নিউজ ডেস্ক:
সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ১৫টি সংস্থার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদস্যপদ লাভ করে। এরই ধারাবাহিকতায় মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওই বছরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। থেমে যায় সোনার বাংলা বিনির্মাণের স্বপ্ন। পঁচাত্তর-পরবর্তী ২১ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ বিনামূল্যে সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু তখনকার সরকার সেই সুযোগ নেয়নি। তারা মনে করেছিল, সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হলে সব তথ্য পাচার হয়ে যাবে। কিন্তু আজ রীতিমতো বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে। গত এক যুগে সরকারী ও বেসরকারী তিনশ’রও বেশি সেবা দিয়ে যাচ্ছে সারাদেশের ৮ হাজার ২৮০ ডিজিটাল সেন্টার। মোবাইল উৎপাদন ও সফটওয়্যার রফতানির ক্লাবে গর্বিত অংশীদার বাংলাদেশ। এখন বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম ফ্রিল্যান্সিং দেশ। ইতোমধ্যে ফাইভ-জি যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। আইটি খাতে আগামী পাঁচ বছরে নতুন করে ১০ লাখ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে চায় সরকার। একই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেশে তৈরি ডিজিটাল ডিভাইসের রফতানি আয় বর্তমানের প্রায় এক বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি সুখী, সমৃদ্ধ সোনার বাংলার। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সময় পান মাত্র সাড়ে তিন বছর। এ সময়ে তিনি সোনার বাংলা বিনির্মাণে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ এমন কোন খাত নেই, যেখানে পরিকল্পিত উদ্যোগ ও কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেননি। শুধু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও বিকাশে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই রচিত হয় একটি আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশের ভিত্তি, যা বাংলাদেশকে ডিজিটাল বিপ্লবে অংশগ্রহণের পথ দেখায়। বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের সুফল দেশের প্রত্যেক মানুষ পাচ্ছে। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থানসহ এমন কোন খাত নেই যেখানে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে না। গত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও জ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দেন। ঘোষণায় বলা হয়, ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশ পরিণত হবে ডিজিটাল বাংলাদেশে।
জনগণের দোরগোড়ায় সহজে, দ্রুত ও স্বল্প ব্যয়ে সরকারী সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ২০১০ সালের ১১ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়নে একযোগে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র উদ্বোধন করেন। বর্তমানে এই সেবাটি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) নামে পরিচিত। এই সেন্টার থেকে গ্রামীণ জনপদের মানুষ খুব সহজেই তাদের বাড়ির কাছে পরিচিত পরিবেশে জীবন ও জীবিকাভিত্তিক তথ্য ও প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন। প্রথমে কেবল ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রিক এর কার্যক্রম চালু হলেও বর্তমানে পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন, গার্মেন্টসকর্মী এবং প্রবাসী নাগরিকদের জন্য আলাদা ডিজিটাল সেন্টার চালু হয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে ৮ হাজার ২৮০টি ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে ৩০০-এর অধিক ধরনের সরকারী- বেসরকারী সেবা জনগণ গ্রহণ করতে পারছেন। দেশে বর্তমানে মুঠোফোন সংযোগের সংখ্যা ১৮ কোটির বেশি। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বর্তমানে প্রায় ১৩ কোটি। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে আর্থিক সেবায় মানুষের অন্তর্ভুক্তি রীতিমতো বিস্ময়কর। অনলাইন ব্যাংকিং, ইলেক্ট্রনিক মানি ট্রান্সফার, এটিএম কার্ড ব্যবহার শুধু ক্যাশলেস সোসাইটি গড়াসহ ই-গবনর্মেন্ট প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখছে তা নয়, ই-কমার্সেরও ব্যাপক প্রসার ঘটাচ্ছে। এছাড়া শতভাগ সরকারী সেবা অনলাইনে দিতে চেষ্টা করছে সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। এ পর্যন্ত ৪৭ লাখ ৭১ হাজারের বেশি ই-মিউটেশন সম্পন্ন হয়েছে অনলাইনে। ‘ফোর টায়ার ন্যাশনাল ডেটা সেন্টার’ প্রকল্পের আওতায় দেশে একটি সমন্বিত ও বিশ্বমানের ডেটা সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। ৫২ হাজারেরও বেশি ওয়েবসাইটের জাতীয় তথ্য বাতায়নে যুক্ত রয়েছে ৯৫ লাখেরও অধিক বিষয়ভিত্তিক কনটেন্ট এবং ৬৮৫টির বেশি ই-সেবা সহজেই মানুষ অনলাইনে পাচ্ছেন। ৮ হাজার ২৮০টি ডিজিটাল সেন্টার থেকে ৬০ কোটির অধিক এবং জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩-এর মাধ্যমে ৭ কোটির বেশি সেবা দেয়া হয়েছে। ডিজিটাল সেন্টার, জাতীয় তথ্য বাতায়ন ও মাইগভ থেকে প্রতি মাসে সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা ৭৫ লাখ।
জানা গেছে, প্রায় সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সারের আউটসোর্সিং খাত থেকে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হচ্ছে। ৩৯টি হাই-টেক বা আইটি পার্কের মধ্যে ইতোমধ্যে নির্মিত ৯টিতে দেশী-বিদেশী ১৬৬টি প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছে। এতে বিনিয়োগ ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং কর্মসংস্থান হয়েছে ২১ হাজার, মানবসম্পদ উন্নয়ন হয়েছে ৩২ হাজার। নারীর ক্ষমতায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ হাজার ৫০০ নারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ২০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মহাকাশে প্রেরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ স্যাটেলাইটের এলিট ক্লাবের সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।
২০২৫ সাল নাগাদ আইটি খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্য ॥ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেশে তৈরি ডিজিটাল ডিভাইসের রফতানি আয় বর্তমানের প্রায় এক বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চায় সরকার। একই সময়ে আইসিটি পণ্য ও আইটি-এনাবল সার্ভিসের অভ্যন্তরীণ বাজারও ৫০০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী চার বছরের মধ্যে দেশে-বিদেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ১০ বিলিয়ন ডলারের সম্ভাব্য বাজার ধরতে ডিজিটাল ডিভাইস তথা মোবাইল ফোন, কম্পিউটার ও ল্যাপটপের মতো আইটি পণ্য বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে দেশে ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন শিল্প স্থাপনের সুযোগ সম্প্রসারণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে স্থানীয় পণ্যের ব্রান্ডিংয়ে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ রোডম্যাপ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি)। এ রোডম্যাপের সঠিক বাস্তবায়ন হলে দেশে আইটি ডিভাইস উৎপাদন শিল্পে অন্তত এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে। প্রায় ২০০ কোটি ডলারের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রফতানি করা হবে ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন। সম্প্রতি আইসিটি বিভাগের প্রস্তুতকৃত নতুন এ রোডম্যাপ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সাবেক সভাপতি এ কে এম ফাহিম মাশরুর বলেন, আইসিটি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে আমদানি কমিয়ে আনার পাশাপাশি রফতানি বৃদ্ধির উদ্যোগটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তবে মূল্য সংযোজন বৃদ্ধির পরিকল্পনা না থাকলে, এ ধরনের উদ্যোগে কার্যকর সুফল পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, প্রযুক্তি পণ্যের অধিকাংশ উদ্যোক্তা প্রায় শতভাগ উপকরণ বিদেশ থেকে আমদানি করে দেশীয় কারখানায় শুধু সংযোজন করছেন। এর ফলে ফিনিশড প্রোডাক্ট হিসেবে শুল্কায়ন না হওয়ায়, সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে, শুধু সংযোজনের কাজ হওয়ায় নামমাত্র লোক নিয়োগ দিয়েই কারখানা পরিচালনা করা হচ্ছে। উদাহারণ দিয়ে তিনি বলেন, কিছুদিন আগেই চালু হওয়া চীনা মোবাইল ফোন ব্র্যান্ড শাওমির দেশীয় কারখানায় মাত্র আড়াইশ’ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। অথচ শতভাগ উপকরণ দেশে উৎপাদন করলে, কয়েক হাজার লোক দরকার হতো। আমাদের দেশে শিল্পায়নে গুরুত্ব দেয়া হলেও, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের বিষয়টি বরাবরই অবহেলিত থাকছে। কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ দেশে উৎপাদন করা না গেলে মূল্য সংযোজন বাড়বে না। কর্মসংস্থানও হবে না। দেশীয় শিল্প হিসেবে প্রযুক্তি পণ্যের উদ্যোক্তাদের করমুক্তিসহ অন্যান্য সুযোগ দিতে, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্য সংযোজনে বাধ্যবাধকতা আরোপের পরামর্শও দেন তিনি।
দেশে তৈরি মোবাইল যাচ্ছে বিদেশে ॥ ২০১৫ সালে কম্পিউটার আমদানিতে শুল্ক হ্রাস, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার শিল্প উৎপাদনকারীদের ভর্তুকি, প্রণোদনা প্রদানসহ বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে সরকার। বিভিন্ন নীতি সহায়তার ফলে বর্তমানে দেশে হাই-টেক পার্কসহ বিভিন্ন স্থানে স্যামসাং, ওয়ালটন, সিম্ফোনি, মাই ফোন, শাওমিসহ দেশী-বিদেশী ১৪টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে মুঠোফোন ও ল্যাপটপ উৎপাদন করছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশে রফতানি করার পাশাপাশি দেশের মুঠোফোন চাহিদার ৭০ শতাংশ পূরণ করছে এই শিল্প। এছাড়া ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদনে রফতানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিত হয়েছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা আমদানিকারক দেশ থেকে উৎপাদক হয়েছিলাম। এখন রফতানিকারকও হয়েছি। চিরকাল আমদানিকারক থাকব না এমন স্বপ্ন দেখেছি। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। শুধু মোবাইল ফোনই নয়, ফ্রিজ, টিভি, ল্যাপটপসহ আরও অনেক ডিজিটাল ডিভাইস বিদেশে রফতানি হচ্ছে।
অনুমোদনের পথে ১০ হাজার ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’ স্থাপন ॥ বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামোর উন্নয়নে ১০ হাজার ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’ স্থাপন করবে সরকার। পরিকল্পনা কমিশনের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, ‘ডিজিটাল কানেক্টিভিটি স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে আইসিটি বিভাগ। প্রকল্পের অধীনে সরকার ১ লাখ ৯ হাজার ২৪৪টি ব্রডব্যান্ড, ৫৭টি বিশেষায়িত ল্যাব, একটি কেন্দ্রীয় ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম এবং শ্রেষ্ঠত্বের সীমান্ত প্রযুক্তি কেন্দ্র, ১০টি ডিজিটাল গ্রাম স্টেশন, জেলা ও উপজেলা কমপ্লেক্সে আইটি অবকাঠামো এবং প্রশিক্ষণ সুবিধা নিশ্চিত করবে। প্রকল্পটির লক্ষ্য- আটটি বিভাগ, ৬৪টি জেলা এবং উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামসহ নতুন আইটি অবকাঠামো নিশ্চিত করা। আইসিটির পরিষেবাগুলো ই-পরিষেবায় রূপান্তর করে আরও দ্রুত ও সহজে মানুষের কাছে সেবা সহজলভ্য করে তোলা হবে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে। ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে আইসিটি বিভাগ। ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮৮৩.৭৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ২ হাজার ৫০৫.১৬ কোটি টাকা এবং চীন দেবে ৩ হাজার ৩৭৮.৫৭ কোটি টাকা।
২০২৫ সালের মধ্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ॥ করোনার মধ্যে দেশে টেলিহেলথের বিকাশ ঘটেছে ৩০০ শতাংশের বেশি। বিশেষ করে ভিডিও কনফারেন্সিং, টেস্ট রিপোর্ট শেয়ারিং, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা পেতে এ সময়ে গড়ে উঠেছে ১৩ হাজার কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক। এর ৯৮ শতাংশই সংযুক্ত হন মোবাইলে। এই বাস্তবতায় নতুন প্রজন্ম যেন এআর, ভিআর, রোবটিকস, আইওটি ও ব্লক চেইন প্রযুক্তির মতো ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির সঙ্গে সহজেই পরিচিত হতে পারে এ জন্য দেশজুড়ে ৩০০ স্কুল অব ফিউচার স্থাপন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা প্রযুক্তিজ্ঞান আহরণ করে নিজেদের দক্ষ করে তুলতে সক্ষম হবে।
এ লক্ষ্যে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সকল এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে সংযুক্ত করা হবে।
ফাইভ-জি মহাসড়কে বাংলাদেশ ॥ পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল প্রযুক্তিতে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। গত রবিবার রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটক দেশের ছয়টি এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভ-জি সেবা চালু করেছে। আপাতত রাজধানীর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এলাকা, জাতীয় সংসদ ভবনের কাছে, সচিবালয় এলাকা ও ধানম-ির ৩২ নম্বরে আজ ফাইভ-জি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার বাইরে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকা ও টুঙ্গিপাড়ায় ফাইভ-জি চালু করেছে টেলিটক। জানতে চাইলে টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সাহাব উদ্দিন বলেন, টেলিটকের লক্ষ্য ২০২২ সালের মধ্যে অন্তত ২০০টি টাওয়ার বা বিটিএসে (বেইস ট্রান্সসিভার স্টেশন) ফাইভ-জি চালু করা। এ জন্য একটি প্রকল্প সরকারের কাছে জমা দেয়া হয়েছে।
২০১৩ সালে বাংলাদেশে তৃতীয় প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা বা থ্রি-জি চালু হয়। এরপর ফোর-জি চালু হয় ২০১৮ সালে। যদিও দেশের বেশির ভাগ মুঠোফোন গ্রাহক এখনও টু-জি প্রযুক্তির সেবা গ্রহণ করেন। একাদশ জাতীয় সংসদের সরকারী প্রতিষ্ঠান কমিটির ১৩তম সভার কার্যপত্র অনুযায়ী, দেশে মোট গ্রাহকের ৩৫ শতাংশ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। এই হার নেপাল, শ্রীলঙ্কা, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে অনেক কম। টেলিটক জানিয়েছে, পরীক্ষামূলক সেবায় গ্রাহক পর্যায়ে ১০০ এমবিপিএস পর্যন্ত গতি পাবেন গ্রাহক। যদিও গ্রাহক সংশ্লিষ্ট এলাকায় গেলেই ফাইভ-জি ব্যবহার করতে পারবেন না। এ জন্য ফাইভ-জি উপযোগী মুঠোফোন সেট ও নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হওয়ার জন্য পাসওয়ার্ড থাকতে হবে। নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে এই পাসওয়ার্ড দিচ্ছে টেলিটক। প্রতিষ্ঠানটি ফাইভ-জি চালুর প্রযুক্তি নিয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের কাছ থেকে।