নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে সরকারের কেনা অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ৫০ লাখ ডোজ আসছে আজ। টিকা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছানোর পর তা সংরক্ষণের জন্য বেক্সিমকোর ওয়্যারহাউসে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারিখে তা জেলা-উপজেলার নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দেবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
এই টিকার বাইরে দেশের ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিতে কর্মরতদের সুরক্ষায় ১০ লাখ ডোজ টিকা আনবে বেক্সিমকো। এদিকে দীর্ঘ বিতর্কের পর করোনাভাইরাস পরীক্ষার অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমতি দিয়েছে সরকার।
গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে সরকার অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার যে ৩ কোটি ডোজ টিকা কিনছে, তার প্রথম চালানের ৫০ লাখ ডোজ টিকা সোমবার (আজ) দেশে আসতে পারে। সেজন্য প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টিকা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশেও সে অনুযায়ী টিকা দেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, টিকার বিষয়ে অনেক ধরনের কথাবার্তা আসছে। কিন্তু একটা জিনিস স্পষ্ট করে বলতে চাচ্ছি, টিকা
নেওয়া মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। বাংলাদেশে কাউকে জোর করে টিকা দেওয়া হবে না। মানুষ স্বাধীনভাবে টিকা নেবে। ভ্যাকসিন নিয়ে আমাদের অনেকে বিদ্রƒপ করছে, এটা ঠিক নয়। মানুষের জীবনের চিন্তা করে আমরা ভ্যাকসিন দিচ্ছি। এটা নিয়ে কোনো রাজনীতি নয়, এটা মজা করার বিষয় নয়। টিকা আনার বিষয়ে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন গতকাল সন্ধ্যায় গুলশানে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তিনি বলেন, আজ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসবে। এগুলো আমাদের সংরক্ষণে নিয়ে যাওয়া হবে। সরকার যেখানে যত ডোজ সরবরাহ করবে আমরা পৌঁছে দেব। ৬৪ জেলার সিভিল সার্জনদের হাতে এ টিকা পৌঁছে দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু কোথায় কখন কত ডোজ যাবে সে তথ্য এখনো জানি না। তিনি আরও বলেন, সরকারের টিকা দেওয়ার অগ্রাধিকার তালিকায় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো নেই। অথচ করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে উৎপাদন, বিপণনে প্রতিদিন এই খাত সংশ্লিষ্ট লাখো কর্মী কাজ করেছেন। ওষুধ শিল্প সমিতির মাধ্যমে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো আমাদের জানিয়েছেন। আমি ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি হিসেবে আছি। তাই এই সংশ্লিষ্ট কর্মী ও তাদের পরিবারের জন্য এই ১০ লাখ ডোজ আনা টিকা এনে দিচ্ছি। এটা বাজারে পাওয়া যাবে না। টিকা আসতেই অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, অনেক দিনের দাবি ছিল অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমতি দেওয়ার। এখন এটা চালু করার অনুমতি দিয়ে দিয়েছি। আজ আপনাদের যখন বললাম, তখন থেকেই এটা চালু হয়ে গেল।’ গত মার্চে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর এ পর্যন্ত শুধু আরটি-পিসিআর টেস্টই চলে আসছিল রোগী শনাক্তের। তবে পরীক্ষায় গতি আনতে অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরুর ওপর জোর দিয়ে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন বা আরটি-পিসিআর পদ্ধতি সংক্রমণ শনাক্তে বিশ্বে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত। তবে এই পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহের পর ফল পেতে বেশ সময় লেগে যায়, খরচও তুলনামূলকভাবে বেশি। তাছাড়া সব জায়গায় এ পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরিও নেই। সেখানে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে আধা ঘণ্টার মধ্যে জানা যায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে কি না। আর শরীরে নির্দিষ্ট কোনো রোগের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না, রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে তা স্বল্প সময়ে জানা যায় অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে। সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর গত বছর জুনে র্যাপিড টেস্টিং অ্যান্টিবডি কিট ব্যবহারের নীতিমালা চূড়ান্ত করলেও তা ব্যবহার বা আমদানির অনুমোদন আর তখন দেওয়া হয়নি। কিন্তু অ্যান্টিবডি টেস্টের বিষয়ে জোর দিয়ে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। দেশে এখন অ্যান্টিবডি পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কিট আছে কি না জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনীয় যা কিট লাগে তা আনা হবে। তবে এই মুহূর্তে সরকারের কাছে কিট আছে কি না- তা এখনো জানা নেই। অ্যান্টিবডি টেস্টের কিট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও আমদানি করতে পারে। বিভিন্ন হাসপাতালে বা সংস্থায় নিতে পারে। কাজেই এখানে বাধা নাই। আমাদের হাসপাতালেও ব্যবহার করতে পারে, অন্যান্য জায়গায়ও ব্যবহার হতে পারে।