নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংস্কারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলছে বাস ও ট্রাক মালিক–শ্রমিকদের ধর্মঘট। শুরুতে পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতি ছিল দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১৪ জেলায়। গতকাল মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) তা ছড়িয়ে পড়ে দেশের ২০ জেলায়। শ্রমিকদের এ কর্মবিরতি ছিল যাত্রীবাহী বাসের ক্ষেত্রে। আজ বুধবার (২০ নভেম্বরা) থেকে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সারা দেশে পণ্য পরিবহন ধর্মঘট।অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সড়কে বাস বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রীরা।
সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে ও সড়ক আইন মানতে চালক ও পথচারীদের বাধ্য করতে সম্প্রতি চালু হয় নতুন সড়ক পরিবহন আইন। যাতে পূর্বের বলবৎ আইনকে আরো কঠিন করা হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে জরিমানার পরিমান। চালক, পথচারী ও যাত্রী থেকে শুরু করে সকলেই যখন সরকারের এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাচ্ছে, তখনই হঠাৎ করে পরিবহন শ্রমিকরা এই আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে।
জানা যায়, মূলত কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির যোগসাজসে শ্রমিকরা এই আন্দোলনে নেমেছে। আন্দোলনরত শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপর মহলের নির্দেশেই তারা এই আন্দোলন করছেন। অধিকাংশ শ্রমিকদের হাতেই পোস্টার-ব্যানার দেখে, এটি কারা দিয়েছে জানতে চাইলে শ্রমকিরা উত্তর দেয়নি। তবে সূত্র জানায়, শ্রমিকদের যে আন্দোলনের অর্থের যোগান দিচ্ছে সরকার বিরোধী দলগুলো। তারাই নিজেদের খরচে ব্যানার-পোস্টার চাপিয়ে তুলে দিচ্ছেন শ্রমিকদের হাতে। এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যে পরিবহনখাত বন্ধ করে সারাদেশে পণ্য পরিবহনে ব্যাঘাত ঘটানো। যাতে করে পণ্যের দাম বাড়ে এবং দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি লবণের দাম বৃদ্ধির গুজব ছড়িয়েও তারা চেষ্টা করেছিল দেশে অস্থিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে।
এদিকে, পরিবহন ধর্মঘট ১০ দিন থাকলেও ঢাকার চালের বাজারে প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। চালের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার সচিবালয়ে চালকল মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, চ্যানেলে চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জেনেছি। আমাদের দেশে চালের মজুতের কোনো ঘাটতি নেই। মিল মালিক ও বাজার মনিটর করে দেখা গেছে মজুতের কোনো ঘাটতি নেই, আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই, রফতানি করা জন্য প্রস্তুত আছি।’ চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে কোন প্রকার গুজবে কান না দিতে সকলকে পরামর্শ দেন মন্ত্রী।
পরিবহন শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়ে ইতোমধ্যেই সোচ্চার রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই আন্দোলন কোনভাবে জনগণের জানমালের হানি করছে কিনা, সেদিকে প্রশাসনের রয়েছে বিশেষ নজর। তাছাড়া শ্রমিকদের আন্দোলনকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পণ্যের দাম বা অন্য কোন বিষয়ে গুজব ছড়াচ্ছে কিনা, সেটি মনিটর করছে ডিএমপির সাইবার টেরোরিজম ইউনিট। পরিবহন মালিকদের সাথে কথা বলে শীঘ্রই এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছে সরকার।