নিউজ ডেস্ক:
রাজধানী ঢাকায় দুদিনব্যাপী বিশ্ব শান্তি সম্মেলন আগামী ৪ ডিসেম্বর শুরু। সারাবিশ্বে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এই সম্মেলন শুরু হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসেবে এর আয়োজন করা হয়েছে।
সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কবি, সাহিত্যিক, নোবেল বিজয়ী, শিক্ষাবিদ, মানবাধিকারকর্মী, চলচ্চিত্রকার, থিংক ট্যাংক ও সাবেক রাজনীতিকগণকে। ট্র্যাক ১.৫ ফরম্যাটে সাজানো হয়েছে সম্মেলনটি। সশরীরে ও ভার্চুয়ালি দুইভাবেই অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে শতাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ৬০ থেকে ৬৫ জনের মতো আমন্ত্রিত অতিথি ঢাকায় সশরীরে এ সম্মেলনে যোগ দেবেন। এ ছাড়া ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন ৩৪ জনের মতো অতিথি। ভার্চুয়ালি যুক্ত হওয়া অতিথিদের মধ্যে রয়েছেন- জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন, সিঙ্গাপুরের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গোহ চক তং, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ভারতের কৈলাশ সত্যার্থীসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
সম্মেলনে সশরীরে উপস্থিত থাকবেন- শ্রীলঙ্কান ইউনিভার্সিটি অব কলম্বোর ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর চান্দ্রিকা এন ওয়াজেয়ারতেœ, ভারতের সৃজনশীল চলচ্চিত্রকার গৌতম ঘোষ, ভারতের সাবেক মন্ত্রী সুরেশ প্রভুসহ আরও অনেকে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্ভরশীল সূত্রে জানা গেছে, শান্তি সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ। সম্মেলনের সমাপনী দিনে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য চারটি প্যানেল আলোচনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সম্মেলনের শুরুর দিন দুটি এবং সমাপনী দিনে দুটি প্যানেল আলোচনা হবে।
আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে কারা থাকছেন জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা এটিকে দুটি ভাগে সাজিয়েছি। সশরীরে ও ভার্চুয়ালি। মূলত, এখানে শান্তি নিয়ে কাজ করছেন এমন ব্যক্তিদের দাওয়াত দেয়া হয়েছে। যেমন- কবি, সাহিত্যিক, মানবাধিকারকর্মী, প্রফেসর, নোবেল বিজয়ী, থিংক ট্যাংক, সাবেক রাজনীতিবিদসহ আরও অনেকেই আছেন আমন্ত্রিতদের তালিকায়।
সশরীরে ৬০ থেকে ৬৫ জনের মতো অতিথি আসার কথা রয়েছে। তবে বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে ইউরোপে কোভিড বেড়ে যাওয়ায় অনেকে আসতে পারছেন না। ভার্চুয়ালি ৩৪ জনের মতো যুক্ত হবেন বলে আশা করছি। এখানেও একটা সমস্যা হচ্ছে অনেকে সময় দিতে পারছেন না।
‘বর্তমানে রাজনীতিতে সক্রিয় এমন ব্যক্তিদের খুব একটা দাওয়াত দেয়া হয়নি’ উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ধর্মীয় ইস্যুতে ভ্যাটিকান থেকে প্রতিনিধি পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে, ওয়ার্ল্ড পিস কাউন্সিল থেকে কিছু ব্যক্তিকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে।’
সম্মেলন সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে স্মরণীয় করে রাখতে চাই। সে জন্য আমরা বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করেছি। প্রথমে আমরা সশরীরে এটি করার চিন্তা করলেও ইউরোপ-আমেরিকায় কোভিড বেড়ে যাওয়ায় দুই ধরনই রাখা হয়েছে। আমরা অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিকে আনতে চেয়েছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এত লোক আনতে গেলে সবাইকে কথা বলার সুযোগ দিতে পারব না।
সম্মেলনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধু সারা জীবন শান্তির জন্য কাজ করেছেন। শান্তির প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তির ধারক ও বাহক। সে জন্য আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করা হয় ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’। আমরা সম্মেলনে এগুলো তুলে ধরব। বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, আমাদের প্রধানমন্ত্রীও শান্তির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি দেশে ও বিদেশে শান্তিপূর্ণভাবে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করছেন। এই যে শান্তির প্রতি তারও অগাধ বিশ্বাস, এটি আমরা বিশ্বে ছড়িতে দিতে চাই।
বিশ্ব শান্তি সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে ‘সিনেমা ফর পিস’ নামের চলচ্চিত্র উৎসবের। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) শাব্বির আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিশ্ব শান্তিতে আমাদের অনেক অবদান আছে। জাতিসংঘে তথা শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের নারী-পুরুষরা অবদান রাখছেন।
সিনেমা ফর পিস ॥ ঢাকায় বিশ্ব শান্তি সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে ‘সিনেমা ফর পিস’ নামের দুই দিনব্যাপী চলচ্চিত্র উৎসবের। জাতীয় জাদুঘরের বেগম সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ২৯ ও ৩০ নবেম্বর (আজ সোম ও আগামীকাল মঙ্গলবার) এ উৎসব হবে। উৎসবে চারটি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। সেগুলো হলো – ব্যালাড অব আ সোলজার, দ্য ক্রেনস আর ফ্লাইয়িং, ওয়ার অ্যান্ড পিস ও অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত¡াবধানে এবং জাতীয় জাদুঘর ও রেইনবো ফিল্ম সোসাইটির আয়োজনে এ সব চলচ্চিত্র দেখতে দর্শকদের কোন ফি দিতে হবে না।