নিউজ ডেস্ক:
আফগানিস্তানে তালেবান কর্তৃপক্ষ বা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে কি হবে না, সে বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান হলো তাড়াহুড়া না করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা। বিশেষ করে, তালেবানকে আফগানিস্তানের জনগণ কতটা গ্রহণ করছে এবং তালেবান নারীর অধিকারসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর অধিকার কতটা মেনে চলছে, সে বিষয়টি আমলে নেওয়া। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদও প্রায় একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব আনতে যাচ্ছে। চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে এই প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
জানা গেছে, জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের চলতি অধিবেশনে আফগানিস্তান ইস্যুতে একটি প্রস্তাব আনছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইউরোপীয় দেশগুলোর পক্ষে স্লোভেনিয়া ওই প্রস্তাবের খসড়া সম্পর্কে মানবাধিকার পরিষদের সদস্যদের অবহিত করেছে। ফ্রান্স, জার্মানি, সুইডেনসহ ৩৭টি দেশ খসড়া প্রস্তাবটির স্পন্সর হয়েছে।
গত ১৬ আগস্ট আফগানিস্তান প্রশ্নে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ‘প্রেস স্টেটমেন্টকে’ আমলে নিয়ে মানবাধিকার পরিষদে ১৭ দফা প্রস্তাব আনা হচ্ছে। মানবাধিকার পরিষদের ওই প্রস্তাবে আফগানিস্তানে ভবিষ্যতে যেকোনো সরকারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কতগুলো বিষয় আমলে নিতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে, আফগান সরকার বা কর্তৃপক্ষ নারী, শিশু, বিভিন্ন ধর্মীয়, নৃগোষ্ঠীসহ সব আফগান নাগরিকের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা, আইনের শাসন, মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে কতটা সম্মান জানাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে বাধ্যবাধকতাগুলো আফগানিস্তান কতটা মেনে চলছে, সে বিষয়ে দৃষ্টি দিতে বলা হয়েছে।
প্রস্তাবে আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন ও সব ধরনের নিপীড়নের, বিশেষ করে বিচারবহির্ভূত হত্যা, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর সহিংসতার সর্বোচ্চ জোরালো ভাষায় নিন্দা জানানো হয়েছে। খসড়া প্রস্তাবে আফগানিস্তানে অনতিবিলম্বে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। নারী, শিশুসহ আফগানিস্তানের সবার পূর্ণ মানবাধিকারের প্রতি দ্ব্যর্থহীন অঙ্গীকার রয়েছে খসড়া প্রস্তাবে।
নারী ও কন্যাশিশুদের ওপর সব ধরনের সহিংসতার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, এগুলো নারী ও শিশুর মৌলিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন ও নিপীড়ন হিসেবে গণ্য হতে পারে। খসড়া প্রস্তাবে প্রত্যেকের সাংস্কৃতিক জীবনে অংশ নেওয়ার অধিকারকে সম্মান জানানোর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সম্পদকে লক্ষ্য করে বেআইনি সামরিক উদ্যোগ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো দ্রুত, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত, সবাইকে নিয়ে সরকার গঠন এবং আফগান জনগণের জীবনমান উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান রয়েছে প্রস্তাবে। এ ছাড়া ভবিষ্যৎ আফগান সরকারকে জাতিসংঘের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
খসড়া প্রস্তাবে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরকে আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে সম্পৃক্ত থাকা এবং মানবাধিকার পরিষদকে আফগানিস্তান পরিস্থিতি অবহিত করতে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।