শুক্রবার , ডিসেম্বর ২৭ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু চালু হচ্ছে জুনে

তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু চালু হচ্ছে জুনে

  • মুন্সীগঞ্জের আশীর্বাদ, বদলে যাচ্ছে সড়ক নেটওয়ার্ক
  • আগামী জুনে চালু হতে যাওয়া তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু মুন্সীগঞ্জের জন্য আশীর্বাদ। এই সেতু ঘিরে পদ্মা সেতুর সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সহজ সড়ক নেটওয়ার্ক দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখতে যাচ্ছে। আর এই সড়ক নেটওয়ার্কের অনেক বড় সুফল পেতে যাচ্ছে মুন্সীগঞ্জ। তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর সঙ্গে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে মুন্সীগঞ্জের সড়ক ব্যবহার করে শ্রীনগরের ছনবাড়ি পয়েন্টে যুক্ত হতে হচ্ছে। তাই মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর-ছনবাড়ি সড়ক প্রশস্তকরণসহ আঞ্চলিক মহাসড়কে উন্নীত করার প্রকল্প গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন । ১ হাজার ২৩৪ দশমিক ৫০ মিটার দীর্ঘ ৬ লেন বিশিষ্ট এই সেতুতে স্থানীয় ধীরগতির যান চলাচলের জন্য ভিন্ন লেন রাখা হয়েছে। অবকাঠামো নির্মাণ শেষে সেতু খুলে দিতে এখন চলছে এ্যাপ্রোচ সড়ক ও খুঁটিনাটি কাজ। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেতুটি চালু হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাড়কের সঙ্গে পদ্মা সেতুর দূরত্ব কমবে ৯ কিলোমিটার। 

চলছে এখন অলঙ্কারিক খুঁটিনাটি কাজের পাশাপাশি এ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ। তাই সেতুটি আগামী জুনেই খুলে দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতু প্রকল্প ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার মোঃ ওসমান গনি। নারায়ণগঞ্জের মদনপুর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এই সেতু মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর থেকে শ্রীনগরের ছনবাড়ি পয়েন্টে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ককে যুক্ত করবে। এতে কাঁচপুর, সাইনবোর্ডসহ রাজধানীর যানজটও কমবে। মদনপুর থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে মাওয়ার পদ্মা সেতুর দূরত্ব ৫২ কিলোমিটার। আর নির্মাণাধীন সেতু দিয়ে দূরত্ব হবে ৪৩ কিলোমিটার। একই সঙ্গে সিলেট সড়কও সুফল পাবে এই সেতুর বাইপাস সড়কটির।

চরসৈয়দপুর-কুচিয়ামোড়া উদ্ভাবনী সড়ক ॥ তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর সঙ্গে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে সহজ যুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। চর সৈয়দপুরের তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু থেকে সোজাসুজি কুচিয়ামোড়া পর্যন্ত উদ্ভাবনী সড়ক তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এই সড়ক নির্মাণে জাইকা সহায়তার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তাই এই সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে প্রস্তাবের বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ সড়ক বিভাগকে নির্দেশনা এসেছে। এরই মধ্যে সার্ভে শুরু হতে যাচ্ছে। জাপানের আর্থিক সহায়তায় ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতু থেকে কুচিয়ামোড়া পর্যন্ত সড়ক নির্মিত হলে সড়ক নেটওয়ার্কে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। এই সড়কের মধ্য দিয়ে দুই মহাসড়কের দূরত্ব আরও কমে আসবে। এই সড়ক বদলে দিবে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের দুর্গম এলাকা। গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তার কারণে দুর্গম জনপদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হবে। এখানকার গ্রামীণ অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে।

চক্রাকার সড়ক হচ্ছে ॥ পঞ্চবটির কাছাকাছি ফতুল্লা পয়েন্ট ধরে আরেকটি বুড়িগঙ্গা সেতু তৈরির পরিকল্পনা চলছে। এটি হলে মুক্তারপুর-পঞ্চবটি সড়ক যুক্ত করে রিংরোট বা চক্রাকার সড়ক তৈরি হবে। কেরানীগঞ্জ থেকে পানগাঁও দিয়ে সড়কটি বেরিয়ে গেছে। এই সড়ক পদ্মা সেতুর রেল লিঙ্কের নিচ দিয়ে যুক্ত হবে চক্রাকার সড়কে। আর বুড়িগঙ্গা তীরের পানাগাঁও পোর্ট হচ্ছে আন্তর্জাতিকমানের। তাই মূল রাজধানী ঢাকাকে যানজটের চাপ কমাতে এই চক্রাকার সড়ক যুক্ত হবে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়কের সঙ্গে। এই উদ্ভাবনী সড়ক রাজধানীর যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।

মুক্তারপুর-হাতিমারা সড়ক ফোরলেন ॥ মুক্তারপুর থেকে হাতিমারা পর্যন্ত সড়ক হচ্ছে চার লেন। ৩ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ফোর লেন সড়কের যাবতীয় প্রাক্কলন তৈরি সম্পন্ন। আর হাতিমারা থেকে শ্রীনগরের ছনবাড়ি পর্যন্ত ২০ দশমিক ৪৪৫ কিলোমিটার সড়ক হচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড টু লেন। বর্তমানে এই সড়কের প্রশস্ততা সাড়ে ৫ মিটার। এটি প্রশস্তকরণে রাস্তা হবে ৭ দশমিক ৩০ মিটার। আর দুই পাশে দেড় মিটার করে আরও তিন মিটার হার্ড শোল্ডার থাকবে।

মুন্সীগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবুল কাসেম মোঃ নাহিন রেজা বলেন, এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পদ্মা সেতু সংযোগ সড়ক নেটওয়ার্কে অনেক সুফল মিলবে। একই সঙ্গে এই সড়কটি আঞ্চলিক মহাসড়কে উন্নীত হবে।

সড়ক বিভাগ জানায়, সার্ভে অনুযায়ী মুক্তারপুর থেকে হাতিমারা পর্যন্ত সড়কের চাপ বেশি। এরপর একটি সড়ক সোজা শ্রীনগরের ছনবাড়ির দিকে চলে যায় আর আরেকটি সড়ক হাতিমারা থেকে বাম অর্থাৎ দক্ষিণ দিকে সুখবাসপুর-বাহেরপাড়া-টঙ্গীবাড়ি ঋষিবাড়ি হয়ে বালিগাঁও দিয়ে লৌহজং হয়ে মাওয়ার সঙ্গে যুক্ত আছে। তাই হাতিমারা থেকে যানবাহনগুলো সুবিধামোতাবেক দুই দিকে ভাগ হয় যায়। সে কারণেই হাতিমারা থেকে ছনবাড়ি পর্যন্ত ফোর লেন পরিকল্পনার পরিবর্তে স্ট্যান্ডার্ড টু লেন করা হচ্ছে।

কুন্ডেরবাজার পাকা সেতু হচ্ছে ॥ মুক্তারপুর-ছনবাড়ি সড়কের কুন্ডেরবাজার বেইলি ব্রিজ সরিয়ে পাকা সেতুর নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ৯৮ মিটার বেইলি ব্রিজটি ১০০ মিটারের চেয়ে বড় পাকা সেতু নির্মাণ হবে। ১০০ মিটারের বেশি হওয়ার কারণে হাইড্রো মরফলিজি সার্ভে চলছে এখন। এই সার্ভের পরেই ডিজাইন করে প্রাক্কলন তৈরি করা হবে। আগামী অর্থ বছরে এই সেতুটি নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা সম্ভব হবে বলে মুন্সীগঞ্জ সড়ক বিভাগ নিশ্চিত করেছে।

বালিগাঁও সেতুর ডিজাইন সম্পন্ন ॥ হাতিমারা-টঙ্গীবাড়ি-লৌহজং সড়কের বালিগাঁও পাকা সেতুর ডিজাইন সম্পন্ন। ডিজাইন পাওয়ার পর প্রাক্কলনের কাজ চলছে এখন। সেতুটির বেইলি অপসারণ করে ১২০ মিটার দীর্ঘ পাকা সেতুর নির্মাণের প্রক্রিয়া এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে।

এই সেতু ছাড়াও সড়কটির বলই, ক্ষেতেরপাড়া, জোড়পুল, কলকাতাভোগদিয়া, ঘৌলতলী ও বালিগাঁও। এই ছয়টি সেতু প্রকল্পকে দুইভাবে দুইটি গ্রুপে টেন্ডার আহ্বান করা হবে। সেভাবেই প্রক্রিয়া চলছে জোরেশোরে।

গজারিয়ার পথ কমবে ॥ শীতলক্ষ্যা-৩ সেতু চালু হলে গজারিয়া উপজেলার সঙ্গে মুন্সীগঞ্জ জেলা সদরের যোগাযোগ সহজ হবে। ৭ কিলোমিটার দূরত্বের মুন্সীগঞ্জে গড়ি নিয়ে আসতে ৭০ কিলোমিটার ঘুরতে হতো। এখন অর্ধেকের বেশি রাস্তা কমে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। আগে কাঁচপুর এবং সাইনবোর্ড হয়ে নারায়ণগঞ্জ দিয়ে আসতে হতো। এখন মেঘনা সেতু পার হয়ে মদনগঞ্জ হয়ে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু পার হয়ে মুক্তারপুর সেতু হয়ে মুন্সীগঞ্জে আসা যাবে। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম ব্যবহার করে মুন্সীগঞ্জে আসতে এই সেতু সহজ হবে। এতে এই অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি সাধন হবে। এদিকে গজারিয়ার সঙ্গে জেলা শহর মুন্সীগঞ্জের সহজ যোগাযোগের জন্য গজারিয়ার মেঘনায় ফেরি সার্ভিস আবার চালু এবং ভবিষ্যতে মেঘনা সেতু নির্মাণের বিষয়েও সার্ভে হচ্ছে।

আরও দেখুন

বাগাতিপাড়ায় আগুনে পোড়া তিন পরিবার পেল সহায়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক বাগাতিপাড়া,,,,,,,,,,,,,নাটোরের বাগাতিপাড়ায় আগুনে পুড়ে যাওয়া ৩টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে …