নিজস্ব প্রতিবেদক:
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০২০’ এবার ভার্চুয়াল ও ভৌত উভয় অবকাঠামো ব্যবহার করে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী ৯ থেকে ১১ ডিসেম্বর ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। সপ্তমবারের মতো এই আয়োজনে বিভিন্ন পর্বে অনুষ্ঠিত হবে। করোনা মহামারীর কারণে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের অনেক কর্মসূচীতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে মূল উদ্দেশ্য ঠিক রাখা হবে। রবিবার আগারগাঁওয়ে আইসিটি টাওয়ারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক প্রদর্শনীর বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক পার্থপ্রতিম দেব, বেসিসের সভাপতি আলমাস কবির, আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রীনা পারভীন উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী জানান, বিগত ১২ বছরে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিভিন্ন উন্নয়ন তুলে ধরা হবে প্রদর্শনীতে। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ব্যবসায় দেশী-বিদেশী সম্ভাবনাগুলোর সঙ্গে দেশীয় উদ্যোক্তাদের সংযোগ সৃষ্টির সুযোগ তুলে ধরা হবে। ১০ ডিসেম্বর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে কনফেরেন্স। কনফারেন্সে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এবারের প্রদর্শনীতে বিষয়ভিত্তিক ২৪টি সেমিনার হবে। ১১ ডিসেম্বর প্রদর্শনীর অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে থাকবে ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে একটি বিশেষ সেমিনার। এই সেমিনারে উপস্থিত থাকবেন ডব্লিউএইচওর মেন্টাল হেলথ বিষয়ক এক্সপার্ট এ্যাডভাইজরি প্যানেলের সদস্য এবং অটিজম বিষয়ক ন্যাশনাল এ্যাডভাইজরি কমিটির চেয়ারপার্সন সায়মা ওয়াজেদ। ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় হবে সমাপনী অনুষ্ঠান। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। অনুষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি অঙ্গনে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য ১২ ক্যাটাগরিতে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড সম্মাননা দেয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে আরও থাকছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভার্চুয়াল মুজিব কর্নার। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের আয়োজনকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে কনসার্ট। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে অংশ নিতে www.digitalworld.org.bd ওয়েবসাইটে ঢুকে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন হওয়ার পর ভার্চুয়াল ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড দেখতে এ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে।
এদিকে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড প্রদর্শনী শেষ হওয়ার পরের দিন ১২ ডিসেম্বর পালন করা হবে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। তবে এই উদযাপনে আনা হয়েছে বড় ধরনের পরিবর্তন। আর এই পরিবর্তনের পেছনে করোনা মহামারী। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটলে এবারের ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস উদযাপনের কর্মসূচীতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। এবারের ‘যদিও মানছি দূরত্ব, তবুও আছি সংযুক্ত’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ১২ ডিসেম্বর চতুর্থবারের মতো দেশের জেলা-উপজেলা এবং বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে দিবসটি ভার্চুয়ালি উদযাপিত হবে। গত শুক্রবার আগারগাঁওয়ে আইসিটি টাওয়ারে এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত কর্মসূচী তুলে ধরেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব এমএন জিয়াউল আলম ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতরের মহাপরিচালক এবিএম আরশাদ হোসেন। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের বিস্তারিত রূপরেখা তুলে ধরে নির্বাচনী ইশতিহার ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করা হয়। সেই থেকে টানা তৃতীয়বারের মতো ধারাবাহিকভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ। ডিজিটাল বাংলাদেশের ইশতেহারকে স্মরণীয় করে রাখতে গত তিন বছর ধরে প্রতিবছর ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস পালন করে আসছে আইসিটি ডিভিশন।
সংবাদ সম্মেলনে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী যখন রূপকল্প-২০২১‘র মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা ঘোষণা করেন তখন বাংলাদেশে ছিল একটি নিম্ন্ন আয়ের দরিদ্র রাষ্ট্র। পার ক্যাপিটাল ইনকাম ৫০০ ডলারের নিচে ছিল। মাত্র ৫৬ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারত, মাত্র ৪৪ শতাংশ মানুষ ছিল বিদ্যুত সুবিধার আওতায়। সেই বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের, প্রযুক্তিনির্ভর, ডিজিটাল বাংলাদেশে উন্নীত করার রূপরেখা অনেকেই বিশ্বাস করতে পারেনি, ঠাট্টা তামাশা করেছেন। আজ ১২ বছরের মাথায় সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা আজকে আর কোন রূপকথার গল্প নয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দিবসটি উপলক্ষে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ১২ বছরের সাফল্য ও অর্জন তুলে ধরে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দৈনিকে ক্রোড়পত্র প্রকাশ, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে টকশো প্রচার, দিবসটির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তুলে ধরে বাংলা ও ইংরেজীতে দুইটি ওয়েবিনার, কেন্দ্রীয়ভাবে অনলাইনে কুইজ প্রতিযোগিতা, জেলা ও উপজেলায় ডিজিটাল বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক রচনা, উপস্থিত বক্তৃতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সভা সেমিনার, কর্মশালা, সচেতনতামূলক নাটিকা পরিবেশন, শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তাদের পুরস্কার দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ১২ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৭টায় আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। সকাল ১০টায় চতুর্থ ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসের উদ্বোধনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শুরু হবে। সরাসরি ও ভার্চুয়াল উভয় ধরনের আয়োজন থাকবে তাতে।
বিকেল ৩টায় শুরু হবে ভার্চুয়াল জাতীয় সেমিনার। রাত ৮টায় একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করা হবে। সেমিনারে প্রধান অতিথি ও কি-নোট স্পীকার হিসেবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ। ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস উপলক্ষে ৮ ডিসেম্বর রাত ৮টায় দেশব্যাপী অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে আগ্রহীদের ২৭ নবেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে www.quiæ.digitalbangladesh.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে।