২০৫০ সালে দেশের সম্ভাব্য মোট জনসংখ্যার হিসাব করে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করতে চায় সরকার। তাই চালের উৎপাদন দ্বিগুণ করতে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।
রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে বুধবার ‘বাংলাদেশে চালের উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ বৃদ্ধিকরণ-ডিআরপি’ শীর্ষক কৌশলপত্র উপস্থাপন ও মোড়ক উন্মোচনে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা জানান। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে এ কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)।
মন্ত্রী বলেন, ‘দেশে এক দিকে আবাদি জমি কমছে, বিপরীতে বাড়ছে জনসংখ্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি। ক্রমহ্রাসমান জমি থেকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে চালের উৎপাদনশীলতা বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বাড়াতে হবে। সে লক্ষ্যে কাজ চলছে।’
২০৫০ সালে মানুষের আয় যেমন বাড়বে তেমনি ক্রয়ক্ষমতাও বাড়বে বলে মনে করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘খাবারের ভোগ ও চাহিদা বাড়বে। এ অবস্থায় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। উন্নত ও নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পাশাপাশি ফলন ব্যবধান কমানোর মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য ধানের পুষ্টিমান উন্নয়ন ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের বিষয়েও জোর দেয়া হচ্ছে।’
উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করতে ব্রি প্রণীত ডিআরপি কৌশলপত্রটি গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে মন্তব্য করে ড. রাজ্জাক বলেন, ‘ডিআরপি মতো এ রকম কৌশলপত্র প্রণয়ন করতে আগে বিদেশি বিশেষজ্ঞ বা বিদেশি সংস্থার সহযোগিতা লাগতো। এতে ব্যয়ও হতো অনেক। অথচ এটি আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন, যা একটি বড় সাফল্য।’
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘ডিআরপিতে চালের উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ বৃদ্ধির যে পরিকল্পনা করা হয়েছে- তা স্বপ্ন নয় বরং অর্জনযোগ্য ও বাস্তবসম্মত। দেশের অস্তিত্বের জন্য, মানুষের জন্য এটি অপরিহার্য। উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেসবাহুল ইসলাম। আলোচক হিসেবে ছিলেন বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মো. বখতিয়ার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আসাদুল্লাহ ও ইরির বাংলাদেশ প্রতিনিধি হোমনাথ ভান্ডারি।
মূল প্রবন্ধ পড়েন ব্রি’র মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর।
তিনি বলেন, ‘ডাবলিং রাইস প্রোডাক্টিভিটি- ডিআরপি একটি সমন্বিত মডেল, যেখানে ধানের ফলন প্রতিনিয়ত বাড়বে। অনাবাদি ও পতিত জমি চাষের আওতায় আসবে, ব্যাপক হারে কৃষির যান্ত্রিকীকরণ ঘটবে। ধানের গুণগতমান বৃদ্ধি পাবে, ধান ও চালের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করবে এবং ধান উৎপাদনে ঝুঁকি কমাবে।’
২০৫০ সালে চালের উৎপাদন ৬ কোটি ৮ লাখ টনে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে কৌশলপত্রে।
কৌশলপত্রে বলা হয়, উন্নত জাত-প্রযুক্তি উদ্ভাবন, বিদ্যমান উৎপাদন গ্যাপ কমানো এবং অনাবাদি জমিতে আবাদ বাড়ানোসহ সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে চালের উৎপাদন ২০৩০ সালে ৪ কোটি ৬৯ লাখ, ২০৪০ সালে ৫ কোটি ৪০ লাখ এবং ২০৫০ সালে ৬ কোটি ৮ লাখ টনে উন্নীত করা সম্ভব। বর্তমানে ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৮৭ লাখ টন।
এতে বলা হয়, কর্মপরিকল্পনার ৭৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে দেশে ২০৩০ সালে ৪২ লাখ, ২০৪০ সালে ৫৩ লাখ ও ২০৫০ সালে ৬৫ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। এর ফলে যে কোনো দুর্যোগে বছরে ৪০ লাখ টন পর্যন্ত চালের উৎপাদন কমলেও খাদ্য নিরাপত্তা অক্ষুণ্ন থাকবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি-২ বা জিরো হাঙ্গার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।