নিজস্ব প্রতিবেদক:
নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআ’তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) আঞ্চলিক আমীর ও সেকেন্ড ইন কমান্ডসহ আটজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। রাজশাহী ও সিরাজগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রাজশাহী নগরীতে চারজনকে গ্রেফতারের পর তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অভিযান চালিয়ে আরও চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। র্যাব সদর দফতর ও রাজশাহী র্যাব-৫ যৌথভাবে অভিযান দুটি পরিচালনা করে।
রাজশাহীতে গ্রেফতার ব্যক্তিরা হল : জেএমবির রাজশাহী আঞ্চলিক আমীর নাটোরের বাগাতিপাড়ার জুয়েল আলী ওরফে হাবিবুল্লাহ ওরফে মাহমুদ (৩৩), খুলনার খালিশপুরের আশরাফুল ইসলাম (২৪), পাবনার সাঁথিয়ার আলিফ হোসেন (২০) ও সাতক্ষীরার নালতার জুয়েল শেখ (২২)। এরা রাজশাহীর শাহমখদুম থানার আলিফ লাম মিম ভাটার এলাকার একটি বাড়িতে বসবাস করছিল। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে র্যাবের অভিযানে তারা ধরা পড়ে। র্যাব-৫-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, র্যাব সদরের একটি টিম রাজশাহীতে অভিযান চালায়। গ্রেফতার হওয়া জেএমবির সদস্যরা ছদ্মবেশে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিল। কেউ ঝালমুড়ি বিক্রি করত আবার কেউ কেউ হকারি করত।
এদিকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার উকিলপুর এলাকার একটি বাড়িতে দীর্ঘ আট ঘণ্টা অভিযানের পর সেখানে অবস্থানকারী জেএমবির চার সদস্য র্যাব-১২-এর কাছে আত্মসমর্পণ করে। তারা হল : জেএমবির রাজশাহী অঞ্চলের সেকেন্ড ইন কমান্ড পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কিরণ ওরফে হামিম ওরফে শামিম (২২), একই এলাকার নাইমুল ইসলাম (২১), দিনাজপুরের কোতোয়ালি থানা এলাকার আতিউর রহমান (২২) এবং সাতক্ষীরার তালা উপজেলার আমিনুল ইসলাম ওরফে শান্ত (২৫)। এই চারজনই পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার আল হেরা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র।
শাহজাদপুরে অভিযান শেষে ব্রিফিংয়ে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার বলেন, রাজশাহীর শাহমখদুম থানা এলাকায় অভিযানে গ্রেফতার চারজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আরও কয়েকজন জঙ্গি অবস্থান করছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে শাহজাদপুরের উকিলপুর এলাকার বাড়িতে র্যাব ভোরে অভিযান শুরু করে। অভিযানের সময় জঙ্গিরা র্যাবকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। হতাহতের ঘটনা এড়াতে র্যাবের দলটি কৌশল পরিবর্তন করে বাড়িটি ঘিরে ফেলে। এরপর হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায়। এতে সাড়া না দিয়ে তারা বোমা মেরে এলাকা উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। ফলে র্যাব কৌশল পরিবর্তন করে। হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ র্যাবের একটি শক্তিশালী টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এ ছাড়া এলাকাবাসীকে সতর্ক অবস্থানে রাখে। পাশাপাশি বাড়িটির আশপাশের লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়। খবর পেয়ে সিরাজগঞ্জ ডিবি, সিআইডিসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিম ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। র্যাবের টিমটি সকাল ১০টার দিকে আবার অভিযান শুরু করে এবং জঙ্গি আস্তানায় ঢুকে পড়ে। একপর্যায়ে জঙ্গিরা আত্মসমর্পণে রাজি হয়। পরে র্যাবের দলটি কৌশলে তাদের পাকড়াও করে বাড়ির ভেতর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে।
তিনি বলেন, চার জঙ্গিকে ধরার পর বাড়িটিতে তল্লাশি করে জঙ্গিদের বেশ কিছু সাংগঠনিক বই, দুটি বিদেশি পিস্তল, বিপুল পরিমাণ গানপাউডার, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, রাসায়নিক বিস্ফোরকদ্রব্য ও দলের একটি পতাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার করে ৬টি শক্তিশালী তাজা বোমা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে এবং বাড়িটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। র্যাবের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, জঙ্গিরা ২৫ দিন আগে শাহজাদপুরের উকিলপাড়া এলাকার শামছুল হক রাজার বাড়িটি ভাড়া নেয়। তাবলিগ জামাতের কার্যক্রমের অজুহাতে তারা এ এলাকার নিরীহ ও সরল ছাত্রদের দলে ভিড়িয়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেয়ার চেষ্টা করছিল।
এদিকে জঙ্গি আস্তানার খবরে শাহজাদপুর পৌর এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাস্তাঘাটে লোক সমাগম কমে যায়। পরে উৎসুক শত শত লোক গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিদের দেখতে ভিড় জমায়। ভিড় সামলাতে শাহজাদপুর থানা পুলিশকে বেশ হিমশিম খেতে হয়।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, বেড়ার আল হেরা স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিষয়ে আগে থেকেই নানা গুঞ্জন শোনা গেলেও শাহজাদপুরে জঙ্গি তৎপরতা ছিল না। হঠাৎ করে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, গ্রেফতার আট জঙ্গিকে সিরাজগঞ্জ র্যাব-১২-এর কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।