রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে কথা হয়নি

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে কথা হয়নি

নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সফরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কারও সঙ্গে কথা হয়নি। কেউ জিজ্ঞেসও করেনি। ২০০৭ সালে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যে অভিজ্ঞতা, এর পর এটা কেউ চায়?

আগামী জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে বলে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, হঠাৎ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার মাতামাতি সন্দেহজনক। আসল কথা নির্বাচন বানচাল করা। তিনি বলেন, বিএনপির আন্দোলনে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু যদি আন্দোলনের নামে কেউ মানুষের ক্ষতি করার চেষ্টা করে; আগুন সন্ত্রাস চালানো হয়, তাহলে আমরা তো কাউকে ছাড়ব না। আমাদের জনগণ আছে। জনগণ ২০১৪ সালের নির্বাচন আন্দোলনের নামে আগুন সন্ত্রাস প্রতিহত করেছে। আমাদের কিছু করা লাগবে না। জনগণকে ডাক দিলে তারাই ঠান্ডা করে দেবে। গতকাল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা আরও বলেন, যাদের সংসদে আসন নেই, তাদের তো বিরোধী দল বলা যায় না। ওয়েস্টমিনস্টার টাইপ অব ডেমোক্রেসিতে সংসদে যাদের আসন আছে, তাদের বিরোধী দল বলে। বিএনপির তো সংসদে আসন নেই; সংসদ সদস্যও নেই। যারা নির্বাচনে আসতেই সাহস পায় না; রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঘেউ ঘেউ করে বেড়ায়; সেটিকে কিন্তু বিদেশেও কখনও বিরোধী দল হিসেবে ধরে না।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে তাঁর সদ্যসমাপ্ত যুক্তরাষ্ট্র এবং পরে যুক্তরাজ্য সফর বিষয়ে অবহিত করতে প্রধানমন্ত্রী এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলন মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্লাহ এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও কর্মাধ্যক্ষ এবং জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা ছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন।

যুক্তরাষ্ট্র সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কোনো কথা বলেছেন কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তো জানি না, এ ধরনের কথা কীভাবে এলো? এ ধরনের কোনো কথা কারও সঙ্গে হয়েছে– আমার মনেও পড়ে না।’ শেখ হাসিনা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার তো বিএনপিই নষ্ট করেছে। এখন তারা তো আন্দোলন করেই যাচ্ছে। আমরা তো বাধাও দিচ্ছি না। হুমকিতে মাইন্ড করছি না

বিএনপির সরকার পতনের হুমকিতে ‘মাইন্ড’ করেননি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা তো তারিখ দিয়েই যাচ্ছে– অমুক তারিখে ফেলে দেবে, তমুক তারিখে ফেলে দেবে। দিতে থাক, অসুবিধা নাই। আমি এটাতে মাইন্ড করছি না। আমি মনে করি, ভালো। আন্দোলনটা থাকলে আমার পার্টিও ভালো থাকে। সরকারপ্রধান বলেন, আমরা নাকি তাদের মিছিল-মিটিং করতে দিই না। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে; বেশি দূর যাওয়া লাগবে না, ২০০১-এ থাকতে আমাদের সঙ্গে কী আচরণ করেছে। আমাদের নেতাকর্মীকে ধরে নিয়ে দিনের পর দিন যেভাবে নির্যাতন ও অত্যাচার করেছে; আমরা যদি তার একটা কণাও করতাম তাহলে তাদের অস্তিত্বই থাকত না। বিএনপির আন্দোলনের টাকা কোথা থেকে আসে, সাংবাদিকদের তার খোঁজ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সাংবাদিকদের অনুরোধ করব, এই যে তাদের এত টাকা কোথা থেকে আসে, সেটা একটু খবর নেবেন। তারা এত টাকা কোথা থেকে পায়? বিএনপির আন্দোলনের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, যারা জানে– নির্বাচন করে জনগণের ভোট পাবে না, ক্ষমতায় আসতে পারবে না, তারা সব জায়গায় গিয়ে ধরনা দিয়ে বেড়াচ্ছে। কারণ তাদের তো কোটি কোটি টাকা। ক্ষমতায় থেকে এত বেশি টাকা মানি লন্ডারিং করেছে এবং এত বেশি টাকার মালিক হয়ে গেছে, অবাধে সে টাকা খরচ করে যাচ্ছে তারা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া– সবই তো ভোট চোর। আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার জন্য ভোট চুরি করা লাগে না। আওয়ামী লীগকে তো জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেয়। কাজের মধ্য দিয়ে আস্থা অর্জন করি আমরা।

মিথ্যা বলা বিএনপির অভ্যাস

বিএনপি নেতারা মাইক লাগিয়ে মিথ্যা কথা বলছেন– মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা মাইক লাগিয়ে কী হারে মিথ্যা কথা বলে, সেটা সবাই জেনে নেন। মিথ্যা বলা তাদের অভ্যাস। আর সব কিছুকে খাটো করে দেখার চেষ্টা। এ সম্পর্কে দেশবাসীকে একটু সজাগ থাকতে হবে। এই মিথ্যা কথায় কেউ কান দেবেন না; মিথ্যা কথা কেউ বিশ্বাস করবেন না। হঠাৎ নির্বাচন নিয়ে মাতামাতি, সন্দেহ হয় রে

আগামী নির্বাচন নিয়ে আমেরিকাসহ পাশ্চাত্য দেশগুলোর তৎপরতা নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে এনে দেশটা যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন হঠাৎ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সবার এত মাতামাতি কেন? সন্দেহ হয় রে! এটাই বলতে হয়– সন্দেহ হয় রে! আসল কথা নির্বাচনকে বানচাল করে দেওয়া। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ভোটের জন্য তো আমরা সংগ্রাম করলাম। রক্ত দিয়ে, আমার নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার অর্জন করে দিয়েছি। আজকে আমাকে ভোটের অধিকার শেখাতে হবে না; অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন শেখাতে হবে না। বেশি কথা বললে সব বন্ধ করে বসে থাকব দেশের রিজার্ভ কমে আসা নিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, যেসব আঁতেল, জ্ঞানী-গুণী কথা বলেন, তারা কি জানেন, আমরা যখন ক্ষমতায় এসেছি তখন রিজার্ভ কত ছিল? বাংলাদেশ কোথায় ছিল, কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছি? যতটুকু রিজার্ভ প্রয়োজন, আমাদের আছে। আমাদের ভালো থাকা জরুরি, নাকি রিজার্ভটা দরকার বেশি? যদি বলেন, তাহলে রিজার্ভ আগের জায়গায় এনে দিই; বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিই। সরকারপ্রধান বলেন, আমাকে বেশি কথা বললে সব বন্ধ করে বসে থাকব। ভোটে এলে আবার করব। দেখি কে দায়িত্ব নিতে রাজি হয়! সব রেডি করে দিয়েছি, এখন বসে বসে বড় বড় কথা বলেন।

অন্যান্য প্রসঙ্গ

নিরাপত্তা হুমকি নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা সংস্থার ওপর স্যাংশন দেবে, আবার তাদের কাছ থেকে নিরাপত্তা চাইবে– এটা কেমন কথা! এ প্রসঙ্গে আমেরিকায় নিত্যদিনকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, আমেরিকান দূতাবাসে ১৫৮ জন পুলিশ, দু’জন গানম্যান এবং তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী রয়েছে। এখানে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই। বরং আমেরিকায় বাংলাদেশের দূতাবাসের কোনো নিরাপত্তা নেই। শারদীয় দুর্গাপূজার মাত্র চার দিন আগে বিএনপির আন্দোলনের বড় কর্মসূচি ঘোষণা সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি ২০০১ সালের পর হিন্দু ও বৌদ্ধদের প্রতি অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। এটা যাতে আর করতে না পারে, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। পূজার সময় কেউ কোনো অপকর্ম করতে না পারে, তার জন্য সজাগ থাকতে হবে। সাংবাদিকদের নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন, বেতন-ভাতাসহ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তো ওয়েজ বোর্ড দিয়েছি। মালিকদের দায়িত্ব ওয়েজ বোর্ড কার্যকর করা। তাদের বলব, খালি টাকা কামালে হবে না। যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনাদের সার্ভিস দেয়, তাদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টিও দেখতে হবে। জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের মনোনয়নের যোগ্যতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জনগণের কাছে কার গ্রহণযোগ্যতা বেশি; মানুষের সঙ্গে কারা কাজ করেছে; কারা মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে– মনোনয়নে আমরা সে বিষয়টি মাথায় রাখি। আমি তো ছয় মাস পরপর জরিপ করি। সেখানে কারও অবস্থান খারাপ এলে তাঁকে সতর্কও করে দিই।

যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র সফর প্রসঙ্গে

এর আগে লিখিত বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরের বিস্তারিত দিক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওয়াশিংটন সফরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা হয়। আমি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সরকারের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছি। তিনি বলেন, এবারের জাতিসংঘ অধিবেশনে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব আর্থসামাজিক অগ্রগতি, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয়দানের উদারতা এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে আমাদের সুদৃঢ় নেতৃত্ব ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে। আমাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বহুপক্ষীয় ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থানকে যেমন আরও সুদৃঢ় করেছে, তেমনি বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও বিস্তৃত করবে বলে আমি আশাবাদী। সামগ্রিক বিবেচনায় এবারের অধিবেশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ অত্যন্ত সফল বলে আমি মনে করি।

আরও দেখুন

লালপুরে কুরেছান বেগমের ইন্তেকাল 

নিজস্ব প্রতিবেদক লালপুর,,,,,,,,,,,,,,দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার নাটোরের লালপুর প্রতিনিধি ও মডেল প্রেসক্লাবের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সাহীন …