বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ অতীতে যে কোন সময়ের তুলনায় বেশি। এতো অল্প সময়ে ডেঙ্গু ছড়িয়ে যাওয়ার মূল কারণ সচেতনতার অভাব। সব ডেঙ্গু জ্বরে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন নেই। প্লাটিলেট অতিরিক্ত কমে না আসলে এবং রক্তক্ষরণ না হলে বাসায় ডেঙ্গুর ট্রিটমেন্ট নেওয়া সম্ভব। তবে ডায়াবেটিস, প্রেসার, কিডনি, হার্ট ও স্ট্রোকের রোগীদের ডেঙ্গু জ্বর হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবা নিতে হবে। এক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে।
‘বাংলার আলো’ এর পাঠকদের জন্যে প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে কিছু পরামর্শ।
ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গু জ্বর অনেক ক্ষেত্রে কম হতে পারে, আবার বেশিও হতে পারে। দেখা যায়, জ্বর তিন/চার দিন পর ভালো হয়ে যায়। তবে প্লাটিলেট কম হতে থাকে। এরপর মাঝখানে একটি বিরতি দিয়ে আবার জ্বর আসে। এ জ্বরের সঙ্গে প্রচণ্ড মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা এবং চোখের পেছনে ব্যথা করবে। জ্বর সাধারণত দুই দিন থাকার পর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় র্যাশ দেখা যায়। জ্বর হলে শুধু প্যারাসিটামল ওষুধ খাবে। এসপিরিন বা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া যাবে না।
* যে কোনো জ্বরে আক্রান্ত রোগী যত বেশি বিশ্রামে থাকবে, যত বেশি তরল খাবার খাবে, তত দ্রুত জ্বর নিয়ন্ত্রণে আসবে। তাই ডেঙ্গুর মূল চিকিৎসা প্রচুর তরল বা পানি গ্রহণ করা, পর্যাপ্ত বিশ্রামে থাকা ইত্যাদি।
* যে কোনো জ্বরে ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপর তাপমাত্রা গেলেই তা কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে সাপোজিটর ব্যবহার করতে হবে।
* প্রচুর পানি, শরবত ও তরল খাবার বেশি দিতে হবে। কোনো অবস্থায়ই শরীরে যেন তরলের ঘাটতি না হয়।
* জ্বর হলে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ খাবেন না। অন্যান্য ওষুধ প্রয়োগ না করাই উচিত।
* কোনো জ্বর তিন দিনের বেশি থাকলে, শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা থাকলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ, তাই এতে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো ভূমিকা নেই।
* চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অন্য কোনো ব্যথার ওষুধ সেবন নয়।
* তীব্র জ্বরের সঙ্গে শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে অবশ্যই বিশ্রাম নিতে হবে।
* জ্বর কমে যাওয়ার পরের কিছু দিনকে বলা হয় ক্রিটিক্যাল পিরিয়ড।
এ সময়টায় সবার সচেতন থাকা খুব জরুরি।
এই চিকিৎসক জানান, ডেঙ্গু কোনো মারাত্মক রোগ নয় এবং এতে চিন্তার কিছু নেই। এই রোগ নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়, তবে মারাত্মক জটিলতা এড়াতে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত। সাধারণ ডেঙ্গুতে মৃত্যুঝুঁকি ১ শতাংশের কম। তিনি বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপের চেয়ে যেন আতঙ্কই বেশি। নরমাল জ্বরেও সবাই ছুটছেন হাসপাতালে। ফলে রাজধানীর সব হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে। তাই জ্বর হলেই হাসপাতালে ভিড় জমানোর প্রয়োজন নেই। তবে ডেঙ্গু জ্বর হলে নিয়মিত প্লাটিলেট পরীক্ষা করাতে হবে। এই ক্ষেত্রে ডেঙ্গু কেন্দ্রিক গুজব ছড়িয়ে আতঙ্কসৃষ্টি না করার অনুরোধ জানান তিনি।