল্লা সজল মনোনয়নের জোর দাবি করছেন। তিনি ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ কামালের স্ত্রী ক্রীড়াবিদ সুলতানা কামালের ছোটভাইয়ের মেয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য নেহরীন মোস্তফা দিশি এ মনোনয়ন পেতে পারেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে। অন্যদিকে এ আসনে মনোনয়ন চেয়ে নতুন আলোচনার সৃষ্টি করেছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী।
এ ছাড়া এ আসনে ব্যবসায়ী হারুন উর রশিদ, যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনু, যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশীদ মুন্না, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, ডেমরা থানার সভাপতি রফিকুল ইসলাম খান মাসুদ ও আমলিয়া মডেল টাউনের চেয়ারম্যান ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান আতিকও এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী।
সিরাজগঞ্জ-১ : মোহাম্মদ নাসিম ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে এ আসনের এমপি নির্বাচিত হন। মাঝখানে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের দেওয়া মামলার কারণে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি মোহাম্মদ নাসিম। ওই নির্বাচনে এই আসন থেকে বিজয়ী হন তার ছেলে তানভীর শাকিল জয়। গত ১৩ জুন মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে দলের হাইকমান্ড বাবার অবর্তমানে ছেলে তানভীর শাকিল জয়কেই এই আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে অনেকটাই নিশ্চিত করেছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগও তাকে সমর্থন দিয়েছে।
সম্প্রতি কাজীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ শওকত হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এবং ইউপি চেয়ারম্যানরা তানভীর শাকিল জয়কে দলীয় প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দিয়ে রেজুলেশন পাস করিয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সিরাজী জানান, ‘আমরা সর্বসম্মতিক্রমে প্রথমে কণ্ঠভোটে এবং পরে কার্যকরী কমিটির সদস্যরা স্বাক্ষর করে প্রস্তাব পাস করেছি। আশা করছি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের জয় ভাইকে প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের সুযোগ দেবেন।’
নওগাঁ-৬ আসন : গত ২৭ জুলাই সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম মারা যাওয়ায় নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রানীনগর) আসনটি শূন্য হয়। মনোনয়ন পেতে অনেকেই শুরু করেছেন আগাম নির্বাচনি গণসংযোগ, পথসভা, মিটিং ও সিটিং। এ আসনে মনোনয়ন লাভে এগিয়ে আছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নাছিম আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক সুমন। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলীও এ আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী। রানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও রানীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলালও এ আসনের জনপ্রিয় প্রার্থী।
পাঁচ আসনে উপনির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে আহŸান জানানো হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। আজ ২৩ আগস্ট পর্যন্ত আগ্রহীরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন। আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে দলের মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানেই প্রার্থী চ‚ড়ান্ত হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, প্রার্থিতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সব সময়ই মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। এ ক্ষেত্রেও সেটাই হবে। মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে চূড়ান্ত প্রার্থী বাছাই করা হবে।
সূত্র: চাঁপাইনবাবগঞ্জ