প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা৷ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন অনেকেই৷ ডেঙ্গু মোকাবেলায় ইতোমধ্যেই সতর্ক অবস্থানে সরকার। সকল সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করা হচ্ছে বিনামূল্যে, বেসরকারি হাসপাতালে যেন ৫০০ টাকার বেশি না রাখা হয় তার জন্যে দেয়া হয়েছে নির্দেশনা। এর মধ্যে লক্ষণীয়, ডেঙ্গু সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়ানোর ফলে মানুষের মধ্যে তৈরী হয়েছে কিছু ভুল ধারণা। বাংলার আলোর আজকের আয়োজনে দেখুন ডেঙ্গু নিয়ে ছড়ানো যত গুজব ও তার জবাব।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে হারপিক গুজবঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বার্তাটি প্রধানত মেসেজ ইনবক্সের মাধ্যমে ছড়ানো হচেছ। অনেকে না বুঝেই সেটা আবার শেয়ার করছেন৷ আর তাতে বলা হচ্ছে ২রা আগস্ট শুক্রবার জুমার নামাজের পর একযোগে এটা করতে হবে৷ ৫০০ গ্রাম হারপিক ও ৫০০ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার একযোগে ঢাললে ড্রেনে যত মশা আছে সব মরে যাবে। এর কার্যকারিতা জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসয়ান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল কাদের বাংলার আলোকে বলেন,‘‘হারপিক বা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে মশা মারার এই কথাটির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নাই৷ লিকুইড টয়লেট ক্লিনারের উপাদান হলো কিলোলিক কম্পাউন্ড উইথ হাইড্রো কার্বন চেইন৷ এতে অ্যাসিড এবং এন্টিসেপটিক উপাদান আছে৷ ফেনা তৈরির উপাদান আছে৷ ব্লিচিং পাউডার তৈরি হয় ক্যালসিময়াম হাইড্রোক্লোরাইড থেকে৷ এর কোনেটিতেই মশা মরার উপাদান নেই৷ মশা মরার জন্য নিমের উপাদান থাকতে হয়৷ নিমপাতার রস ছিটিয়ে দিলে মশা মরে যায়। নিম পাতার কাছে মশা আসে না৷”
এডিস মশা কি শুধু পায়েই কামড়ায়ঃ এডিস মশা শুধু মানুষের পায়েই কামড়ায় – সম্প্রতি বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয়টি ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এডিস মশা যে শুধু পায়ে কামড়ায় – এই দাবি ভিত্তিহীন। মশা সাধারণত মানুষের পায়েই কামড়ায়, কারণ সাধারণত শরীরে পাগুলোই অনাবৃত থাকে। তবে শুধু যে পায়েই মশা কামড়ায়, বিষয়টি এরকম নয়।
এডিস মশা কি শুধু দিনে কামড়ায়ঃ এটিও একটি সম্পন্ন বাক্য নয়। সাধারণত সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এডিস মশা কামড়ায়। তবে কামড়ানোর হার সবচেয়ে বেশি থাকে সূর্যোদয়ের পর দুই-তিন ঘন্টা এবং সূর্যাস্তের আগের কয়েক ঘন্টা। তবে রাতের বেলাও আলোতে এডিস মশা কামড়াতে পারে।
এডিস মশা মানেই ডেঙ্গু নয়ঃ এডিস মশা কামড়ালেই ডেঙ্গু হয়- বিষয়টি এমন নয়। পরিবেশে উপস্থিত ভাইরাস এডিস মশার মধ্যে সংক্রমিত হলে সেই মশার কামড়ে ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এডিস সাধারণত একাধিক ব্যক্তিকে কামড়ায়। ডেঙ্গু ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির শরীর থেকে এডিস মশার মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার পর ঐ মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয়।
এডিস মশার জন্মস্থানঃ এডিস মশা ড্রেনে ও ময়লা পানিতে জন্মায় না। সাধারণত এটি ডিম পাড়ে স্বচ্ছ পানিতে। বাড়ির ছাদে কিংবা বারান্দার ফুলের টবে, নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন পয়েন্টে, রাস্তার পাশে পড়ে থাকা টায়ার কিংবা অন্যান্য পাত্রে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে।
রক্তদানে ডেঙ্গু হয়নাঃ ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে রক্ত দানের মাধ্যমে ডেঙ্গুর ভাইরাস ছড়ায় না। রক্তের গ্ৰুপ মিলে গেলে এবং সামর্থ্য থাকলে রক্ত দিন, জীবন বাঁচান।