নিউজ ডেস্ক:
দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে মোংলা-খুলনা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের শেষ মুহূর্তের কাজ। হঠাৎ বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে এ প্রকল্পের কাজে সাময়িক ধীর গতি থাকলেও নতুন করে আবারো গতি ফিরেছে এ প্রকল্পে। ইতোমধ্যেই রেললাইন, টেলিকমিউনিকেশন, সিগনালিং ও রুপসা নদীতে সেতু নির্মাণসহ প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অবকাঠামোর অগ্রগতির কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আর বাকী কাজ সম্পন্ন হতে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগছে। এদিকে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে কয়েকগুণ।
মোংলা-খুলনা রেললাইন প্রকল্প পরিদর্শনে বাংলাদেশ এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন রেলওয়ে বিভাগের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার। ছবি- ইত্তেফাক
শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে মোংলা-খুলনা রেললাইন প্রকল্প পরিদর্শনে এসে বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার চলমান কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মোংলা-খুলনা রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করেই যে কোনদিন চালু করে দেয়া হবে এ রেললাইন।
জানা গেছে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধিতে বন্দরকে সংযুক্ত করে মোংলা-খুলনা রেল লাইন প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। গত ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন হয়। জমি অধিগ্রহণ, রেল লাইন ও রেল সেতু নির্মাণসহ সমগ্র প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এরপর পাঁচবার সময় বাড়িয়ে সর্বশেষ ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধির প্রস্তাবও অনুমোদিত হয়েছে। এরই সাথে ব্যয় বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
মোংলা-খুলনা রেললাইন প্রকল্প পরিদর্শনে বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার। ছবি- ইত্তেফাক
চলমান এ প্রকল্পের ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ‘ইরকন ইন্টারন্যাশনাল’ এর প্রজেক্ট ম্যানেজার বলরাম দে জানান, এ রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পে ছোট বড় মিলিয়ে ৩১ টি ব্রিজ ও ১০৮ টি কালভার্ট নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। রুপসা নদীর উপর রেল সেতুর কাজ ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। পাইলিংয়ের কাজ প্রায় সম্পন্ন। এরপর মাত্র দুইটি স্প্যান জোড়া লাগবে। এছাড়া এখনও ৯ টি ভেকুলার আন্ডারপাসের কাজ বাকী আছে। এগুলোর ড্রইং হাতে এলে দ্রুত শেষ করা হবে এ কাজ।
মোংলা-খুলনা রেল লাইন নির্মাণ কাজের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. আরিফুজ্জামান জানান, রেলপথের কিছু অংশ, রেল সেতুর পাঁচ শতাংশ ও ফিনিশিং ওয়ার্ক বাকি আছে। তবে নতুন ডিজাইনের নয়টি রোড আন্ডারপাস নির্মাণ, পাইলের লেন সংখ্যা বৃদ্ধি ও মাটির কাজসহ নতুন কিছু কাজ সংযোজন হয়েছে। সে হিসেবে পূর্বের একশ শতাংশ কাজের সঙ্গে আরও ১২ শতাংশ কাজ বেড়েছে। বর্তমানে রেল লাইনের মুল ভৌত অবকাঠামোর ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হবে। সময় বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, করোনাকালে ভারত থেকে মালামাল আসতে ও নানা সংকটে শুরুতেই নির্মাণ কাজে বিলম্ব হয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, চলমান এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মোংলা বন্দরের গতি আরও সঞ্চার হবে। মোংলা বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড় ও বাংলাবান্ধা হয়ে ভারতে শিলিগুড়ির রেল যোগাযোগ। ফলে কম খরচে ভারত, নেপাল ও ভুটানের মালামাল পরিবহণ সহজ হবে। এতে করে আমদানি- রপ্তানি বৃদ্ধির সঙ্গে কন্টেইনার সার্ভিসও বাড়বে।