সম্প্রতি হঠাৎ করেই ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে রাজধানী সহ সারা দেশে।
শুধুমাত্র গত এক মাসেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন
হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩ শতাধিক মানুষ। এর মধ্যে মারা গেছেন এখন
পর্যন্ত ৫ জন। ফলশ্রুতিতে অনেকেই ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। তবে
বিশেষজ্ঞদের মতে ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতাই পারে ডেঙ্গু প্রতিরোধ
করতে।
ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত একটি সংক্রামক রোগ যা ডেঙ্গু ভাইরাসের (A. Aegypti
ভাইরাস) কারণে হয়। এডিস নামক এক ধরণের মশার কামড়ে এ রোগ হয়। ডেঙ্গু জ্বর
প্রতিরোধের মূলমন্ত্রই হলো এডিস মশার বিস্তার রোধ এবং এই মশা যেন কামড়াতে
না পারে, তার ব্যবস্থা করা। এডিস মশা সাধারণত অভিজাত এলাকায় বড়ো বড়ো
দালানকোঠায় এরা বসবাস করে থাকে। স্বচ্ছ পরিষ্কার পানিতে এই মশা ডিম পাড়ে।
ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত ড্রেনের পানি এদের পছন্দসই নয়। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে
এডিস মশার ডিম পাড়ার উপযোগী স্থানগুলোকে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং একই সাথে
মশক নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ রোগ থেকে বাঁচার
একমাত্র উপায় হলো ব্যক্তিগত সতর্কতা এবং এডিশ মশা প্রতিরোধ করা।
ঘরবাড়ি ও এর চারপাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ক্যান, টিনের কৌটা, মাটির
পাত্র, বোতল, নারকেলের মালা ও এ-জাতীয় পানি ধারণ করতে পারে, এমন পাত্র
ধ্বংস করে ফেলতে হবে, যেন পানি জমতে না পারে। গোসলখানায় বালতি, ড্রাম,
প্লাস্টিক ও সিমেন্টের ট্যাঙ্ক কিংবা মাটির গর্তে চার-পাঁচ দিনের বেশি কোনো
অবস্থাতেই পানি জমিয়ে রাখা যাবে না। পরিষ্কার ও স্থবির পানিতে ডেঙ্গুর
জীবাণু বেশি জন্মায়। ঘরের আঙিনা, ফুলের টব, বারান্দা, বাথরুম, ফ্রিজের নিচে
ও এসির নিচে জমানো পানি নিয়মিত পরিষ্কার করা, যাতে মশা বংশবৃদ্ধি করতে না
পারে।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী সাধারণত ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ভালো
হয়ে যায়। তবে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই চলতে হবে, যাতে
ডেঙ্গুজনিত কোনো গুরুতর জটিলতা না হয়। সাধারণত লক্ষণ বুঝেই চিকিৎসা দেওয়া
হয়। ডেঙ্গু জ্বর সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হবে। যথেষ্ট
পরিমাণে পানি, শরবত, ডাবের পানি ও অন্যান্য তরলজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে
হবে। খেতে না পারলে দরকার হলে শিরাপথে স্যালাইন দেওয়া যেতে পারে। জ্বর
কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামলজাতীয় ব্যথার ওষুধই যথেষ্ট। অ্যাসপিরিন বা
ডাইক্লোফেনাক-জাতীয় ব্যথার ওষুধ কোনোক্রমেই খাওয়া যাবে না। এতে রক্তক্ষরণের
ঝুঁকি বাড়বে। জ্বর কমানোর জন্য ভেজা কাপড় দিয়ে গা মোছাতে হবে।
ডেঙ্গুজ্বর সাধারণত এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি শরীরে
জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। সাধারণভাবে এই জ্বরে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
ডাক্তারের পরামর্শ মেনে সঠিকভাবে চললে কয়েক দিনেই ডেঙ্গুরোগী সম্পূর্ণ
সুস্থ্য হয়ে যায়। যেহেতু এ রোগের কোন ভ্যাকসিন নেই, তাই মশার সংখ্যা
বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ নষ্ট করা, মশার সংখ্যাবৃদ্ধি হ্রাস এবং মশার কামড়
থেকে বেচে থাকার মাধ্যমে ডেঙ্গুজ্বরের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
আরও দেখুন
পিরোজপুরে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ে দিনব্যাপীপ্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৩ জুলাই ২০২৪, শনিবার, ঢাকা: মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ে পিরোজপুরের …