নিউজ ডেস্ক:
কক্সবাজারের সঙ্গে সারা দেশের রেলপথের সংযোগ দৃশ্যমান হতে চলেছে। আগামী বছরই কক্সবাজারের নতুন রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। এ লক্ষ্যে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। গত ২০ নভেম্বর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে ৭৬ শতাংশ। বাকি ২৪ শতাংশ কাজ শেষ হলেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ট্রেনে করে কক্সবাজারে যাওয়ার স্বপ্নপূরণ হবে। এরই মধ্যে প্রায় শেষ হয়েছে কক্সবাজার অংশের রেলট্রেক বসানোর কাজ। এই রেলপথ পর্যটন খাত ছাড়াও কক্সবাজারের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে এই অঞ্চলের মৎস্য সম্পদ, লবণ, রবারের কাঁচামাল এবং বনজ ও কৃষিজ পণ্য পরিবহনব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক সহজ হবে। ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। গত ২২ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের নির্মাণকাজ পরিদর্শনে এসে সরকারের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান বলেন, ২০২৪ সালে প্রকল্পের মেয়াদের সময়সীমা হলেও ২০২৩ সালের শেষের দিকে রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
প্রায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ রেললাইন প্রকল্পের অংশ হিসেবে কক্সবাজারে আইকনিক স্টেশনসহ নয়টি স্টেশনের নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। রেলের প্রকৌশলীরা জানান, প্রকল্পের আওতাধীন চারটি বড় সেতুসহ ২৫টি সেতুর নির্মাণকাজও শেষের দিকে। বড় সেতুগুলো নির্মিত হচ্ছে মাতামুহুরী নদী, মাতামুহুরী শাখানদী, খরস্রোতা শঙ্খ এবং বাঁকখালী নদীর ওপর। সহকারী প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবুল কালাম জানান, কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পে নয়টি স্টেশন বিল্ডিংয়ের মধ্যে লোহাগাড়া ছাড়া অন্য আটটি স্টেশন বিল্ডিংয়ের কাজ চলছে। এর মধ্যে দোহাজারী স্টেশন বিল্ডিংয়ের কাজ প্রায় শেষের দিকে। দোহাজারী এবং চকরিয়ায় সিনিয়র উপসহকারী প্রকৌশলীর বাড়ি থাকবে। প্রতিটি স্টেশনে তিনজন স্টেশন মাস্টারের বাড়ি থাকবে। চকরিয়া-হারবাং স্টেশনের ছাদও হয়ে গেছে। কক্সবাজার স্টেশনের কাজ চলছে পুরোদমে। দৃষ্টিনন্দন এই স্টেশনের অধিকাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কক্সবাজার স্টেশনে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ১৭টি বিল্ডিংয়ের কাজ চলছে। এখন মূল প্রকল্পের ৭৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান জানান, চকরিয়া থেকে মালবাহী ট্রেন যাবে মাতারবাড়ী। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত হলেও ২০২৩ সালে শেষ হবে রেললাইন নির্মাণের কাজ। প্রায় ১০০ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে নয়টি স্টেশন হলো, দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ (ঈদগাহ), রামু ও কক্সবাজার।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ স্থাপন করতে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৭ সালে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৩৯টি সেতুসহ রেলপথ নির্মাণের চুক্তি হয়। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও দেশের ম্যাক্স ইনফ্রাসট্রাকচার পৃথক দুই লটের কার্যাদেশ পায়। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রকল্পের প্রকৌশলীরা জানান, প্রতিঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতির ট্রেন চলবে এ পথে। বনাঞ্চলের ভিতরে হাতি চলাচলের জন্য দুটি আন্ডারপাসের কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের সব সেতুর স্প্যান ও পিলারের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। কক্সবাজার অংশের ২০টি সেতুতে গার্ডার বসানো প্রায় শেষের পথে। দোহাজারী অংশের ১৮টি সেতুর স্প্যান ও পিলার নির্মাণ শেষে ১২ এপ্রিল থেকে গার্ডার বসানো শুরু হয়েছে। এদিকে ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজারে ঝিনুকের আদলে একটি আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন ভবন নির্মিত হচ্ছে। এর কাজও শেষ হয়েছে ৬৫ শতাংশ।
ছয় তলা এ ভবনে সব ধরনের সুবিধা রাখা হবে। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে ভবনটির মূল কাঠামো নির্মাণ। ভবনটিতে থাকছে তারকা মানের হোটেল, শপিং মল, কনভেনশন সেন্টার, রেস্টুরেন্ট, শিশু যত্নকেন্দ্র, লাগেজ রাখার লকার। সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে নির্মিত এই রেলস্টেশনে অত্যাধুনিক অনেক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। চলন্ত সিঁড়ির মাধ্যমে ওভারব্রিজে উঠে চড়তে হবে ট্রেনে। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য থাকবে তিনটি বড় জায়গা। বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। কেউ চাইলে রাতের ট্রেন ধরে সকালে কক্সবাজার পৌঁছে মালামাল স্টেশনের লকারে রেখে সারা দিন কক্সবাজার ঘুরে রাতে ফিরে যেতে পারবেন। প্রকল্পের সিনিয়র প্রকৌশলী তাইজুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে স্টেশন ভবনের মূল কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে ছাদের ওপর স্টিলের ক্যানোপি বসানোর প্রস্তুতি। ভবনের ভিতরে চলছে সৌন্দর্যবর্ধন, ফায়ার ফাইটিং, স্যানিটারি, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ। মূল রেলস্টেশন ভবনের পূর্ব পাশে চলছে উড়াল সেতু ও প্ল্যাটফরম তৈরির কাজ।