নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে তরুণদের শিক্ষা-দীক্ষায় দক্ষ হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, যুবসমাজ আমাদের অনেক বড় শক্তি। তরুণ সমাজটা হচ্ছে একটা জাতির জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই সেই সমাজটা শিক্ষা-দীক্ষায় সবদিক থেকে উচ্চমানের হবে- সেটাই আমি চাই। আমাদের যুবসমাজ আমাদের দেশের জন্য একটি বড় শক্তি এবং তারাই বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে পারে।
রবিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত দ্বিতীয়বারের মতো ‘শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার এ্যাওয়ার্ড-২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
তরুণ প্রজন্মকে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরের জন্য জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টেকহোল্ডার’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশটা এগিয়ে যাবে শত বাধা অতিক্রম করে। আমাদের যুবসমাজ আমাদের বড় একটা শক্তি। পৃথিবীর অনেক দেশ এখন বয়োবৃদ্ধদের দেশে পরিণত হয়েছে। আমরা সেটা হতে চাই না। কাজেই আমাদের এই যুবসমাজই পারবে বাংলাদেশটাকে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে। তাই আমি চাই, দেশের যুবসমাজ প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষ করে উচ্চমানের শিক্ষায় প্রস্তুত হোক।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল বিজয়ী ১১ জনের হাতে ‘শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার এ্যাওয়ার্ড-২০২২’ তুলে দেন। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন স্বাগত বক্তৃতা করেন।
পুরস্কার হিসেবে বিজয়ীদের ক্রেস্ট, সনদপত্র এবং এক লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে মোঃ মাসুদ আলম ও মেঘনা খাতুন নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন। শেখ হাসিনার বিভিন্ন মানবিক কর্মকা-ের ওপর অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও প্রদর্শিত হয়।
তরুণরাই বাংলাদেশের প্রধান সম্পদ এবং তারাই দেশ গড়বে বলে বঙ্গবন্ধুর একটি মন্তব্যের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী করে তরুণ প্রজন্মকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর জোর দিয়েছে।
দেশের যুবসমাজ সেবক হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যুবসমাজ মানুষের সেবক হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াবে, নিজেদের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করবে, পরিবারকে সহায়তা করবে। যুবসমাজকে সুশিক্ষিত করতে ক্ষমতায় এসেই কাজ শুরু করে আওয়ামী লীগ। করোনার মাঝে যুবসমাজই সবার আগে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, যা পুরো জাতির জন্য উৎসাহের কারণ।
আজকের যুবসমাজ ২০৪১-এ সমৃদ্ধ দেশ গড়ার কারিগর হবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এটা যেন আর পিছিয়ে না যায়। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হচ্ছে এবং সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরের কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো- ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়া এবং তরুণরাই সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে। কারণ, তারাই ২০৪১ সালের মূল স্থপতি।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক যুবসমাজের উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় যুবসমাজের সার্বিক উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার সরকার তরুণদের উন্নয়নে যথাযথ শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিপুল সংখ্যক যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে তার সরকার বেসরকারী খাতে ব্যাংক, বীমা, টেলিভিশন এবং রেডিওসহ সবকিছু দিয়েছে। তার সরকার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে, যেন যুবকরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চাকরির জন্য বিদেশে যেতে পারে এবং এইভাবে তারা তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি ও জিনিসপত্র সংরক্ষণ করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবকদের কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে কোন গ্যারান্টি ছাড়াই ঋণ দেয়া হচ্ছে। কারণ, তারা যেন উদ্যোক্তা হতে পারে এবং অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। তিনি এ সময় চাকরির পেছনে না ছুটে যুবসমাজকে উদ্যোক্তা হওয়ার মাধ্যমে অপরকে চাকরি দেয়ার এবং নিজের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
সরকারপ্রধান বলেন, তার সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে ডাটা সেন্টার এবং কমিউনিটি ক্লিনিক করেছে, যেখানে বিপুল সংখ্যক যুবসমাজের কর্মসংস্থানে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া তার সরকারের গৃহহীনকে বিনামূল্যে ঘরবাড়ি প্রদান, আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পসহ সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বিভিন্ন কর্মসূচী কর্মসংস্থানের সুযোগকে অবারিত করেছে।
স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানের পাশাপাশি যুবকরাই এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর যুবসমাজের উন্নয়নের ধারাবাহিতকায় ছেদ পড়ে। ’৭৫-এর পর সামরিক সরকার ক্ষমতা দখল করে। জাতির পিতাকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেছিলেন। সেই জিয়াউর রহমান যুবসমাজের হাতে অস্ত্র, মাদক তুলে দিয়ে তাদেরকে বিপথে পরিচালিত করেছিলেন। তিনি যুবসমাজের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে নিজের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন।
অনুষ্ঠানে জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থ থেকে যুবকদের জন্য কিছু অংশ পাঠ করেন তার কন্যা শেখ হাসিনা। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অন্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং তৃণমূলে শিক্ষা পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও জাতি গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে অবদানের জন্য ‘শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার এ্যাওয়ার্ড-২০২২’ প্রাপ্ত যুবকদের শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আজ আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, যুবসমাজ জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং জনগণের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আমি আশা করি, আগামী প্রজন্ম তাদের কর্মকা-ের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হবে এবং জাতী গঠনমূলক কর্মকা-ে নিজেদের নিয়োজিত করবে।’
প্রধানমন্ত্রী কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন যে, কোভিড-১৯ মহামারীর শীর্ষ সময়ে যখন ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে অনেকে নিকটাত্মীয়দের মৃতদেহ ছেড়ে চলে গিয়েছিল, তখন বিপুলসংখ্যক যুবক জনসাধারণকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিল।