নিউজ ডেস্ক:
তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১ জেলায় ডিজিটাল ভূমি নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে ৫০৫টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এই সেবা চালু করতে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় (একনেক) অনুমোদনের জন্যও পাঠানো হয়েছে। এ জন্য নতুন অর্থবছরে আইন মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন বাজেটে রাখা হয়েছে বিশেষ বরাদ্দ। অনুমোদন পেলে ২০২৪ সালের প্রথম দিকেই প্রকল্পটি চালু করতে চায় আইন মন্ত্রণালয়।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০২০-২১ অর্থবছরে ‘ভূমি নিবন্ধন ব্যবস্থাপনা ডিজিটাইজেশনে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পরে এর আওতায় ২০২১ সালে দেশের ১৭টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে পরীক্ষামূলক ডিজিটাল ভূমি নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। পাইলট প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক হওয়ায় দেশের ৬১ জেলার সব সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ডিজিটাল ভূমি নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করার যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে প্রকল্পের বাইরে রাখা হয়েছে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি। দেশে বর্তমানে ৪৯৫টি উপজেলায় ৫০৫টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস রয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিজিটাল নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু হলে কাগজের ভলিউমের পরিবর্তে অনলাইনে দলিল রেজিস্ট্রেশনের পাশাপাশি ডিজিটাল পদ্ধতিতে রেকর্ড সংরক্ষণ করা হবে। একই সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত সব নথিপত্র (নামজারি ও ভূমি উন্নয়ন কর) যাচাই করা হবে সফটওয়্যারের মাধ্যমে। এর ফলে জাল-জালিয়াতির সুযোগ বন্ধ হবে। এ ছাড়া ডিজিটাল ভূমি রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থা চালু হলে দলিল প্রস্তুত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাবেন দলিল গ্রহীতা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভূমি নিবন্ধন কার্যক্রম ডিজিটাল করতে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা ১৭টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সমীক্ষা কার্যক্রম চালিয়েছি। সমীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক হওয়ায় এখন তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১ জেলায় এই কার্যক্রমটি শুরু করতে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি অনলাইনে ভূমি নিবন্ধনের ফলে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন ও জাল খতিয়ানের মাধ্যমে দলিল নিবন্ধন বন্ধ হয়েছে। কোনোরকম জটিলতা ছাড়াই নির্ভুলভাবে দলিল দাতা এবং গ্রহীতার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হচ্ছে। সরকারি রাজস্ব আদায়ও গতিশীল হয়েছে।’ তিনি জানান, ‘সারা দেশের রেকর্ড রুমে রক্ষিত বালাম বইগুলো আর্কাইভে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ে শৃঙ্খলা আসবে এবং জাল-জালিয়াতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।’ প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভূমি নিবন্ধন কার্যক্রম ডিজিটাল করার লক্ষ্যে একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি এটি শিগগিরই একনেকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। তিনি আরও বলেন, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসকে নিজস্ব প্রশাসনিক এখতিয়ারের মধ্যে রেখে ইতোমধ্যে আন্তসংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে অনলাইনে ভূমি নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।
মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২১ সালের ১০ জুন থেকে ২০২৩ সালের ১৩ জুন পর্যন্ত পাইলট প্রকল্পের আওতায় ১৭টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ৭৮ হাজার ১৯৫টি দলিল ই-রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতিতে নিবন্ধিত হয়েছে। বর্তমানে ঢাকার উত্তরা, খিলগাঁও, গুলশান ও সাভার; চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও পাহাড়তলী; নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, কুষ্টিয়ার কুমারখালী, টাঙ্গাইলের বাসাইল ও নাগরপুর, রাজশাহীর চারঘাট, সিলেটের তাজপুর, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর, ময়মনসিংহের নান্দাইল এবং বরিশালের হিজলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ডিজিটাল ভূমি নিবন্ধন কার্যক্রম কার্যকর রয়েছে। পাইলট প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এই ১৭ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ডিজিটাল ভূমি নিবন্ধন কার্যক্রম সচল রয়েছে। নিবন্ধন অধিদফতর সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে সারা দেশে ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ১৯৭টি দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে এবং মোট রাজস্ব আয় হয়েছে ১১ হাজার ৬০১ কোটি ৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ আয় হয়েছে ৮ হাজার ১১১ কোটি ১৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা ও স্থানীয় সরকার কর বাবদ আয় হয়েছে ৩ হাজার ৪৮৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এর আগে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সারা দেশে ৩৪ লাখ ৭৪ হাজার ৬৯৬টি দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে এবং এ খাত থেকে মোট রাজস্ব আয় হয়েছে ১২ হাজার ২৯২ কোটি ৮৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে রেজিস্ট্রেশন বাবদ আয় ৯ হাজার ৩৩৯ কোটি ৪১ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং স্থানীয় সরকার কর বাবদ আয় ২ হাজার ৯৫৩ কোটি ৪৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। গত দুই অর্থবছরের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায় রাজস্ব আদায় ক্রমশ বাড়ছে।