নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে একের পর এক ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে আলোড়ন তৈরি হয়েছে সম্প্রতি। ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের মুখে ইতোমধ্যে সরকার আইন সংশোধন করেছে। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সারাদেশে সমাবেশও করেছে পুলিশ। এবার ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন রোধে ‘হটলাইন’ চালু ও ‘কুইক রেসপন্স টিম’ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তেজগাঁওয়ে উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) অধীনে থাকবে এ টিম। শিগগির ‘কুইক রেসপন্স টিম’ মাঠে নামানো হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ডিএমপির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরীর যে কোনো জায়গায় নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে এ টিমের সহায়তা নিতে পারবে। এ টিমের কয়েকটি মোবাইল নম্বর থাকবে, যেসব নম্বরে যোগাযোগ করলেই তাৎক্ষণিক সেবা পাওয়া যাবে। এর মাধ্যমে ৯৯৯-এর মতো জরুরি সেবা দেওয়া হবে। গতকাল রবিবার রাজারবাগ পুলিশলাইনসে ডিএমপির মাসিক অপরাধ পর্যালোচনাসভায় কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম এ টিম গঠনের কথা জানিয়েছেন।
ডিএমপির একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, সভায় মাদক প্রতিরোধ, কিশোর গ্যাং কালচার রোধে ডিএমপির বিট পুলিশিংকে কার্যকর কথাও বলেন ডিএমপি কমিশনার। কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে গাফিলতি থাকলে সংশ্লিষ্ট বিট পুলিশের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুশিয়ারি করেন তিনি।
ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম সভায় বলেন, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে থানার প্রতিটি বিটে সমাবেশ করে জনগণকে সচেতন করতে হবে। ডিএমপির বিট পুলিশের ডিসি-এডিসি পদমর্যাদার কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। নারীদের কাছ থেকে তাদের
সমস্যাগুলো শুনতে হবে। এ ধরনের সমস্যা নিয়ে তাদের মতামত নিতে হবে। এ বিষয়ে করণীয় কী হতে পারে সেটি সরাসরি তাদের মুখ থেকে শুনে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সভায় মাদক প্রতিরোধ, কিশোর গ্যাং কালচার রোধে ডিএমপির বিট পুলিশিংয়ের কার্যক্রম নিয়েও কথাও বলেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের ব্যাপারে অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের অবস্থান, গতিবিধি, ইভটিজিং ও মাদকসেবনের স্থান নজরদারির মধ্যে আনতে হবে বিট অফিসারদের। এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট বিট অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিয়মিত ঢাকা মহানগরে চেকপোস্ট বসানোর নির্দেশনা দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনার বলেন, নিয়মিত চেকপোস্টের পাশাপাশি পূর্ণোদ্যমে অস্থায়ী চেকপোস্ট বসাতে হবে। ফ্লাইওভারগুলোতে ওঠানামার জায়গায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে। ছিনতাই প্রতিরোধে ডিএমপি কমিশনার বলেন, গাড়ি ও মোটরসাইকেল চুরি প্রতিরোধে প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিডিএমএস) ও সাসপেক্ট আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেমের (এসআইভিএস) মতো সফটওয়্যার হালনাগাদ করে চোর বা ছিনতাইকারীদের তালিকা করে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। গাড়ি ও মোটরসাইকেল ট্রাকিং সিস্টেমের আওতায় এলে চুরি ও ছিনতাই অনেকাংশে কমে যাবে। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশসহ ঢাকা মহানগরের রাস্তায় কোনো ধরনের ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে না বলে জানান ডিএমপি কমিশনার।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের গত ৯ মাসে ৯৭৫ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যাকা-েরও শিকার হয়েছে অনেকে। অবশ্য এ হিসাবের চেয়েও বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। কারণ অনেকেই ধর্ষণের শিকার হয়েও মানসম্মানের ভয়ে বিষয়টি গোপন করে রাখে। সেগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় না।