খালেদা জিয়ার কারামুক্তি-আন্দোলন নিয়ে হতাশা কাজ করছে বিএনপির তৃণমূলে। শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ক্ষমতার লোভ আর ব্যক্তিস্বার্থের কারণেই জোরদার হচ্ছে না আন্দোলন, এমনটাই মনে করছে তৃণমূল বিএনপি। সম্প্রতি খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল রিপোর্ট আদালতে জমা না হওয়ায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন শুনানি পিছিয়ে ১২ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেছেন আপিল বিভাগ।
এর পরপরই বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সুপ্রিমকোর্টের ভিতরেই হট্টগোল শুরু করে। হট্টগোলের এক পর্যায়ে আদালত ছেড়ে বের হয়ে চলে আসেন বিচারপতিরা। একপ্রকার বাধ্য করা হয় তাদের আদালত ছাড়তে। পরে এক সংবাদ সম্মেলন করে বিচারকরা এই ঘটনাকে আদালত অবমাননা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘তারা (বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা) নজিরবিহীন হট্টগোল করেছেন। তাদের বিশৃঙ্খলার জন্য আদালত আজ উঠে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তারা আদালতের কার্যক্রম ঠিকমতো চালাতে দেয়নি। এটা খুবই ন্যক্কারজনক। আমরা সবাই এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’
অপরদিকে খালেদা জিয়ার জামিন না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিনপির অনেক নেতাকর্মীরাই। বিশেষকরে তৃণমূলের কর্মীরা একেবারে ভেঙ্গেপরছেন। তারা বলছেন, এর আগে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ হলে দলের পক্ষ থেকে কর্মসূচি দেওয়া হতো। এবার কোনও কর্মসূচিই দেওয়া হয়নি। আর কেন কোনও কর্মসূচি দেওয়া হলো না, এর কোনও ব্যাখ্যাও দেননি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। যার ফলে হতাশায় দল ত্যাগ করছেন অনেক তৃণমূল নেতাকর্মী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির নয়াপল্টন অফিসের একজন স্টাফ বলেন, ‘আশা ছিল খালেদা জিয়া এই মামলায় জামিন পেয়ে যাবেন। আর আগামী সপ্তাহে অন্য মামলায় জামিন পেলে মুক্তি পেতেন, কিন্তু হলো না। অপরদিকে জানুয়ারিতে শুরু হবে নাইকো দুর্নীতি মামলার শুনানি ফলে শিগগিরই মুক্তি পাচ্ছেন না তিনি।’
এই কর্মী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘হয়তো হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়াকে লাশ হয়ে বের হতে হবে।’
নেতাদের এমন হতাশার সাথে বাড়ছে তাদের পদত্যাগ। এর কিছুদিন আগে সিনিয়র নেতাকর্মীরা পদবঞ্চিত, এবং অপমানিত হচ্ছেন প্রতিনিয়তি, এমন অভিযোগ তুলে পদত্যেগ করেন অনেকেই।
বিএনপির সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা বলেন, ‘বিএনপিতে সৎ ও যোগ্য লিডারশীপের অভাব রয়েছে। এখন খালেদা জিয়ার জন্য সিনিয়র নেতারা মায়াকান্না করছেন। কোনোদিন তিনি মুক্তি পেলে এই সিনিয়র নেতারা দাবি করবেন, তারাই খালেদা জিয়ার কারামুক্তির জন্য কথা বলেছেন। তখন আমাদের কোন ক্রেটিড দেয়া হবে না। আমার তো সন্দেহ হয় বিএনপির সিনিয়র নেতারা আসলেই খালেদা জিয়ার মুক্তি চান কিনা!’’