নিউজ ডেস্ক:
নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার মেহেরপাড়া বিলে সোমবার রাতে মাছ ধরার সময় জেলেদের জালে আটকে যায় বিশাল অজগর। জেলেরা জাল ডাঙায় তুলে সাপটি পিটিয়ে মারার উদ্যোগ নিলে গতকাল কেউ একজন ৯৯৯-এ ফোন করে অজগরটি উদ্ধার করার অনুরোধ জানান। কল পেয়ে তৎক্ষণাৎ বিষয়টি মাধবদী থানা পুলিশকে অবহিত করেন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কর্তৃপক্ষ। মাধবদী থানা পুলিশ বন বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে অজগরটি উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে নিরাপদে জঙ্গলে ছেড়ে দেয়। একই দিন চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে মাদরাসা পড়ুয়া এক কিশোরীর বিয়ের আয়োজন করেন অভিভাবক। জনৈক ব্যক্তি বিষয়টি ৯৯৯-এ কল দিয়ে অবহিত করার পর বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরীর হস্তক্ষেপে ওই বাল্যবিয়ে বন্ধ হয়। ২৪ জুলাই চাঁদপুর সদর উপজেলায় গৃহকর্মীর কাজের কথা বলে এক তরুণীকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার অভিযোগ ৯৯৯-এ জানান এক তরুণী। পরে পুলিশ ওই তরুণীকে উদ্ধার ও গৃহকর্তা রিপন গনি এবং তার স্ত্রী মাকসুদা বেগম মাহিকে গ্রেফতার করে। ১২ জুলাই গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের কালিটোলা থেকে ৯৯৯-এ ফোন করে আরিফ নামে এক ব্যক্তি জানান, ২১টি গরু নিয়ে ঢাকা যওয়ার সময় মহাসড়কে অন্য একটি ট্রাকে এসে আট-১০ জন অস্ত্রধারী ট্রাক ছিনতাই করেছে। ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ট্রাকে থাকা জিপিএসে অবস্থান নিশ্চিত হয়ে বগুড়ার গাবতলী থেকে গরুভর্তি ট্রাক উদ্ধার ও দুষ্কৃতকারীদের গ্রেফতার করে। এভাবেই দিনে দিনে জনপ্রিয় হচ্ছে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯। তৎক্ষণাৎ ও দ্রুততার সঙ্গে সেবা পাওয়ায় ট্রিপল নাইন হয়ে উঠেছে মানুষের আশা-ভরসা, আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক। তবে এ সেবা দিতে গিয়ে কর্তৃপক্ষকে মারাত্মক দুর্ভোগে পড়তে হয় ভুয়া কলের কারণে। ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পুলিশ এ সেবা চালু করার পর ৩০ জুন পর্যন্ত কল পেয়েছে ২ কোটি ৮৬ লাখ ৬০ হাজার ৬৭৬টি। এ বিশালসংখ্যক কলের ৭৮ শতাংশ বা ২ কোটি ৪৩ লাখ ৬ হাজার ৪১৭টিই ভুয়া। ভুয়া কলের কারণে সেবাপ্রত্যাশীরা কল দিয়ে চ্যানেলগুলো ব্যস্ত পাচ্ছেন। এতে জরুরি মুহূর্তে প্রত্যাশিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অনেকে না জেনে অযথা ফোন করেন। এতে প্রকৃত প্রত্যাশীরা বিড়ম্বনায় পড়েন। কারও ফোনে ব্যালান্স নেই, ৯৯৯-এ ফোন করে মোবাইল রিচার্জ করে দিতে বলেন। কারও আবার বাচ্চা খেতে চায় না, ৯৯৯-এ ফোন করে বাচ্চাকে পুলিশের ভয় দেখান। আবার কেউ কেউ বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে হয়রানি করছেন। যেসব কলে সেবা দেওয়ার মতো কিছু থাকে না সেসব কল প্রতিহত করতে সরকার যে নীতিমালা করেছে তার আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে টোলফ্রি নম্বর ৯৯৯। এর আগে দেখা গেছে সাগরে বিকল হয়ে পড়া জাহাজের নাবিকদের উদ্ধার, পরিবার থেকে হারিয়ে যাওয়া বৃদ্ধাকে উদ্ধার, আটকে পড়া বিড়াল, ঈগল পাখি, মেছো বাঘসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী উদ্ধার, ইভ টিজিং ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে মানুষ ৯৯৯-এ ফোন করেছেন এবং তাদের কাক্সিক্ষত সেবা পেয়েছেন। আমরা শুধু সেবা দিয়েই দায়িত্ব শেষ করি না। পরে সেবাগ্রহীতাকে ফোন করে কাক্সিক্ষত সেবা পেয়েছেন কি না তা-ও জানতে চাই। তাদের পরামর্শ থেকে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের কোনো দুর্বলতা ধরা পড়লে তা সমাধান করে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিই।’
৯৯৯ কর্তৃপক্ষ জানান, বিপুলসংখ্যক ভুয়া কলের মধ্যে ব্লাঙ্ক কল (অন্য প্রান্ত থেকে কোনো কথা না বলে লাইন ব্যস্ত রাখা) ১ কোটি ৩৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১২টি। ক্র্যাঙ্ক ও ফ্র্যাঙ্ক কল (অযথা বিরক্ত করা) ২০ লাখ ৬৭ হাজার ৩৫২টি। অন্যান্য কল এসেছে ২৫ লাখ ৬১ হাজার ৭৫৩টি। জাতীয় জরুরি সেবার ফোকাল পারসন ও পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা যেসব কল রিসিভ করেছি তার মধ্যে “কল ফর সার্ভিস” বা সিএফএস কল ছিল ৫ লাখ ৫৪ হাজার ২৫৯টি। এসব কলকে আমরা যথাযথ সেবা দিতে পেরেছি। এর মধ্যে ৪ লাখ ১৬ হাজার ৫১৩টি কল ছিল পুলিশি সেবাসংক্রান্ত। আর ৫৭ হাজার ৩২১টি কল ছিল ফায়ারসংক্রান্ত। এ ছাড়া অ্যাম্বুলেন্স চেয়ে আমাদের কাছে কল এসেছে ৬০ হাজার ১৩৩টি।’ আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, ‘করোনা সংক্রমণজনিত লকডাউন চলাকালে প্রতিদিন আমাদের কাছে গড়ে প্রায় ৬ হাজার কল বেশি আসছে। আগে গড়ে ২৪-২৫ হাজার কল এলেও এখন তা বেড়ে হয়েছে ৩০-৩১ হাজার।’ ২৬ জুলাইয়ের কল বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, ‘এক দিনে করোনা সংক্রমণ ও প্রতিরোধ বিষয়ক সেবার তথ্য জানতে চেয়ে কল এসেছে ৮৪৬টি, ত্রাণ প্রয়োজন এমন কল এসেছে ২ হাজার ৮১৬টি, ত্রাণ বিতরণে অনিয়মসংক্রান্ত কল এসেছে ১৬৯টি, অসময়ে দোকান খোলা রাখা, মহল্লায় জটলা করে আড্ডা দেওয়া এ ধরনের কল পেয়েছি আমরা ২ হাজার ৯৭৩টি। এ ছাড়া ৪০ জন প্রবাসীর কল আমরা পেয়েছি।’