ডেংগু প্রসঙ্গে কিছু প্রয়োজনীয় কথা
শাহিনা খাতুন
আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় আমরা পরিবর্তন আনতে চাইনা। অবশ্য পুরাতনকে আকড়ে ধরা আমাদের মানুষস্বভাব। যেমনঃ
১.চারিদিকে যাই ঘটুক না কেন ঈদে বাড়ি যেতেই হবে।
২.অন্যের দায়িত্ব কর্তব্য চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে অভ্যস্ত কিন্তু নিজের দায়িত্ব পালনে উদাসীন।
৩.আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করিনা যতক্ষণ না নিজে পরিস্থিতির শিকার না হই।
৪.ডেংগুজ্বর থেকে বাঁচতে হলে একে অন্যের দোষ দিলে হবেনা। বরং সবাই মিলে মোকাবেলা না করলে কে কখন আক্রান্ত হবে সেটা কেউ ধারনা করতে পারবেনা। ধরুন আমার প্রতিবেশী সচেতন হয়ে ব্যবস্থা নিল আমি নিলামনা। এতে কোন লাভ হবেনা। দুজনই আক্রান্ত হওয়ার দূর্ভাবনা থাকবে।
আমাদের যা করা উচিৎ
১.ঢাকার বাইরে যতটা সম্ভব না যাওয়া। কারন গাড়ী, কাপড়-চোপড়, যে কোন কিছুর সাথে মশা চলে যেতে পারে। আবার শরীরে করে কেউ জীবানু বহন করে নিতে পারে। আমাদের দেশে ডাক্তারের তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশী। ইতোমধ্যে কয়েকজন ডাক্তার মারা গেছেন। প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেলে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কঠিন হয়ে যাবে।
২. নিজের বাড়ি ঘর অফিস আঙিনা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের বলে মনে করেন। এটা ঠিক নয়।এক্ষেত্রে প্রত্যেক সপ্তাহে একদিন পরিচ্ছন্ন দিবস ঘোষণা করে সবাই মিলে পরিস্কার করতে পারেন। বিষয়টি পরীক্ষিত। শুরু করে দেখুন কাজে লাগবে।
৩. সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ভোররাত ৪-৫ টার মধ্যে রাস্তা ঝারু দেয় আর ব্যবসায়ী দোকানদার প্রতিষ্ঠান এর লোকজন দশটার দিকে ঝারু দিয়ে ময়লা রাস্তায় ফেলে রাখে। সারাদিন বাতাসে ময়লাগুলো ছড়িয়ে যেতে থাকে।
৪. ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা না ফেলে আশপাশে ফেলে চলে যায়। এতে ঐ ময়লা ল্যান্ডফিল্ড পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে যায়।
৫.গাড়ী থেকে বাদাম খেয়ে বাদামের খোসা,চকলেটের খোসা,চিপসের প্যাকেট রাস্তায় ফেলে চলে যাই। ড্রেনের মধ্যে ময়লা ফেলে ড্রেনেজ ব্যবস্থা নষ্ট করে ফেলি।
৬. আমরা সব ধরনের ময়লা এক জায়গায় ফেলি। এমনকি কাঁচের টুকরা ব্লেড সুঁচ জাতীয় ময়লা গুলোও আমরা ডাস্টবিনে ফেলি। অনেক পরিচ্ছন্নতা কর্মী আহত হয় আমরা সে খেয়াল করিনা।
৭.সবাই মিলে এ সমস্যা মোকাবেলা করা।
৮.ব্যবসায়ীদের উচিৎ এ সময় তাদের অধিক লাভের চিন্তা না করে সততা সহমর্মিতা দেখিয়ে কীটনাশক, মশা মারার ব্যাট, অডোমাস, প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধের দাম না বাড়ানো এবং কোন প্রকার কৃত্তিম সংকট তৈরি না করা।
৯. বাজারে ডেংগু পরীক্ষার কীটস ঔষধপত্র যথেষ্ট আছে। ডাক্তারগণ দিনরাত পরিবার ভুলে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাধ্যমত সেবা করে যাচ্ছে।
১০. সরকার ইতোমধ্যে অনেক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। দেশের বিপদে দেশের জন্য/মানুষের জন্য কাজ করাই দেশ প্রেম। খুব ছোট জীবন। কে কখন কিভাবে মারা যাবো কেউ জানিনা। আসুন সবাই মিলে একসাথে বিপদ মোকাবেলা করি।
শাহিনা খাতুন
যুগ্মসচিব
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ