ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল:
সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্যদের একটা বড় গুণ হচ্ছে তারা বিস্তর লেখালেখি করেন। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি আর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের না হলেও বিশ থেকে ত্রিশটি লেখা প্রতি মাসে দেশের বড় বড় দৈনিক আর অনলাইন পোর্টালগুলোয় ছাপা হয়। ৭ মে’তেও অবশ্যই এর ব্যতিক্রম হয়নি। আমাদের সদস্যদের কমপক্ষে তিনটি লেখা আমার চোখে পড়েছে। সংগঠনের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় দা তার লেখাটিতে বাঙালি জাতির ইহিতাসে তিনটি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন। এর প্রথমটি বঙ্গবন্ধুর পাকিস্তানের কারাগার থেকে ৭২’র ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন আর পরের দুটি যথাক্রমে ৮১’র ১৭ মে আর ২০০৭’এর ৭ মে জননেত্রী শেখ হাসিনার দু’বারের দেশে ফেরা।
‘হাসিনা এ ডটার্স টেলের’ মাধ্যমে আমাদের বিরল সুযোগ হয়েছে আমাদের প্রিয়তম দুই আপার ৭৫ পরবর্তী কঠিন জীবন সংগ্রাম সম্বন্ধে জানার। বড় আপা প্রথমবার দেশে ফিরেছিলেন জেনারেল জিয়ার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে, মৃত্যু পরোয়ানা মাথায় নিয়ে শরণার্থী জীবনের অবসান ঘটিয়ে। তার দ্বিতীয়বারের দেশে ফেরাটাও সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিষেধাজ্ঞা আর নিশ্চিত কারাবরণের বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করেই। বঙ্গবন্ধুর দেশে ফেরা আর স্বাধীন বাংলাদেশের চলতে শুরু করা একে অপরের পরিপূরক।
অন্যদিকে শেখ হাসিনার প্রথমবারের দেশে ফেরার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল এদেশে উর্দী পরাদের হাত থেকে লুঙ্গী পরাদের হাতে আবারো ক্ষমতা ফিরিয়ে আনার বন্ধুর যাত্রার। আর দ্বিতীয়বার যখন তিনি দেশে ফিরলেন, তখন তার হাত ধরেই তারপর থেকেই উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশের ছুটে চলা।
সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সিনিয়র নেতা বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ছড়াকার আলী হাবিব ভাই তার লেখাটিতে তুলে এনেছেন শেখ হাসিনার হাত ধরে ছুটে চলা বাংলাদেশের উন্নয়নের বিস্তারিত ফিরিস্তি, কোভিড-১৯ মোকাবেলায় তার সাফল্য আর ‘পিপল ফাস্ট’ এই মূলমন্ত্রে ব্রতী হয়ে তার ছুটে চলার উপাখ্যান।
অন্যদিকে সম্প্রীতি বাংলাদেশের আরেক সক্রিয় কেন্দ্রীয় নেতা, তরুণ তুর্কি তাপস হালদারের লেখায় উঠে এসেছে প্রিয় বড় আপার দেশে দ্বিতীয় স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রেক্ষাপট, চ্যালেঞ্জ আর এর মাধ্যমে এদেশের গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বর্ননা। সেদিন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এই তরুণ নেতা খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন নেত্রীর দেশে ফিরে আসার মুহূর্তগুলো, দেখেছিলেন কিভাবে মুহূর্তেই ধানমন্ডি পরিণত হয়েছিল জনসমুদ্রে। এসব কিছুর বিবরণও আছে তাপসের লেখাটিতে।
এমন তিনটি লেখার পরও আমার লিখতে বসার কারণ আমি আজকের দিনটিকে দেখছি আজকের প্রেক্ষাপটে। বিশ্বব্যাপী আজ যে চলমান কোভিড অতিমারি, তা এই বিশ্বে এই প্রথম নয়। কি এক অজানা কারণে প্রতি একশ বছরে ঘুরে ফিরে পৃথিবীতে ফিরে আসে একেকটি অতিমারি। কাজেই কোভিড যে আসবে এটি সম্ভবত নির্ধারিতই ছিল। বাংলাদেশ আর আমি সমবয়সী। প্রায় কাছাকাছি সময়েই আমরা এই অতিমারির মধ্যেই শারীরিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে উদযাপন করেছি আমাদের নিজ নিজ সুবর্ণজয়ন্তী। আমার কাছে বাংলাদেশ তাই খুবই চেনা। আমাদের বেড়ে ওঠাটাও এক সাথেই। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমার কাছে মনে হয় কোভিডের যখন আসারই ছিল, তা আসার জন্য এর চেয়ে ভালো সময় বোধকরি বাংলাদেশের জন্য আর কিছু হতে পারতো না। কারন কোভিড যদি আসতো আরো দশটা বছর আগে, আমরা যখন আমাদের চল্লিশে, আজ আমরা একে যেভাবে বাগে এনেছি একবার নয় দু’ দুবার, তা কখনই সম্ভব হতো না। আজকে আমাদের প্রতিবেশির যে মানবিক বিপর্যয়ে আমাদের মন কাঁদে, এই অতিমারি আর দশটি বছর আগে এলে আমাদের পরিণতি হতো তার চেয়েও দশগুণ করুন। আর যদি অতিমারিটি আসতো তারও দশ বছর আগে, আমি আর বাংলাদেশ দুজনই যখন ত্রিশ বছরের টগবগে তরুণ, কি হতো তাহলে তা কল্পনা করার দুঃসাহসও আমার নাই।
আজ যখন কিছু কিছু মানুষ অর্বাচীনের মত আমাদের কোভিড ব্যবস্থাপনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান, আমার তখন এই কথাগুলো বারবার মনে পড়ে। দফায় দফায় ক্ষমতায় থেকেও যারা দেশে এমন এক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রেখে গেছেন যার উপর তাদের নিজেদের আস্থাই শূন্যের কোঠায়, এক বিঘার সামান্য পরিসরে যারা নিশ্চিত করতে পারেন না তাদের প্রিয় নেতাসহ মাত্র দশ জন মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টিও, তারা যখন এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার বর্গকিলোমিটারে সতের কোটি মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার প্রেশক্রিপশন লেখেন তখন মনটাতো খারাপ হয়ই, কিছুটা বিরক্তিরও যে উদ্রেক হয় না তাও কিন্তু না। অবশ্য আবার ধাতস্থ হই আর স্বস্তি পাই যখন ভাবি ভাগ্যিস ‘তিনি ফিরে এসেছিলেন’। এই লেখার শিরোনামটাও তাই, ‘তিনি ফিরে এসেছিলেন বলেই’। শিরোনামটা আলী হাবিব ভাইয়ের লেখার শিরোনামটার কাছাকাছি হয়ে গেল, কিন্তু আজকের এই দিনে এই বিষয়ে লিখতে বসে এর চেয়ে ভালো কোন শিরোনাম শত মাথা কুটেও মাথায় এলোনা।
লেখক : চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ।