শুক্রবার , নভেম্বর ১৫ ২০২৪
নীড় পাতা / অর্থনীতি / টানা তৃতীয় মাসে রেমিট্যান্স-রিজার্ভে নতুন রেকর্ড

টানা তৃতীয় মাসে রেমিট্যান্স-রিজার্ভে নতুন রেকর্ড

নিউজ ডেস্ক:
নতুন অর্থবছরের (২০২০-২১) প্রথম মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত জুলাই মাসে তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ২৬০ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ২২ হাজার ১০০ কোটি টাকা (১ ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, দেশের ইতিহাসে একমাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্সের রেকর্ড এটাই।

এর আগে, মে ও জুন মাসেও রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। মে মাসে এর পরিমাণ ছিল ১৭৪ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, জুনে সেই রেকর্ড ভেঙে ১৮৩ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এবার ৭৬ কোটি ৭০ লাখ ডলারের ব্যবধানে সেই রেকর্ডও ভাঙলো জুলাই মাসে। ফলে টানা তৃতীয় মাসের মতো রেমিট্যান্স নতুন রেকর্ড গড়েছে।

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, রেমিট্যান্সের নতুন রেকর্ডের প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও। এই তিন মাস ধরেই নতুন উচ্চতায় উন্নীত হচ্ছে রিজার্ভ। এর ধারাবাহিকতায় আজ সোমবার (৩ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ পৌঁছে গেছে ৩৭ দশমিক ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। দেশের ইতিহাসে এটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের রেকর্ড।

চলতি বছরের জুনের আগে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রেকর্ড ছিল ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে— ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। পরে গত ৪ জুন প্রথমবারের মতো রিজার্ভ অতিক্রম করে ৩৪ বিলিয়নের গণ্ডি। সে রেকর্ড স্থায়ী হয় ২০ দিন। ২৪ জুন রিজার্ভ ছাড়িয়ে যায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার। পরে ৩০ জুন ৩৬ বিলিয়ন ডলার ও ২৮ জুলাই ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যায় রিজার্ভ। অর্থাৎ গত দুই মাসের মধ্যে রিজার্ভের পরিমাণ চার বার নতুন উচ্চতায় উন্নীত হলো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকারের নানা উদ্যোগের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। রেমিট্যান্সের ওপর সরকারের ২ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা এবং হুন্ডি বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পদক্ষেপ এক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, রেমিট্যান্স বাড়ার পেছনে প্রধান কারণ হতে পারে— অনেক প্রবাসীকে করোনাভাইরাসের কারণে দেশে ফিরে আসতে হতে পারে। এ কারণে প্রবাসীরা দেশে আসার আগে তাদের সঞ্চিত সব টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন। ফলে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়েছে। তবে রেমিট্যান্সের এই প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি আমদানি ব্যয় কমে কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যংকের রিজার্ভ বেড়েছে। এছাড়াও করোনা সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে ২ থেকে আড়াই বিলিয়ন ডলার অনুদান ও ঋণ সহায়তা পাওয়া গেছে। এসব কারণে রিজার্ভ বেড়েছে।

এদিকে, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল রেমিট্যান্সে দেশের অনন্য রেকর্ডে প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় গত অর্থবছরের শুরু থেকে প্রবাসীদের পাঠানো আয়ের ওপর ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে গত বছর ১৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। চলতি অর্থবছরে ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার বাড়তি অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। সামনের দিনে রেমিট্যান্স বৈধ পথে আনতে যত কৌশল অবলম্বন করতে হয়, সেটা আমরা করব।

অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রবাসীদের রয়েছে দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা আর মমত্ববোধ। তাদের টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে যত বাধা রয়েছে, সেগুলো দূর করা হবে।

সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যেও শুধু জুলাই মাসে ২৬০ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। কঠিন সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে শক্তিশালী করেছে। এক্ষেত্রে দেশ ও পরিবারের প্রতি তাদের ভালোবাসা এবং দায়বদ্ধতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। দেশের অর্থনীতির চাকাকে বেগবান রাখতে বড় অবদান রাখছে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স।

অর্থবছরভিত্তিক রেমিট্যান্স

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ ১ হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৬৩১ কোটি  মার্কিন ডলার। এছাড়া, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে এসেছিল ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স।

পঞ্জিকা বছরের হিসাবে, ২০১৯ সালে রেকর্ড ১ হাজার ৮৩৩ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। ২০১৮ সালে দেশে ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এর আগে, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি মার্কিন ডলার, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৬১ কোটি মার্কিন ডলার, ২০১৫ সালে ১ হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটির বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স জিডিপিতে অবদান রেখেছে ১২ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষ ১০টি দেশ হলো যথাক্রমে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, কুয়েত, ওমান, যুক্তরাজ্য, কাতার, ইতালি ও বাহরাইন।

সূত্র: সারা বাংলা

আরও দেখুন

বিএনপির সাবেক এমপি আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে হামলা-দখলের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ,,,,,,,,,,চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক …